লালনশিল্পী ফরিদা পারভীনের মৃত্যুকে সামনে রেখে ভেতরে জমা কিছু ক্ষোভের কথা উগরে দিলেন দেশের আরেক নন্দিত প্লেব্যাকশিল্পী কনকচাঁপা। যে ক্ষোভের মাধ্যমে সমগ্র শিল্পী সমাজের মনে চাপা কষ্টের কথাগুলোই যেন তুলে ধরলেন তিনি।
১৩ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদা পারভীনের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান কনকচাঁপা। সেখানে ফরিদা পারভীনকে নিয়ে শোক প্রকাশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের প্রতি আক্ষেপের কথাও জানান তিনি। তার মতে, একজন শিল্পী মারা যাওয়ার পর অনেকেই পাপ-পুণ্য, দোজখ-বেহেশত নিয়ে কথা বলেন, যা উচিত নয়।
আক্ষেপ ব্যক্ত করে কনকচাঁপা বলেন, ‘সাধারণ মানুষ মনকে আনন্দিত করতে গান শোনেন। কিন্তু যখন কোনও শিল্পী মারা যান তখন পাপ-পুণ্য, দোজখ-বেহেশত নিয়ে তারা অনেক কথা বলেন। সেই মন্তব্যগুলো দেখলে আমি ভীত হয়ে যাই, খারাপ লাগে। একজন মানুষের দাফন সম্পন্ন হয়নি, তখন থেকেই তিনি কত নম্বর দোজখে বা বেহেশতে যাবেন- এসব নিয়ে আলোচনা চলে।’
শিল্পী অনুরোধ করেন, ‘যারা অনলাইন বা সামাজিকমাধ্যমে সক্রিয়, তাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ- শিল্পীদের এত পাপী ভাববেন না। আমাদের দেশে পাপ অনেক জায়গায় আছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আছে; কিন্তু আমরা শিল্পী, আমরা শুধু গান করি। আমাদের ঘুষ খাওয়ার জায়গা নেই, দুর্নীতির জায়গা নেই, মিথ্যাচার করার জায়গা নেই, আমাদের অন্যায় করার জায়গা নেই।’
এদিকে ফরিদা পারভীন প্রসঙ্গে কনকের মন্তব্য এমন, ‘ফরিদা পারভীন আপা লালনগীতির যে জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করেছিলেন, পুরো জায়গাটি তিনি শূন্য করে নিজের সঙ্গে নিয়ে গেলেন। যারা লালনগীতি শুনতাম, ফরিদা আপাকেই শুনতাম। মূলত যারা লালনের আখড়ায় গান করেন তাদের গান এক রকম, আর ফরিদা আপার গান আরেক রকম। আখড়া থেকে গান তুলে এনে আপা উপস্থাপন করেছেন।’
ফরিদা পারভীন মারা গেছেন ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রবিবার দুপুর ১২টার দিকে সর্বস্তরের মানুষ শিল্পীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জোহর নামাজের পর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে কুষ্টিয়ায় মা-বাবার কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করার কথা রয়েছে।