গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তির শিকার হন। যদিও এসি বা এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করে ঘর ঠান্ডা রাখা যায়, তবে সব জায়গায় বা সবার পক্ষে এসি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। একদিকে এর ব্যয়বহুলতা, অন্যদিকে বিদ্যুৎ খরচ অনেকের কাছেই এটি টেকসই সমাধান নয়। তাই এসি ছাড়াও ঘরকে ঠান্ডা রাখার কিছু সহজ, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব উপায় জেনে রাখুন।
সঠিকভাবে পর্দা ব্যবহার
সূর্যের আলো ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেই ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাই দিনের সবচেয়ে গরম সময়, বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জানালার পর্দা টেনে রাখা উচিত। হালকা রঙের ঘন কাপড়ের পর্দা সূর্যের তাপ প্রতিহত করতে সাহায্য করে। কিছু ক্ষেত্রে রিফ্লেকটিভ বা হিট ব্লকার পর্দা ব্যবহার করাও কার্যকর হতে পারে।
জানালা-দরজার সঠিক ব্যবহার
রাতে বাইরের তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম থাকে। তখন জানালা খুলে ঘরে ঠান্ডা বাতাস ঢোকানো উচিত। আবার সকালে যখন সূর্যের তাপ বাড়তে শুরু করে, তখন জানালা ও দরজা বন্ধ রাখলে বাইরের গরম বাতাস ঘরে ঢুকতে পারে না। এর ফলে ঘর অনেকটা সময় ঠান্ডা থাকে।
প্রাকৃতিক বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করা
বাতাস চলাচলের সহজ ব্যবস্থা থাকলে ঘরে তাপ জমে থাকতে পারে না। জানালা ও দরজার এমন অবস্থানে রাখা উচিত যাতে এক পাশ দিয়ে হাওয়া ঢুকে আর অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। এছাড়া ছাদে বা জানালায় ছোট এক্সহস্ট ফ্যান বসালে গরম বাতাস দ্রুত বের হয়ে যায়।
ছাদে বা দেয়ালে সবুজায়ন
ছাদে গাছ লাগানো, ছাদ বাগান তৈরি করা বা দেয়ালে লতা জাতীয় গাছের ব্যবস্থা করা ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে খুব কার্যকর। গাছপালা সূর্যরশ্মি শোষণ করে এবং তাদের ঘাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবেশ ঠান্ডা রাখে। বিশেষ করে ফ্ল্যাট বা টিনশেড বাড়ির ক্ষেত্রে ছাদে গাছ লাগানো খুবই কার্যকর পদ্ধতি।
আধুনিক নির্মাণ উপাদান ব্যবহার
নতুন বাড়ি নির্মাণের সময় তাপ প্রতিরোধক নির্মাণ সামগ্রী যেমন হিট-রেজিস্টেন্ট রঙ, ইনসুলেটেড ছাদ ও দেয়াল ইত্যাদি ব্যবহার করলে ঘর অনেকটাই ঠান্ডা রাখা যায়। পুরাতন ঘরের ক্ষেত্রে ছাদের উপর হিট রিফ্লেক্টিং পেইন্ট বা সাদা রঙ ব্যবহার করা যেতে পারে যা সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে।
ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার
ফ্যান, লাইট, ফ্রিজ, টিভি বা কম্পিউটারের মত ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি তাপ উৎপন্ন করে। তাই অপ্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখা উচিৎ, বিশেষ করে দুপুরে। LED বা CFL বাতি ব্যবহার করলে তা কম তাপ উৎপন্ন করে।
৭. ঠান্ডা রঙের ব্যবহার
ঘরের দেয়ালে হালকা ও ঠান্ডা রঙ যেমন হালকা নীল, সবুজ বা সাদা রঙ ব্যবহার করলে ঠান্ডা অনুভব হয়। গাঢ় রঙ গরম শোষণ করে বলে তাপ বাড়িয়ে তোলে। তাই ভিজ্যুয়াল কুলিং ইফেক্টও গুরুত্বপূর্ণ।
ঠান্ডা জলীয় উপাদান ব্যবহার
মাটির কলসিতে পানি রেখে ঘরে ঠান্ডা পরিবেশ তৈরি করা যেতে পারে। এমনকি মেঝেতে হালকা পানি ছিটিয়ে দিলে বা পানি দিয়ে মুছে রাখলে কিছুটা ঠান্ডা ভাব পাওয়া যায়। এছাড়া হালকা ভেজা পর্দা বা তোয়ালে জানালায় টাঙিয়ে দিলে বাতাস ঠান্ডা হয়ে ঘরে ঢোকে।
বাঁশের পর্দা বা ছাউনি ব্যবহার
বাঁশ বা খড়ের তৈরি পর্দা জানালায় টানিয়ে দিলে তা সূর্যের তাপ সরাসরি ঘরে ঢুকতে বাধা দেয় এবং হাওয়াও চলাচল করতে পারে। এতে ঘরের ভেতরে প্রাকৃতিকভাবে শীতল পরিবেশ তৈরি হয়।
ঠান্ডা খাদ্যাভ্যাস ও পোশাক নির্বাচন
গরমে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। পানি, ফলমূল ও ঠান্ডা পানীয় গ্রহণ করলে শরীর ঠান্ডা থাকে। হালকা রঙের সুতি পোশাক পরিধান করলে তাপ শোষণ কম হয় এবং আরামদায়ক অনুভূতি দেয়।
এসি ছাড়াও ঘর ঠান্ডা রাখার অনেক কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব উপায় রয়েছে। একটু সচেতনতা, পরিকল্পনা এবং প্রাকৃতিক উপাদানের সঠিক ব্যবহার আমাদের জীবনযাত্রাকে আরও আরামদায়ক করে তুলতে পারে।