মায়ের মুখের বুলিই হচ্ছে শিশুদের মাতৃভাষা। এটা হয়তো সাধারণ কথা। আবার অন্যভাবে বলতে গেলে, যে দেশে শিশু জন্মগ্রহণ করে, যে দেশের ভাষা পরিমণ্ডলে সে বড় হয়ে ওঠে সেই দেশের ভাষাই তার মাতৃভাষা। জন্ম থেকেই শিশু সেটা লাভ করে। তারপর সে যত বড় হতে থাকে ততই এই ভাষার কাছে তার পরিচয় গভীর হয়ে ওঠে।
ভাষাগত পরিবেশের মধ্যে একটি শিশুর জন্ম, দৈহিক ও মানসিক দিক বিকশিত হয়। আর যে নিজের ভাষায় ভাব প্রকাশ করতে পারে না তার স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়। সে তখন পুরোপুরি মানুষ হয়ে উঠতে পারে না। তাই শিশুর মানসিক বিকাশে মাতৃভাষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- শিশুর সমাজ বন্ধনের প্রথম ও প্রধান যোগসূত্রটি হচ্ছে মাতৃভাষা। এ ভাষা তার সামাজিক
ও মানসিক সম্পর্ককে সহজ, সুন্দর ও দৃঢ় করে। ভাষাই তার অস্তিত্বের অপরিহার্য অংশ এবং সামাজিক জীবনের ভিত্তি। - শিশুর নিজেকে প্রকাশ করার উত্তম মাধ্যমটি হচ্ছে ভাষা তথা মাতৃভাষা। মনের যা কিছু
ভাব-ভাবনা, আশা-আকাঙ্খা মাতৃভাষার মাধ্যমেই প্রকাশ করা সম্ভব, অন্য ভাষায় নয়। - মাতৃভাষায় দক্ষতা অর্জন শিশুকে জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
- মাতৃভাষা আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভাষা। জন্মসূত্রেই একে আমরা লাভ করেছি।
মায়ের মুখ থেকে শেখা বুলি আমাদের কাছে ভালোবাসা ও গৌরবের। এ ভাষা
শিশুর বিকাশকে সহায়তা দান করে। - শিশুর সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা প্রকাশের ভাষা মাতৃভাষা। ভাষার মাধ্যমে তার সূক্ষ্ম
অনুভূতিগুলো বিচিত্ররূপে বিকশিত হয়। তার এ বিচিত্ররূপ আমরা খুঁজে পাই শিশুর কথায়,
কবিতা বলার ছন্দে, গানের সুরে ও আবেগের প্রকাশে। - প্রত্যেক শিশুর মধ্যে একটি সৃষ্টিশীল সত্তা আছে। এই সত্তার বিকাশের জন্য মাতৃভাষা
একটি শক্তিশালী বাহন। শিশু যদি ভাষা দক্ষতার মৌলিক দিকগুলো নিপুনভাবে অর্জন করতে পারে, তবে সে তার সহজাত শৈল্পিক অনুভূতিকে সহজেই বিকশিত করতে পারবে। - মাতৃভাষার মাধ্যমে শিশু সামাজিক দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে। উদারতা, দয়া,
সহনশীলতা এসব মানবিক গুণাবলি তার মধ্যে প্রকাশ পায়। মাতৃভাষার জন্য এদেশের
তরুণরা আত্মদানে কুণ্ঠিত হয়নি। ‘মাতৃভাষা’ ফেব্রুয়ারির ‘একুশে’ সেই মহান স্মৃতিকেই বহন করছে।