• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

‘আল্লাহ তুমি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেও’


দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৩, ০২:৫৭ পিএম
‘আল্লাহ তুমি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেও’

বাড়ির বারান্দায় বসে অনবরত কেঁদে চলেছেন নাসরিন আক্তার। চোখের আঙিনায় বয়ে চলা জল নিয়ে কেবলই বেদনার স্বর। শোকের কান্নায় একপ্রকার ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। কেঁদে কেঁদে নাসরিন কেবলই বলছেন, “আমার স্বামী ছাড়া এই পৃথিবীতে কেউ নাই আল্লাহ। সেই স্বামীর জীবন বিআরটিসি বাস কেড়ে নিল। তিনটা বাচ্চা নিয়া আল্লাহ কই যাব এখন? কীভাবে মুখে খাওয়ার তুলে দিব আল্লাহ? তুমি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেও।”

নাসরিন আক্তার দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দর সাতনালা গ্রামের বাসিন্দা ফয়জার রহমানের স্ত্রী। গত সোমবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের সদর উপজেলার দরবারপুর এলাকায় বিআরটিসি ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন ফয়জার রহমান। ঘটনা পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও স্বামীর এই আকস্মিক মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না নাসরিন আক্তার।

নাসরিন এখনো মনে করেন প্রতিদিনের মতো স্বামী ফিরে এসে সন্তানদের আদর করবেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী স্বামী ফয়জার রহমানকে হারিয়ে একপ্রকার হতাশায় পড়েছেন তিনি। শুধু ফয়জার রহমানই নন। রানীবন্দর এলাকার শামসুর রহমানের ছেলে সোহান (২৫) এবং লিয়াকত আলীর ছেলে মোস্তাকিমও (২৮) এ দুর্ঘটনায় নিহত হন। যারা সেদিন ফয়জার রহমানের পিকআপে ছিলেন। তাদের পরিবারেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের পরিবারের দাবি, বিআরটিসি বাসের বেপরোয়া গতির কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

নিহত ফয়জারের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ফয়জার রহমান তিন সন্তান রেখে গেছেন। সন্তানদের মধ্যে বড় মেয়ে ফারহানা আক্তার তিথি (১৫) আলোকডিহি জেবি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী, ছোট ছেলে ফুয়াদ হোসেন (১২) ডোমারের একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা পড়ছেন এবং ছোট মেয়ে ফাবিয়া আক্তারের বয়স মাত্র ১৫ মাস। ছোট মেয়ে ফাবিয়াকে ম্যাজিস্ট্রেট বানানোর স্বপ্ন দেখতেন ফয়জার। এখন সবকিছুই যেন ধোঁয়াশা স্ত্রী নাসরিনের কাছে।

নিহতের ফয়জারের চাচা আব্দুর রউফ বলেন, “আমার ভাতিজা স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে সুখে সংসার চলছিল। আমার ভাতিজা দীর্ঘদিন ধরে পিকআপ চালায়। সে কোনো দিন দুর্ঘটনা ঘটায় নাই। সেদিন ব্যাটারি নিয়ে রানীরবন্দর থেকে দিনাজপুর শহরে যাচ্ছিল। কিন্তু বেপরোয়া বিআরটিসির কারণে তিন তিনটি তাজা প্রাণ শেষ হয়ে গেল। এখন পরিবারগুলোর কী অবস্থা? এটার দায় ভার কে নেবে?”

প্রত্যক্ষদর্শী সুবহান আলী বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে আমার বাসা একটু দূরে। সোমবার সন্ধ্যায় বিকট শব্দ শুনে এসে দেখি বিআরটিসি বাস পিকআপের ওপরে উঠে গেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে পিকআপটি বিআরটিসির নিচ থেকে বের করেন। বিআরটিসির বেপরোয়া গতির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।”

এ ব্যাপারে দশমাইল হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ননী গোপাল বর্মণ বলেন, “তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মূলত দ্রুতগতির কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি আমাদের হেফাজতে রয়েছে।”

Link copied!