ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দিনদিন যেন বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ রোগীই এবার দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু ডেঙ্গুতে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে কেন এমন ভয়ানক আকার ধারণ করে চলুন জেনে নিই-
ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন রয়েছে। যেকোনো একটি ধরন দ্বারা কেউ আক্রান্ত হলে আজীবনের জন্য সেই ধরনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠে। ফলে ওই ব্যক্তি সেই ধরনের ডেঙ্গু দ্বারা আর কোনোদিন আক্রান্ত হবেন না। কিন্তু বাকি তিনটি ধরন দ্বারা ব্যক্তিটি যেকোনো সময় আবার আক্রান্ত হতে পারেন। আর তখনই তা হয়ে দাঁড়ায় বিপদের কারণ।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ জানান, দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে পুনরায় তীব্র ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা ১৫ গুণ বেড়ে যায়। আগে তীব্র ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতো শিশু-কিশোরেরা। বর্তমানে এটি সম্পূর্ণ বদলে গেছে। এখন ১৫-৪০ বছরের বয়সী ব্যক্তিরা তীব্র ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি বৃদ্ধরাও আক্রান্ত হচ্ছে তীব্র মাত্রার ডেঙ্গুতে।
দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু দ্বারা আক্রান্ত হলে শরীরের কোষে কোষে অনেক ভাইরাস অনুপ্রবেশ করে। আমাদের দেহ এসব ভাইরাসের বিরুদ্ধে তখন প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আর এই সময় মানবদেহে শুরু হয় নানা বিপর্যয়। রক্তজালিকা হয়ে পড়ে ছিদ্রযুক্ত। কখনো–কখনো এসব রক্তজালিকার মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। অনেক অঙ্গ হয়ে পড়ে বিকল। একে বলা হয় মাল্টি অর্গান ফেইলিউর। লিভার, কিডনি, ফুসফুস, এমনকি হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত বিকল হয়ে পড়তে পারে।
সাধারণত জ্বরের পঞ্চম-ষষ্ঠ দিন থেকে শুরু হতে পারে বিপর্যয়। তবে কখনো কখনো তৃতীয় দিন থেকেও এমনটি হতে পারে। একে বলা হয় ক্রিটিক্যাল বা সংকটপূর্ণ সময়। এ পর্যায়ে হতে পারে ডেঙ্গুজনিত রক্তক্ষরণ এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। এ ছাড়া ডেঙ্গুতে কিছু বিরল লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। এসব লক্ষণ খুব ভয়ানক।
তীব্র মাত্রার ডেঙ্গু হলে লিভার ও মস্তিষ্ক আক্রান্ত হতে পারে। ফলে রোগী জ্ঞান হারাতে পারেন। শুরু হতে পারে খিঁচুনি। হৃৎস্পন্দন হতে পারে এলোমেলো। হৃৎপিণ্ডের পেশি কোষ আক্রান্ত হয়ে হতে পারে কার্ডিওমায়োপ্যাথি। কিডনি, ফুসফুস, অগ্নাশয়—সব অঙ্গ হতে পারে বিকল।
করণীয়
অনেকে হয়তো জানেনই না যে আগে ডেঙ্গু হয়েছিল কি না। কারণ, ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু সাধারণ জ্বরের মতোই হয়ে থাকে। হয়তো সেটা আগে ধরা পড়েনি। তাই এ সময় জ্বর হলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। শুরুতেই পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। দেরি করা যাবে না। আর ডেঙ্গুর যেহেতু এখনো টিকা নেই, তাই মশার আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা ছাড়া একে প্রতিরোধের আর কোনো উপায় নেই। জ্বর হলে ডেঙ্গু কি না, তা নির্ণয় করা এবং বিপদচিহ্নগুলো নজরে রাখা, দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সূত্র: প্রথম আলো