• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২, ১৫ জ্বিলকদ, ১৪৪৪

শিশুরা বিছানায় প্রস্রাব করে কেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৩, ১১:৩৮ এএম
শিশুরা বিছানায় প্রস্রাব করে কেন

ঘুমের মধ্যে বিছানায় বাচ্চার প্রস্রাব করা তথা বেডওয়েটিং নিরাময় যোগ্য একটি রোগ। তিন বছর বয়সের পর কোনো শিশুরই বিছানায় প্রস্রাব করার কথা নয়। তবে ছেলেশিশুর ক্ষেত্রে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত বিষয়টি মেনে নেওয়া যেতে পারে। মেয়েশিশুদের অবশ্য তিন বছর বয়সেই বিছানায় প্রস্রাব বন্ধ হওয়ার কথা। নির্ধারিত বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পরও শিশু বিছানায় প্রস্রাব করতে থাকলে শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

কেন হয়
শিশুর প্রস্রাব–পায়খানা করার অভ্যাস তৈরী হয় শিশুকাল থেকে দেওয়া প্রশিক্ষণের ওপর। অনেক মা ৯-১০ মাস বয়স থেকে মুখে শিস দেওয়ার মতো আওয়াজ করে শিশুকে সময়মতো প্রস্রাব করান। নির্দিষ্ট সময় পরপর পটিতে বা কমোডে বসিয়ে প্রস্রাব করানোর অভ্যাসও করেন অনেকে। শিশুর ৯-১৫ মাস বয়সের মধ্যে এই প্রশিক্ষণ শুরু করা উচিত। পরবর্তী সময়ে এই প্রশিক্ষণ বেশ সহায়ক হয়। তবে অনেক মা-বাবাই ব্যাপারটিকে অবহেলা করেন। শিশু যখন যেখানে খুশি প্রস্রাব করছে দেখেও উদাসীন থাকায় প্রশিক্ষণ ঠিকমতো হয় না। এ ধরনের শিশুরা পরবর্তী সময়ে অনেক দিন ধরে বিছানায় প্রস্রাব করে।

কিডনি ও প্রস্রাবের পুরো ব্যবস্থার কোথাও ত্রুটি থাকলেও রাতে বিছানায় প্রস্রাব করতে পারে শিশু। বিশেষত মূত্রনালির সংক্রমণ, বহুমূত্র রোগের কারণে যেমন ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস ও মেলিটাস, ক্রনিক রেনাল ফেইলিওর প্রভৃতি কারণে শিশু বিছানা ভেজাতে পারে।

 

আরও কিছু কারণ—

মানসিক অশান্তি

শিশুর মানসিক অশান্তি, অনিরাপত্তাবোধ, নতুন জায়গা, মা-বাবার অনুপস্থিতি, বিছানা পরিবর্তন, হতাশা প্রভৃতি কারণে বিছানা ভেজানোর মতো ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে অনেক সময় সুফল পাওয়া যায়।

ছোট মূত্রথলি 
মূত্রথলি ছোট হলে রাতে প্রস্রাব ধরে রাখার যথেষ্ট সক্ষমতা থাকে না। মূত্রথলি নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুগুলোর পরিণত হওয়ার গতি ধীর হলেও এই সমস্যা হতে পারে।

হরমোন ভারসাম্যহীনতা
ভারসাম্যহীনতার কারণে দেহে পর্যাপ্ত অ্যান্টি-ডিউরেটিক হরমোন (ADH) উৎপাদন করে না। তখন বিছানায় প্রস্রাব করার মতো সমস্যা হয়।

মূত্রনালির সংক্রমণ 
এই সংক্রমণ মূত্রত্যাগ নিয়ন্ত্রণ করা বাধাগ্রস্ত করে তুলতে পারে। তখন বিছানা ভেজা, ঘন ঘন প্রস্রাব, লাল বা গোলাপি প্রস্রাব এবং প্রস্রাবের সময় ব্যথা থাকতে পারে।

নিদ্রাহীনতা
কখনো কখনো নিদ্রাহীনতা বা ঘুমের ব্যাঘাতের কারণেও বিছানা ভেজায়।

ডায়াবেটিস
যে শিশুটি সাধারণত রাতে বিছানায় প্রস্রাব করে না তাদের ক্ষেত্রে হঠাৎ সেটা ঘটলে ডায়াবেটিসের প্রথম লক্ষণ হতে পারে। অন্য লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব হওয়া, তৃষ্ণা বৃদ্ধি, ক্লান্তি এবং ওজন হ্রাস অথচ ক্ষুধা থাকতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য
যেহেতু একই পেশি মূত্র এবং মল নির্মূল নিয়ন্ত্রণে ব্যবহূত হয়, তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দীর্ঘমেয়াদি হলে এই পেশিগুলো অকার্যকর হয়ে উঠতে পারে এবং রাতে বিছানা ভেজানোর কারণ হয়ে উঠতে পারে।

স্নায়ুতন্ত্রের কাঠামোগত সমস্যা
শিশুর স্নায়বিক সিস্টেম বা মূত্রতন্ত্রের একটি ত্রুটির সঙ্গেও এটি সম্পর্কিত।

চাপ ও উদ্বেগ
চাপ ও উদ্বেগ জাতীয় বিষয়, যেমন—বড় ভাই বা বোন হওয়া, নতুন স্কুল শুরু করা বা বাড়ির বাইরে রাতে ঘুমানো—বিছানা ভেজানোর কারণ বা ট্রিগার হতে পারে।

এডিএইচডি বা অতি চঞ্চলতা 
যে শিশুদের মনোযোগ ঘাটতি, হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি) বা অতি চঞ্চলতা আছে, তাদের মধ্যে বিছানা ভেজানোর সমস্যা বেশি দেখা যায়।

বিছানায় প্রস্রাব
শিশু বিছানায় প্রস্রাব করলে তা নিয়ে তাকে কোনো রকম বকাঝকা বা তিরস্কার করা যাবে না। এতে শিশু উদ্বিগ্ন ও বিব্রত হবে, সমস্যা বাড়বে।

বংশগত

অনেক ক্ষেত্রে জন্মগত বা বংশগত প্রস্রাবের থলির স্প্রিন্টারের অপরিপক্বতা বা ঢিলা থাকার কারণে হয়। যদি মা-বাবা উভয়েই শৈশবে রাত্রিকালীন বিছানায় প্রস্রাবের রোগে ভুগে থাকেন, তাহলে তাঁদের শিশুর ৭৫ শতাংশের এই রোগের ঝুঁকি থাকে।

করণীয়

 

  • সন্ধ্যার পর জলীয় খাবার কম খাওয়ানো বা খেতে না চাইলে না দেওয়া।
  • রাতে ঘুমানোর আগে এবং প্রয়োজনে ভোররাতে আরেকবার উঠিয়ে শিশুকে প্রস্রাব করানো।
  • সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শিশু বিছানায় প্রস্রাব করলে তা নিয়ে তাকে কোনো রকম
  • বকাঝকা বা তিরস্কার করা যাবে না। এতে শিশু উদ্বিগ্ন ও বিব্রত হবে, সমস্যা বাড়বে।
  • চাইলে ভিন্ন রকম উদ্যোগ নিতে পারেন। শিশুকে একটি ডায়রি দিন। সপ্তাহের যে দিন সে বিছানায় প্রস্রাব করবে না, সে দিনটির তারিখে একটা তারকা চিহ্ন দিয়ে নির্দিষ্ট করতে বলুন তাকে। এরপর শিশুকে বলতে হবে, সপ্তাহে কয়েকটি তারকা চিহ্ন পেলে সে তার ইচ্ছানুযায়ী একটা পুরস্কার পাবে। এভাবে সে-ই সংগ্রাম করতে চাইবে ও নিজের সমস্যার সমাধানে মনোযোগী হবে। এই পদ্ধতিতে প্রায় ৭০-৮০ ভাগ ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়।
  • খুব অল্প ক্ষেত্রেই এ সমস্যা সমাধানে ওষুধের আশ্রয় নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে শিশুবিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
Link copied!