• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

বইমেলায় কবিতার ধস


তাহনিয়া ইয়াসমিন
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২, ০৮:৪৮ পিএম
বইমেলায় কবিতার ধস
ছবি: সংবাদ প্রকাশ

বরাবরের মতো এবারও অমর একুশে বইমেলায় সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত বইয়ের তালিকায় রয়েছে কাব্যগ্রন্থ। অথচ সাহিত্য জগতের সমৃদ্ধ একটি সাহিত্যকর্ম হচ্ছে কবিতা। একইসঙ্গে পাঠক হৃদয়কে বিমোহিত করতে বরাবরই আবেদনের শীর্ষে থাকে কবিতা। কবিতার ছন্দে-ছন্দে মিশে থাকে মানুষের আবেগানুভূতি।

প্রণয় হোক বা প্রতিবাদ, এভাবেই কবিতার ভাষা বাঙালিকে প্রভাবিত করেছে তার আপন মহিমায়। তবে বর্তমানে কবিতার আবেদন কমে যাচ্ছে পাঠকের কাছে এমনই মনে করছেন বইমেলার কবি ও প্রকাশকরা।

রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, আজ (রোববার) পর্যন্ত মেলায় নতুন বই এসেছে ৮৯টি। আজকের দিন পর্যন্ত সর্বমোট বইয়ের সংখ্যা ৪৬৮টি। এর মধ্যে কবিতার বইয়ের সংখ্যা রয়েছে ১১৭টি। যা মোট প্রকাশিত বইয়ের চারভাগের এক ভাগের বেশি। এত সংখ্যক বই প্রকাশের পরও, বই বিক্রির সংখ্যা অনেক কম।

এবার মেলায় অংশ নিয়েছে বাংলানামা, জলধি, রোদেলা, অনিন্দ্য প্রকাশ, প্রথমা, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স, জার্নিম্যান বুকস, অন্বেষাসহ বেশ কয়েকটি প্রকাশনা।

এ বিষয়ে প্রকাশনাগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে উপন্যাসের বই। এর পাশাপাশি আছে সায়েন্স ফিকশন, থ্রিলার, অনুবাদ ও শিশুতোষ বই। তবে সবচেয়ে কম বিক্রি হচ্ছে কবিতার বই। প্রকাশিত এসব বইয়ের বেশির ভাগই লেখক তরুণ ও নবীন। ফলে দেখা যায়, নবীন কবিদের আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এসব বইয়ের প্রচার-প্রচারণা।

মেলায় কবিতার বইয়ের বিশাল সংখ্যা। এ নিয়ে পাঠকের কাছে অনাগ্রহের কারণ জানতে চাইলে ‘বাংলানামা’র প্রকাশক ও কবি কবীর আলমগীর বলেন, “কবিতা লেখার আগে কবিকে অনেক বেশি পড়তে হবে। লেখক পড়বে বেশি, লিখবে কম, এমনটাই আমরা জানি। কবিতা যারা লেখালেখি করেন তাদের একটা প্রস্তুতি থাকা দরকার। সেই প্রস্তুতি না থাকলে আসলে হতাশার জায়গা তৈরি হয় পাঠকদের কাছে। এখনকার লেখকদের মধ্যে বই প্রকাশের একটা তাড়া থাকে সবসময়। আমার মনে হয় উন্নতমানের কবিতার জন্য প্রস্তুতির বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে তরুণ-নবীন কবিদের।”

‘জলধি’র প্রকাশক ও কবি নাহিদা আশরাফী বইমেলায় কবি ও কবিতার বই নিয়ে তার অনুভূতির কথা প্রকাশ করেন সংবাদ প্রকাশের কাছে। তিনি বলেন, “ইদানিং কবিতায় বহুমাত্রিক বিষয় যেমন আসছে তেমনি এক ধরনের দুর্বোধ্যতা চলে এসেছে। এখনকার কবিতা পাঠককে সেভাবে স্পর্শ করতে পারছে না। যার কারণেই আমরা জসিমউদদীন, সুকান্ত, নজরুল, রবীন্দ্রনাথের মধ্যেই এখনও পড়ে আছি। বর্তমানে কবিরা জনপ্রিয় হচ্ছেন অনেকে। কিন্তু পাঠকের মনোপ্রিয় হতে পারছেন না। কবিতা যদি মনকে স্পর্শ করতে না পারে সেই কবিতা কখনও পাঠকের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে না।”

এ প্রসঙ্গে কবি মঈন মুনতাসীর বলেন, “এবার বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে তার ‘গোলাপি গজল’ কবিতার বইটি। কবিতা তার প্রচন্ড ভালোবাসার একটি জায়গা।”

কবি মঈন মুনতাসী আরও বলেন, “আশির দশকের দিকে কবিতার সুবর্ণ সময় ছিল। তখন উৎসব করে কবিতার বই কিনেছে মানুষ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কবিতার বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমতে শুরু করেছে। পাঠক এখন গল্প-উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন।”

আগ্রহ কমার পেছনে কারণ জানতে চাইলে এই কবি বলেন, “কবিতা একটি রহস্যময় জায়গা। কবিতার রস আস্বাদন করতে হলে পাঠকেও ভাবুক হতে হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে আসলে সেই পাঠকের সংখ্যাও কম। কবিতার রহস্যময় জায়গা তারা খুঁজতে চান না। তারা এখন সহজে সবকিছু পেতে চান।”

এবার মেলায় প্রকাশ পেয়েছে কবি এমরান হাসানের কবিতা। এই তরুণ কবি বলেন, “কবিতার বই কম বিক্রির প্রধান কারণ পাঠক বিমুখতা। পশ্চিমা সাহিত্যের প্রভাব ও অনুবাদ সাহিত্য এখন পাঠক বেশি পছন্দ করে। আবার পাঠকের পাঠন প্রক্রিয়া এখন অন্যদিকে চলে গেছে। খুব সহজ লেখা তারা এখন দ্রুত গ্রহণ করে। পাঠকের পঠনের গভীরতা একেবারেই নেই।”

পেশার একজন ব্যাংকার হলেও কবিতার প্রতি বিশেষ ঝোঁক আছে মাসুদ রানার। সুযোগ পেলেই তিনি বসে যান কবিতার বই নিয়ে। তার পছন্দের কবি জীবনানন্দ দাশ, সৈয়দ শাসসুল হক, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ আরও অনেকে। তবে তরুণ কবির কবিতা ওভাবে পড়া হয় না মাসুদ রানার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ভালো লাগা থেকেই বই কিনতে এসেছি। তবে মনের মতো কোনো তরুণ কবির বই এখনও পাইনি। তাছাড়া আমার মনে হয় তরুণ বা নবীন যারা আসেন, তাদের অনেকের লেখা আমাকে স্পর্শ করতে পারে না। এজন্যই মূলত বই কিনতে পারছি না।”

অন্যদিকে এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি স্টল এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি বইয়ের স্টল বরাদ্দ পেয়েছে। যা গত বছর বইয়ের স্টল সংখ্যা ছিল ৮৩৪টি। কিন্তু এবার বেড়েছে প্যাভিলিয়নের সংখ্যা।

এর আগে গত বছর প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৩৩টি। যা এবার ৩৫টি করা হয়েছে।

এছাড়া বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করছে।

Link copied!