• ঢাকা
  • বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২, ১৫ জ্বিলকদ, ১৪৪৪

গরিবের ভাগের মাংস আ.লীগ নেতাদের পেটে!


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৩, ১১:২৫ এএম
গরিবের ভাগের মাংস আ.লীগ নেতাদের পেটে!

দুস্থ, হতদরিদ্র ও এতিমদের জন্য সৌদি সরকারের দেওয়া কোরবানির পশুর মাংসে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভাগ বসানোর অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (১৫ মার্চ) কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, জেলার ৯ উপজেলার জন্য সৌদি সরকারের দেওয়া ১৭৭ কার্টন কোরবানির পশুর মাংস মাংস বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চিলমারী উপজেলায় ১২ কার্টন মাংস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব মাংস জেলার বিভিন্ন এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিংসহ দুস্থদের মাঝে বিতরণ করার জন্য বলা হয়েছে।

চিলমারী উপজেলার একাধিক দায়িত্বশীল আওয়ামী লীগের কর্মী জানান, কয়েক বছর পর সৌদি সরকারের দেওয়া কোরবানির মাংস চিলমারীতে পৌঁছালেও তা হতদরিদ্র ও বঞ্চিতদের মধ্যে বিতরণ না করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বরাদ্দের ১২ কার্টন মাংসের মধ্যে ৬ কার্টন মাংস ছয় ইউনিয়ন পরিষদে দেওয়া হয়েছে। বাকি ছয় কার্টন জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতাকর্মীর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে কোনো কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন চিলমারী আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম লিচু। তিনি বলেন, “আমি রাজনৈতিক কাজে ঢাকায় ছিলাম। এ বিষয়ে কিছু জানি না।”

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান শাহীন নেতাকর্মীদের মধ্যে মাংস বিতরণের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের তাদের এলাকার দুস্থদের মধ্যে বিতরণের উদ্দেশ্যে মাংসের কার্টন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের স্টাফ, সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যেও মাংস বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জেলার অন্য উপজেলাগুলোতে এতিম ও দুস্থদের মধ্যে মাংস বিতরণ করা হলেও চিলমারীতে নেতাকর্মীদের জন্য কেন, এমন প্রশ্নে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, “এখানে (চিলমারীতে) দীর্ঘদিন ধরে এই চর্চা চলে আসছে। তাই আমি নতুন করে কিছু বলিনি।”

মাংস পাওয়ার পর অনেক নেতাকর্মী এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি উপজেলার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও এ মাংস নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত এসব মাংস নেননি জানিয়ে চিলমারী প্রেসক্লাবের সদস্য মমিনুল ইসলাম বাবু বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক। এই মাংসে সম্পূর্ণ অধিকার হলো দুস্থ, অভাবগ্রস্ত ও এতিমদের। এই উদ্দেশ্যেই এসব মাংস বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও সাংবাদিক ও রাজনৈতিক দলের ভাগ বসানো লজ্জাজনক। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই মাংস সাংবাদিকরা না নিলেও পারতেন।”

প্রেসক্লাব চিলমারীর সভাপতি মনিরুল আলম লিটু মাংস পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমাদের ক্লাবে মাংস পেয়েছি। এগুলো নেওয়া ঠিক নয়। তবে আমাদের ডেকে দিয়েছে।”

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান বলেন, “ইউপি চেয়ারম্যানদের দিয়ে গরীব ও দুস্থদের দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগও সাংবাদিকদের দেওয়া হয়নি। মাংস সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়েছে। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখব।”

Link copied!