• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২, ১৫ জ্বিলকদ, ১৪৪৪

আমি কারও বিদেশ গমনের সুপারিশ করিনি : ডা. জেহাদ খান


কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১২, ২০২৫, ০৮:৪৯ পিএম
আমি কারও বিদেশ গমনের সুপারিশ করিনি : ডা. জেহাদ খান

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের বিষয়ে কারও কাছে কোনো সুপারিশ করেননি বলে দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা ডা. কর্নেল (অব.) জেহাদ খান।

সোমবার (১২ মে) দুপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন ডা. জেহাদ খান।

জেহাদ খান বর্তমানে ইবনে সিনা হাসপাতাল ধানমন্ডি শাখায় মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত। তিনি ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সম্ভাব্য প্রার্থী তিনি।

ডা. জেহাদ খান জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য। তিনি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদের সন্তান এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক।

ডা. জেহাদ খানের ভাষ্য, “পারিবারিকভাবে আবদুল হামিদ আমাদের আত্মীয় হলেও আমার পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে অধিকাংশই জামায়াত সমর্থক।”

ফেসবুক পেজে বিবৃতিতে ডা. জেহাদ খান বলেছেন, “আমি চরম ক্ষোভ ও বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, নাজমুস সাকিব নামের এক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেজ থেকে আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যেখানে কল্পনাভিত্তিক দাবি করা হচ্ছে যে, আমি নাকি সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বিদেশ গমনের অনুমতির জন্য রাষ্ট্রের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ‘ধরনা দিয়েছি’ এবং একটি ‘সেফ এক্সিট প্ল্যানের’ মূল পরিকল্পনাকারী!”

তিনি বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আমার জীবনে কখনো ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিনি বা তার সঙ্গে কোনোদিন কথাও হয়নি। তারসঙ্গে আমার কোনো পরিচয়, যোগাযোগ বা রাজনৈতিক সম্পর্কও নেই।”

‘আমি কারও বিদেশ গমনের সুপারিশ করিনি, করতেও পারি না’ উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, “আমি রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্বে নেই, রাজনৈতিক প্রশাসনের সঙ্গেও জড়িত নই। আমার পেশা চিকিৎসক। আমি সাধারণ একজন নাগরিক মাত্র। ইমিগ্রেশন পুলিশের কোনো কর্মকর্তা, বিশেষ করে ডিআইজি মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে আমার কোনো প্রকার যোগাযোগ নেই। তার কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও আমি যুক্ত নই। বরং, প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থায় থাকা ফ্যাসিবাদের সমর্থকদের মাধ্যমেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তিনি (আবদুল হামিদ) দেশ ছেড়েছেন। পরিকল্পিতভাবে তাদের ভূমিকা আড়াল করতেই আমাকে টেনে আনা হচ্ছে। সুতরাং, এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার না করে সেফ এক্সিটে দায়ী সরকারে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের জবাবদিহিতায় আনা হোক।”

চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ডা. জেহাদ খান বলেন, “যারা আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন ও মিথ্যা-বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন, তারা যদি এতটাই নিশ্চিত হন যে আমি কোনো ‘ধরনা দিয়েছি’, ‘সুপারিশ করেছি’, কিংবা কারও সঙ্গে ‘সেফ এক্সিট’ পরিকল্পনা করেছি—তাহলে তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ, ফোনালাপ, সাক্ষাৎ, নথি বা ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করুন। আমি নিশ্চিত—এমন কোনো প্রমাণ তারা কখনোই দেখাতে পারবেন না, কারণ এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, এটি নিছক কল্পনা।”

‘শুধু ভিন্নমত পোষণ করায় আমি আমার কর্মজীবনে বহুবার অবিচার ও হেনস্তার শিকার হয়েছি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চাকরিজীবনে আমার ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা থাকলেও জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কারণে আমাকে সেই পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এমনকি অবসরের পূর্বে আমার আরেকটি অনারারি গ্রেড যুক্ত হওয়ার কথা ছিল, সেটিও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গুড বুকে না থাকায় পাওয়া হয়নি। শুধু পদ-পদবি সংক্রান্ত বিষয়ই নয়, একজন চিকিৎসক হিসেবে চিকিৎসা সেবা পেশায় বিতর্কিত করতে নানা সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের অপচেষ্টা করা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে—আমি ভুয়া ডাক্তার, আমি এনজিওগ্রাম পারি না। এমনকি একপর্যায়ে আমাকে ভিডিও করে প্রমাণ দিতে হয়েছে যে, আমি এনজিওগ্রামে দক্ষ চিকিৎসক। এগুলো করা হয়েছে শুধুমাত্র ‘জামায়াতপন্থি’ হয়েও চিকিৎসক হিসেবে আমার খ্যাতি লাভের কারণে।”

ডা. জাহেদ খান বলেন, “২০২৪ সালের জুলাইয়ের রাজনৈতিক সংকটকালে যখন ধানমন্ডি ২৭-এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়, তখন ইবনে সিনা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আমি পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আহতদের চিকিৎসা দিয়েছি। অনেককেই গোপনে আশ্রয় দিয়েছি, যাতে তারা সুরক্ষা এবং চিকিৎসা পায়। এর ফলে আমি নিজেও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার হয়রানি, নজরদারি এবং সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছিলাম।”

জামায়াতের এই নেতা বলেন, “আমি হঠাৎ করেই জামায়াতে ইসলামীতে আসা লোক নই। ১৯৮৮ সালে আমি যখন ইন্টার্ন চিকিৎসক ছিলাম, তখনই আমি জামায়াতের রুকন হই। এরপর সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন সময়ে চাকরিবিধি অনুযায়ী সংগঠনের কাজ থেকে বিরত থাকলেও অবসর নেওয়ার পরই ২০১৪ সালে আবারও পুরোদমে কাজ শুরু করি। পারিবারিকভাবে আবদুল হামিদ আমাদের আত্মীয় হলেও আমার পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে অধিকাংশই জামায়াত সমর্থক। এমনকি মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবও পারিবারিকভাবে আমাদের আত্মীয়। সুতরাং, শুধুমাত্র ব্যক্তি আবদুল হামিদের জন্য আমার পরিবারকে বিবেচনা করা ভুল সিদ্ধান্ত।”

‘অপপ্রচারের ঘটনায়’ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ডা. জাহেদ খান বলেন, “এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন কেবল আমাকে নয়, আমার পরিবার, সহকর্মী ও দীর্ঘদিনের চিকিৎসা জীবনের সুনামকে কলুষিত করার অপচেষ্টা। আমি এ ধরনের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছি।”

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলী ডা. কর্নেল (অব.) জেহাদ খানের প্রতিবাদ বিবৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Link copied!