• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

দ্বিতীয় দফার ভোটে পারবেন তো এরদোয়ান


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৩, ১১:৫১ এএম
দ্বিতীয় দফার ভোটে পারবেন তো এরদোয়ান

তুরস্কের আধুনিক ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কেননা এ নির্বাচনেই সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। কারণ, তার বিরুদ্ধে বিগত দিনে নির্বাচন করা সব বিরোধী দল একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছিল। আর তাইতো বিশ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের ভবিষ্যৎ ঝুলে গিয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট বা রান-অফে।

দেশটির নির্বাচনের বিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হতে হলে এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়া লাগবে। এরদোয়ান পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ ভোট। ফলে দেশটিতে আগামী ২৮ মে অনুষ্ঠিত হবে রান-অফ নির্বাচন। এতে থাকবেন শুধুমাত্র এরদোয়ান ও কেমাল। রান-অফ নির্বাচনে যিনি বেশি ভোট পাবেন তিনি আগামী ৫ বছর দেশ শাসন করবেন।

এরদোয়ান ও কেমালের কেউই এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ার কারণ হলেন নির্বাচনের তৃতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী সিনান ওগান। কারণ তাকে দেশটির ৫ শতাংশেরও বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন।

সিনান ওগান দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এমন অবস্থায় রান-অফ নির্বাচনে ট্রাম্প কার্ড হয়ে উঠতে পারেন তিনি ও তার সমর্থকরা। কারণ তাকে যারা ভোট দিয়েছেন এখন সেসব ভোটারদের ভোটই নির্ধারণ করে দিতে পারে কে হবেন প্রেসিডেন্ট।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আল-জাজিরা  এসব তথ্য জানিয়েছে।

সিনান ওগান বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি আগামী কিছুদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন। “আমি আমার জোটের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করবো, আমি আমার ভোটারদের সঙ্গে আসছে দিনগুলোতে আলোচনা করবো। তারপরেই আমরা একটি সিদ্ধান্ত নেবো এবং সে অনুযায়ী পরবর্তীতে আমাদের দায়িত্ব পালন করবো।

তুরস্কের বর্তমানে মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া। সরকারি হিসেবেই মূল্যস্ফীতির হার ৪৪ শতাংশ। কিন্তু অনেক মানুষের ধারণা এটি আসলে অনেক বেশি হবে। অন্যদিকে তুরস্কের ১১ টি প্রদেশ সম্প্রতি দুই দফা ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে। এই ভূমিকম্পে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান অর্থনীতির প্রথাগত নিয়ম ভেঙ্গে যেভাবে সুদের হার কমিয়েছেন, তার ফলে তুরস্কে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। অথচ ঐ একই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে সুদের হার বাড়ানো হচ্ছিল।

এসব কারণ নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। যা এরদোয়ানের ভোট কমিয়েছে।

আঙ্কারায় নিজের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এরদোয়ান বলেছেন যে, দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে, তিনি জয় পাবেন।

দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার শপথ নিয়েছেন কেমালও। তিনি বলেছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী, মানুষের আস্থা ভোট অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন।

কেমালকে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সমর্থন দিয়েছিল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এইচডিপি)। এই দলটিকে কুর্দিদের দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সহচর হিসেবে ধরা হয় এইচডিপিকে। তুরস্কের বিরুদ্ধে গত ৩৯ বছর ধরে সশস্ত্র আন্দোলন করে আসছে পিকেকে। এই আন্দোলনে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। তুরস্ক, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবাই পিকেকে জঙ্গি দল হিসেবেই দেখে।

অপরদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একে পার্টি) কুর্দি ইসলামিক দল হুদা-পারের সমর্থন পেয়েছে। একে পার্টির ব্যানারে এবার হুদা-পারের তিনজন রাজনীতিবিদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

হুদা-পারের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে সম্পর্ক রয়েছে কুর্দি দল হিজবুল্লাহর। যেটি ১৯৯০ সালের দিকে পিকেকে ও তার্কিস পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালাত। (তুরস্কের হিজবুল্লাহর সঙ্গে লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর কোনো সম্পর্ক নেই)।

ইস্তাম্বুলের সাবাঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক বের্ক এসেন বলেছেন, “জাতীয়তাবাদী দল আইই পার্টির কেমালের একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই দূরত্বের কারণে জাতীয়তাবাদী তার্কিসরা কেমালকে ভোট দেননি। কিছু তার্কিস বিশেষভাবে এরদোয়ানকে পছন্দ করেন না, অপরদিকে তারা আবার কুর্দি বিরোধী। এরদোয়ানকে পছন্দ না করলেও তারা কেমালকে ভোট দেননি কারণ তার সঙ্গে কুর্দিদের সখ্যতা রয়েছে।”

বিশ্লেষকদের ধারণা, এরদোগান এ রাউন্ডে ফেভারিট থাকবেন এবং তার বিজয়ের সম্ভাবনাও খুব বেশি।

Link copied!