বিশ্বাস মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি। পরিবার, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, ব্যবসা—সব ক্ষেত্রেই বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ সত্যের আরেকটি দিক হলো অন্ধভাবে, যাচাই-বাছাই না করে যেকোনো মানুষকে বিশ্বাস করা। যা বিপজ্জনক হতে পারে। মানুষের ভিন্ন মনোভাব এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে অকারণে কাউকে বিশ্বাস করার আগে অবশ্যই ভেবে নেওয়া দরকার।
কারো সঙ্গে পরিচিত হলে দ্রুতই ঘনিষ্ঠতা তৈরি করতে চাই। ভালো আচরণে সহজেই আকৃষ্ট হই। কিন্তু সমস্যা হয় তখন, যখন মানুষ তার বাহ্যিক ব্যবহারের আড়ালে ভিন্ন উদ্দেশ্য লুকিয়ে রাখে। কেউ কেউ স্বার্থসিদ্ধির জন্য বন্ধুত্ব বা সখ্যতার মুখোশ পরে ঘনিষ্ঠ হয়। তাই মানুষকে চেনা না গেলে, তার চরিত্র ও উদ্দেশ্য বোঝা না গেলে তাকে বিশ্বাস করাটা বোকামি।
বিশ্বাসভঙ্গের অনেক উদাহরণ পাওয়া যায় বিভিন্ন খবরে। পত্রিকা খুললেই দেখা যায় প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা, বন্ধু বা আত্মীয়ের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার গল্প। অনেকে ব্যবসার পার্টনার হিসেবে নিকটজনকে বেছে নেন। পরে তার কষ্টের টাকায় ভাগ বসান। কেউ প্রেমে বিশ্বাস করে মন দেন। পরে প্রতারণার শিকার হন।
বিশ্বাসভঙ্গ শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, এটি মানসিকভাবে মানুষকে ভেঙে দেয়, আত্মবিশ্বাস হারায়, মানুষের প্রতি আস্থা কমায়। মানুষ তার সত্যিকারের রূপ সব সময় দেখায় না। অনেকেই বাহ্যিকভাবে ভদ্র, বিনয়ী ও বিশ্বাসযোগ্য দেখালেও অন্তরে অন্যরকম হতে পারে। সময়ের সঙ্গে মানুষের প্রকৃত রূপ ধরা পড়ে। তাই যাচাই না করে কাউকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা নিজের জন্য বিপদ হতে পারে।
এ কথাও ঠিক যে, সবাই হয়তো খারাপ নয়। কিন্তু সবার মধ্যেই ভুল করার প্রবণতা আছে। তাই বিশ্বাস করলেও সেটা হতে হবে সীমার মধ্যে। কেউ নতুন পরিচিত হলে তার সঙ্গে গোপন তথ্য, অর্থনৈতিক লেনদেন বা অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা তৈরিতে সতর্ক থাকতে হবে।
মনে রাখবেন, মানুষ পরিবর্তনশীল। যাকে আপন মনে হচ্ছে, কাল সে অন্যরকম আচরণ করতে পারে। অনেকেই নিজের স্বার্থ রক্ষায় সম্পর্কের ভান করে। আবার বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রযুক্তির যুগে পরিচয় গোপন রেখে বিশ্বাস অর্জনের নামে প্রতারণাও বেড়েছে। তাই কারও কথায় দ্রুত প্রভাবিত না হয়ে কাজ ও ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। নিজের গোপন তথ্য, দুর্বলতা ইত্যাদি সম্পর্কে খোলামেলা না হওয়াই ভালো।
বিশ্বাস একটি মূল্যবান জিনিস। যেকোনো মানুষকে বিশ্বাস করার আগে ভাবুন, বুঝুন, সময় নিন।যেকোনো মানুষকে বিশ্বাস করার আগে নিজের সচেতনতা হোক প্রথম সুরক্ষা।