• ঢাকা
  • রবিবার, ১২ মে, ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ৪ জ্বিলকদ ১৪৪৫

নিয়ানডার্থালদের যে খাবার ৯০ হাজার বছর ধরে জনপ্রিয়


কর্ডেলিয়া বিশ্বাস
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩, ০৬:৪০ পিএম
নিয়ানডার্থালদের যে খাবার ৯০ হাজার বছর ধরে জনপ্রিয়

আজ থেকে ৯০ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে বিচরণ করত নিয়ানডার্থালরা। অন্তত ৪০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায় তারা। এই প্রজাতির মানুষের বিলুপ্তি নিয়ে আছে নানা মত। তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের ধারনা, আজ থেকে ৭০ হাজার বছর আগে আধুনিক মানুষ ও নিয়ানডার্থালরা একই সঙ্গে পৃথিবী নামক এই গ্রহে বিচরণ করেছিল।

বিজ্ঞানীদের ধারনা, অত্যন্ত বুদ্ধিমান আধুনিক মানুষের সঙ্গে বুদ্ধি ও শক্তিতে পেরে ওঠেনি নিয়ানডার্থালরা। দুই প্রজাতির মধ্যে জিনের মিলনও ঘটেছিল। সব মিলিয়ে আধুনিক মানুষের দৌরাত্ম্যে পৃথিবী থেকে চিরকালের মতো বিদায় নিতে হয়েছে মানুষের এ প্রজাতিকে। তবে বিলুপ্ত হলেও নানাভাবে নিজেদের স্মৃতিচিহ্ন রেখে গেছে তারা। যার অন্যতম হচ্ছে ফসিল।

ফসিল আবিস্কারের মধ্য দিয়ে নিয়ানডার্থাল সম্পর্কে জানা যাচ্ছে বিচিত্রসব তথ্য। সম্প্রতি এক গবেষণায় তাদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে জানা গেছে নতুন সব তথ্য। যার মধ্যে রয়েছে, নিয়ানডার্থালরা বিশালাকায় ম্যামথ শিকার করত নিয়মিতই। একটি ম্যামথ শিকার করলে অনায়াসে ১০০ জনের একমাসের ভূরিভোজের বন্দোবস্ত হয়ে যেতো।

আরেক গবেষণায় উঠে এসেছে আরও চমকপ্রদ তথ্য। সেখানে নিয়ানডার্থালদের এমন এক খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জানা গেছে, যা আজও আধুনিক মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়।

সম্প্রতি একদল প্রত্নতাত্ত্বিক পর্তুগালের লিসবন থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণে গ্রুটা দ্য ফিগুইরা ব্রাভাতে খনন কাজ চালায়। সেখানে তারা বাদামী কাঁকড়ার খোসা, ঝিনুকের অবশিষ্টাংশ খুঁজে পেয়েছেন। এই আবিস্কার গবেষকদের নতুন করে নিয়ানডার্থালদের খাদ্যাভাসের ধারনা দিয়েছে। তারা বলছেন, নিয়ানডার্থালরা সমুদ্র থেকে বাদামী কাঁকড়া শিকার করতেন এবং তা পুড়িয়ে (বর্তমানে যেমন বারবিকিউ করা হয়) খেতেন।

গবেষণা বলছে, নিয়ানডার্থালরা সাধারণত বড় এবং পূর্ণবয়স্ক বাদামী কাঁকড়া শিকার করতেন। তারা সাধারণত ৬.৩ ইঞ্চি লম্বা কাঁকড়া শিকার করতেন। যার একটি থেকে মোটামুটি ২০০ গ্রাম মাংস পাওয়া যেতো।

গবেষকরা আরও নিশ্চিত হয়েছেন, খনন করা স্থানে কাঁকড়া ও ঝিনুকের যে খোসা তারা পেয়েছেন, তা পাখি বা ইঁদুরের শিকার করা নয়। খোসাগুলি এমনভাবে ভাঙা হয়েছে, যা বর্তমানে মানুষের ভাঙার পদ্ধতির সঙ্গে যথেষ্ট মিল রয়েছে। যদিও নিয়ানডার্থালরা খোসা ভাঙার জন্য ধাতব হাতুড়ি এবং কাটার ব্যবহার করতেন না। তারা পাথরের তৈরি কোনো টুল ব্যবহার করতেন। বাদামী প্রজাতির এই কাঁকড়া আজও পর্তুগাল, স্পেন, ইতালি ও ফ্রান্সের জনপ্রিয় সি-ফুড।

এ ধরনের সুস্বাদু খাবারের আয়োজন এটা নির্দেশ করে যে, এটা কোনো উৎসবের সময় খাওয়া হতো। যা সেই সময়ে সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে জড়িত ছিল।

গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করে ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন অ্যানভায়রনমেন্টাল আর্কিওলজি’ জার্নাল বলছে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কার। কারণ, এটা এমন ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে যে—দীর্ঘ সময় ধরে সি-ফুড খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি হয়, যেটা আমাদের মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা এমন এক অনন্য বৈশিষ্ট্য (ইউনিক ফ্যাক্টর) যা অন্য প্রজাতি থেকে আমাদের অধিক বুদ্ধিমান বানিয়েছে, যেমন বিলুপ্ত নিয়ানডার্থালদের থেকে।

সূত্র : সিএনএন।

Link copied!