• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ধর্ষণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনছে জাপান


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৩, ০৫:৫৭ পিএম
ধর্ষণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনছে জাপান

জাপানে ধর্ষণের শিকার হয়েও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না অধিকাংশ ভুক্তভোগী। এমনকি দেশটিতে ধর্ষণ হিসেবে স্বীকৃত মামলার মাত্র এক–তৃতীয়াংশের বিচার হয়। যা সাধারণ ফৌজদারি মামলার বিচারের হারের তুলনায় কিছুটা কম।

কেননা আইনে ধর্ষণের যে সংজ্ঞা রয়েছে সে কারণে বেশিরভাগ অভিযুক্ত ব্যক্তি মুক্তি পেয়ে যায়। এ কারণে দেশটির সাধারণ জনগণ এ পরিস্থিতির পরিবর্তনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।

সম্প্রতি দেশটির সংসদে ঐতিহাসিক এক বিল নিয়ে আলোচনা চলছে। যেখানে যৌন হামলার বিষয়ে বিদ্যমান আইন সংস্কারের বিষয়ে বিতর্ক হচ্ছে। এসব আইন গত এক শতাব্দীর ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।

এই বিলে বেশ কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ যে পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে তা হলো- ধর্ষণের সংজ্ঞা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানের বর্তমান আইনে, যে যৌন মিলন ‘জোরপূর্বক’ এবং ‘আক্রমণ অথবা ভয়-ভীতি প্রদর্শন’ অথবা একজন ব্যক্তির ‘অচেতন অবস্থা অথবা প্রতিরোধের অক্ষমতার’ সুযোগ নিয়ে করা হয় তাকে ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যান্য অনেক দেশের আইনের সঙ্গে এখানেই জাপানি আইনের তফাৎ। অনেক দেশের আইনে সম্মতি ছাড়া যৌন মিলন অথবা যৌন সম্পর্ককে আরও বিস্তৃতভাবে ধর্ষণ হিসেবে ধরা হয়।

ধর্ষণের নতুন সংজ্ঞায় ‘জোরপূর্বক যৌন মিলন’ কথাটির জায়গায় ‘সম্মতি-বিহীন যৌন মিলন’ কথাটি বসানোর ব্যাপারে আইন-প্রণেতারা আলোচনা করছেন। ধর্ষণের সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণের অংশ হিসেবে নতুন আইনে স্পষ্টভাবে আটটি পরিস্থিতি নির্ধারণ করা হবে। এর মধ্যে সম্মতি দেওয়ার সক্ষমতার বয়স ১৩ থেকে বাড়িয়ে ১৬ নির্ধারণ করা হবে।

দেশটির মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, জাপানে ধর্ষণের সংকীর্ণ এই সংজ্ঞা ন্যায়বিচারের জন্য একটি বড় বাধা। এ কারণেই ধর্ষণের শিকার নারীরা অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকেন।

যৌন হামলার শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি গ্রুপ স্প্রিং-এর একজন মুখপাত্র ইও তাদোকোরো বলেন, “একেক বিচার প্রক্রিয়া ও সিদ্ধান্ত একেক রকমের হয়ে থাকে- কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্মতি ছাড়া যৌন মিলন করার বিষয়টি প্রমাণ করা গেলেও বিবাদীকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না কারণ সেখানে ‘আক্রমণ অথবা ভয়-ভীতি প্রদর্শনের’ তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরা সম্ভব হয় না।”

আর একারণেই ধর্ষণের শিকার অধিকাংশ ভুক্তভোগী ঘটনাটি রিপোর্ট করতে পুলিশের কাছে যান না। সম্প্রতি দেশটিতে এরকম এক ঘটনা ঘটেছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের পরও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাননি। তবে ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়ন কাউন্সেলিং সেন্টারে গিয়েছিলেন। ওই সেন্টার তদন্ত শুরু করে রায় দেয়, এটা ধর্ষণ।

এ বিষয়ে জানতে কাউন্সেলিং সেন্টারে বিবিসি যোগাযোগ করেছে। তবে গোপনীয়তার কথা উল্লেখ করে মামলার বিষয়ে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায় সেন্টার।

টোকিওভিত্তিক হিউম্যান রাইটস নাউ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজুকো ইতো বলেন, ‘আইনের পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা আশা করছি, সম্মতি কী? অসম্মতির অর্থ কী?—এসব নিয়ে এখন জাপানের জনগণ আলোচনা শুরু করবে।’

তবে জাপানের পার্লামেন্টকে ২১ জুনের মধ্যে নতুন আইন পাস করতে হবে। এ মুহূর্তে পার্লামেন্ট অভিবাসন নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আইন পাস না হলে যৌন নিপীড়ন আইনের সংস্কার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে।

Link copied!