• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

প্রতিদিনের ৭টি অভ্যাস, নীরবে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ০৯:৪৮ পিএম
প্রতিদিনের ৭টি অভ্যাস, নীরবে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে
নিয়মিত ব্যায়াম করলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে

ক্যানসার এক দিনে হয় না, এটি ধীরে ধীরে তৈরি হয়। অনেকতা নীরবেই ক্যানসার আমাদের নীরবে বাসা বাঁধে। অনেকে মনে করেন ক্যানসার শুধুই জিনগত বা ভাগ্যের ব্যাপার, কিন্তু বাস্তবে আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসগুলিই অনেক সময় এই রোগের মূলে থাকে। আমরা কী খাই, কতটা নড়াচড়া করি, কীভাবে ঘুমাই এই সবকিছুই প্রভাব ফেলে শরীরের স্বাস্থ্যে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায়। সচেতনতা এবং কিছু ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমেই ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব।

 ১. দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা

আজকের ব্যস্ত জীবনে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করেন অফিস ডেস্কে, গাড়িতে বা টিভির সামনে। দীর্ঘ সময় বসে থাকা শরীরের মেটাবলিজম কমিয়ে দেয়, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে ও প্রদাহ বাড়ায়। এতে কোলন, এন্ডোমেট্রিয়াল এবং ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একবার উঠে হাঁটুন বা স্ট্রেচ করুন, আর দিনে অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি মানের ব্যায়াম করুন।

২. অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া

চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, সফট ড্রিংক বা রেডি-টু-ইট খাবার এসব খাবারে অতিরিক্ত চিনি, লবণ, সংরক্ষণকারী ও কৃত্রিম উপাদান থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের খাবার স্তন ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। সম্ভব হলে বাড়িতেই তাজা খাবার রান্না করুন এবং ফল, সবজি, বাদাম ও পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার বেশি খান।
  
৩. খারাপ ঘুমের অভ্যাস

যথেষ্ট ঘুম না হলে শরীরের জৈবঘড়ি বা সারকাডিয়ান রিদম নষ্ট হয়, ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়, এবং কোষের মেরামত প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। দীর্ঘদিন ঘুমের ঘাটতি স্তন, প্রোস্টেট ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমোতে যান ও উঠুন, এবং অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন।

৪. সূর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষা না নেয়া

সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা বা দীর্ঘ সময় রোদে থাকা ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে স্কিন ক্যানসার ও মেলানোমা-র ঝুঁকি বাড়ে। তাই বাইরে বেরোলে  এসপিএফ৩০ বা তার বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন, এবং দুপুরের তীব্র রোদ এড়িয়ে চলুন।

৫. ধূমপান ও তামাকসেবন

ধূমপান বা চিবানো তামাক যেভাবেই হোক, এটি শরীরে বিষ ছড়ায়। তামাক ব্যবহার করলে ফুসফুস, মুখ, গলা, অগ্ন্যাশয় ও মূত্রাশয় ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। মনে রাখবেন, তামাকের কোনও নিরাপদ পরিমাণ নেই। 

৬. অ্যালকোহল পান

অ্যালকোহল শরীরের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং মেরামতের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এটি লিভার, স্তন, মুখ, গলা ও কোলন ক্যানসারের-এর ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার জন্য অ্যালকোহল সম্পূর্ণ পরিহার করা উচিত।

৭. মানসিক চাপকে উপেক্ষা করা

চাপ বা স্ট্রেস সরাসরি ক্যানসার সৃষ্টি না করলেও এটি ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে এবং ধূমপান, অতিভোজন বা মদ্যপানের মতো ক্ষতিকর অভ্যাসে ঠেলে দেয়। এগুলোই পরোক্ষভাবে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি। তাই ধ্যান, যোগ, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর মতো অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রয়োজনে কাউন্সেলর বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।

প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই আমাদের ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যের ভিত্তি তৈরি করে। সচেতনভাবে জীবনযাপনের পদ্ধতি বদলানোই ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়। আজ থেকেই শুরু করুন সক্রিয় থাকুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান, পর্যাপ্ত ঘুমান, সূর্যের থেকে সুরক্ষা নিন এবং মানসিকভাবে শান্ত থাকুন। আপনার আজকের সচেতন সিদ্ধান্তই হতে পারে আগামী দিনের সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া  

Link copied!