নবজাতক অর্থাৎ জন্মের পর এক মাসের মধ্যে শরীরে যদি জন্মগত হৃদরোগ থাকে, সেটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে “Congenital Heart Disease (CHD)” বলা হয়। এটি শিশুর হৃদপিণ্ডে গঠনগত সমস্যা, যেমন হৃদযন্ত্রে ছিদ্র, রক্তনালীর বিকৃতি বা ভালভের অসামঞ্জস্যতার কারণে হয়ে থাকে। সময়মতো রোগ শনাক্ত না হলে তা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হতে পারে। তাই প্রতিটি অভিভাবকের উচিত শিশু জন্মের পরই কিছু লক্ষণ খেয়াল রাখা, যা হৃদরোগের ইঙ্গিত দিতে পারে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা
নবজাতকের হৃদরোগের অন্যতম সাধারণ লক্ষণ হলো শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা। শিশু দ্রুত ও কষ্ট করে শ্বাস নেয় (প্রতি মিনিটে ৬০ বার বা তার বেশি)। বুক ধকধক করে ওঠানামা করে। নাক ফুলে ওঠে শ্বাস নেওয়ার সময়। ঘাড় বা পেট দপদপ করে উঠতে দেখা যায়। বুকের মাঝখানে হালকা কাঁপুনি দেখা যায়। এগুলো লক্ষ্মণ থাকলে বোঝা যায়, শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাচ্ছে না, যা হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে।
ঠোঁট, জিভ ও হাত-পায়ের নীলাভ রং
নবজাতকের শরীরে অক্সিজেন কম থাকলে ঠোঁট, জিহ্বা ও নখের নিচের অংশ নীলচে হয়ে যায়। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত। এমন হলে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। নীলচে ভাব সবসময় দৃশ্যমান নয়, মাঝে মাঝে দেখা দেয়। কান্নার সময় বা ঠান্ডা লাগলে রং আরও গাঢ় হতে পারে।
দুধ পানে অসুবিধা বা ঘন ঘন থেমে যাওয়া
হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের দুধ খাওয়ার সময় সমস্যা দেখা যায়। শিশুরা দুধ খেতে গিয়ে দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। দুধ খাওয়ার সময় ঘন ঘন থেমে যায় এবং ঘামতে শুরু করে। পর্যাপ্ত দুধ খেতে না পারার কারণে ওজন বাড়ে না বা কমে যায়। এগুলো হার্টের দুর্বলতার লক্ষণ, যা রক্তচলাচলের সমস্যার কারণে হয়।
অতিরিক্ত ঘাম
নবজাতক দুধ খাওয়ার সময় বা ঘুমানোর সময় যদি অস্বাভাবিকভাবে ঘামে, বিশেষ করে মাথায়, তবে তা হৃদরোগের সম্ভাবনা নির্দেশ করে। এমন ঘাম কোনো শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াও হতে পারে। এটি হৃদয়ের অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে হয়।
ওজন না বাড়া বা বিকাশে বিলম্ব
সাধারণত সুস্থ নবজাতকের ওজন ধীরে ধীরে বাড়ে। কিন্তু হৃদরোগ থাকলে শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।শরীরের ওজন কমে যায় বা বাড়ে না। শিশু দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। কান্না কমে যায় বা কণ্ঠ দুর্বল হয়ে যায়। এ ধরনের উপসর্গ দীর্ঘমেয়াদি হৃদরোগের ইঙ্গিত দিতে পারে।
বুকের ভেতরে অস্বাভাবিক শব্দ
শিশুর হার্টে ছিদ্র থাকলে বা রক্তপ্রবাহ অস্বাভাবিক হলে চিকিৎসক বুকের উপর স্টেথোস্কোপ দিয়ে এক ধরনের শব্দ শুনতে পান, যাকে বলা হয় মার্মার।
এই শব্দ সব সময় সমস্যা বোঝায় না, তবে কিছু ক্ষেত্রে জটিলতার লক্ষণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echo) দিয়ে এটি নিশ্চিত করেন।
বারবার নিউমোনিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ
হৃদরোগ থাকলে শিশুর ফুসফুসে বারবার ইনফেকশন হয়। ঘন ঘন কাশি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর হতে থাকে। শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় বারবার। সাধারণ চিকিৎসায় উন্নতি হয় না।এগুলোও জন্মগত হৃদরোগের গোপন ইঙ্গিত হতে পারে।
চিকিৎসা ও করণীয়
শিশু জন্মের পরই নিউবর্ন চেকআপে হার্টের শব্দ পরীক্ষা করানো জরুরি। সন্দেহ হলে ইকোকার্ডিওগ্রাম, পালস অক্সিমেট্রি, বা এক্স-রে করা হয়। কিছু হৃদরোগ সামান্য ও সময়ের সঙ্গে নিজে নিজে সেরে যায়। জটিল সমস্যা হলে সার্জারি বা মেডিকেল ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন হয়।