বিয়ে মানেই দুটি ভিন্ন পরিবারের মধ্যে নতুন সম্পর্ক স্থাপন। এই সম্পর্ক গড়ে উঠতে সময় লাগে। অনেক সময় সম্পর্কে দেখা দেয় টানাপোড়েনও। বহু সংসারের পরিচিত চিত্র মা ও পুত্রবধূর মধ্যকার মতবিরোধ বা দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব তীব্র মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে ছেলের জন্য। একদিকে মায়ের আবেগ, ভালোবাসা ও দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, অন্যদিকে স্ত্রীকে নিয়ে শুরু হওয়া নতুন জীবন—এই দুইয়ের মাঝে পড়ে অনেক পুরুষ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই এই পরিস্থিতিতে নিজেকে কীভাবে সামলে চলবেন, তার কিছু কৌশল জেনে রাখুন।
পক্ষপাত নয়, ভারসাম্য বজায় রাখুন
সবচেয়ে বড় ভুল হয় যখন ছেলে পক্ষ নেয়। কখনো স্ত্রীর, কখনো মায়ের। পক্ষ নেওয়া মানেই অন্যজনের মনে অবহেলার বোধ তৈরি হওয়া। এতে একদিকে যেমন সম্পর্ক খারাপ হয়, অন্যদিকে পারিবারিক শান্তিও নষ্ট হয়। একজন পরিণত স্বামীর ভূমিকা হচ্ছে—দুইজনকেই বোঝা এবং কারো প্রতি অবিচার না করা। আপনার কাজ হলো ভারসাম্য বজায় রাখা, পক্ষপাত নয়।
নিজের অনুভূতি খোলাখুলি জানান
আপনার মা এবং স্ত্রী দুজনের কাছেই নিজের আবেগ ও ভালোবাসা প্রকাশ করুন। মাকে জানান যে তিনি আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আবার স্ত্রীকেও বুঝিয়ে দিন তিনি আপনার জীবনের সঙ্গী। অনেক সময় পরিবারে ভুল বোঝাবুঝি হয়। কারণ কেউ মনে করে আপনি তাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন। এই ভাবনা দূর করতে খোলামেলা যোগাযোগ খুব প্রয়োজন।
দু’পক্ষের কথা শুনুন
মা কিংবা স্ত্রী যদি কোনো অভিযোগ বা দুঃখের কথা বলতে চান, তা গুরুত্ব দিয়ে শুনুন। দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো বা রেগে যাবেন না। বরং মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন, কেন তারা এমন অনুভব করছেন। প্রতিটি সমস্যার পেছনে একটি আবেগ থাকে, সেটি অনুধাবন করতে পারলে সমাধান সহজ হবে।
ব্যক্তিগত সম্পর্ক ব্যক্তিগত রাখুন
মা-স্ত্রীর দ্বন্দ্বে অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত কথাও পরিবারে জানাজানি হয়ে যায়। এতে সমস্যার সমাধান তো হয় না, বরং আরও বেড়ে যায়। স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে আলাদাভাবে আলাপ করুন। কিন্তু এক পক্ষের কথা অন্য পক্ষের কাছে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা থেকে বিরত থাকুন।
পরস্পরের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝাতে সাহায্য করুন
একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আপনার কাজ হলো, এক পক্ষের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অন্য পক্ষকে বোঝাতে সহায়তা করা। যেমন: মা কেন কিছু বলছেন বা স্ত্রী কেন এমন আচরণ করছেন, তা যদি আপনি পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করেন, অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি কমে আসে।
সময় ভাগ করুন
অনেক মা মনে করেন, ছেলেটি বিয়ের পর বদলে গেছে, আগের মতো সময় দেয় না। আবার স্ত্রীও চান স্বামী যেন তার সঙ্গে মানসিক ও শারীরিকভাবে জড়িয়ে থাকেন। দুই পক্ষেরই চাহিদা বৈধ। তাই সময়কে সুন্দরভাবে ভাগ করে নিন। মায়ের সঙ্গে সময় কাটান, কথা বলুন। আবার স্ত্রীর সঙ্গেও মানসিক সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এতে কেউই অবহেলিত বোধ করবেন না।
নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন
এই ধরনের পারিবারিক দ্বন্দ্বে অনেকে নিজেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, রেগে যান বা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এটা থেকে বাঁচতে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখুন। নিজের সময় দিন, প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সাহায্য নিন। মনে রাখবেন, আপনি যদি ভেঙে পড়েন, তাহলে পুরো পরিবার নষ্ট হবে।
দাম্পত্য সম্পর্ক শক্ত করুন
স্ত্রীর সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক গড়ে তুলুন। আপনি যদি স্ত্রীকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেন, তাহলে তিনি আপনার মাকে সম্মান করতে অনুপ্রাণিত হবেন। পরিবারে শান্তি বজায় রাখার জন্য স্বামী-স্ত্রীর একাত্মতা ও বোঝাপড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পারিবারিক কাউন্সেলিং করুন
যদি পরিস্থিতি খুব জটিল হয়ে যায়, তাহলে পারিবারিক কাউন্সেলিং একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। একজন পেশাদার থেরাপিস্ট দুই পক্ষকে বুঝে নেওয়ার এবং গঠনমূলক সমাধান খুঁজে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারেন।
মা-বৌয়ের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়, কিন্তু এটি সঠিকভাবে পরিচালনা না করলে একটি পরিবারে স্থায়ী সংকট তৈরি হতে পারে। একজন সচেতন, ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিশীল ছেলে-স্বামীই পারে দুই প্রিয় মানুষকে একসূত্রে গাঁথতে।