• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মঙ্গলবার থেকে শুরু দুবলার চরের শুঁটকি মৌসুম


মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২২, ০২:৪৭ পিএম
মঙ্গলবার থেকে শুরু দুবলার চরের শুঁটকি মৌসুম

মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) থেকে বাগেরহাটের মোংলায় সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হচ্ছে শুঁটকি মৌসুম।

বনবিভাগ জানায়, ১ নভেম্বর থেকে শুঁটকি আহরণ মৌসুমে সুন্দরবনের দুবলার চারটি চরে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ১০ হাজার জেলে অবস্থান করবেন। সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করে সুন্দরবনের চরে নিয়ে এসে শুঁটকি তৈরি করবেন তারা।

তাই শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় উপকূলের জেলে-মহাজনেরা। সাগরে যেতে যে যার মতো প্রস্তুত করছেন জাল, দড়ি, নৌকা-ট্রলার। কেউ কেউ গড়েছেন নতুন ট্রলার, আবার কেউ পুরনোটিকে মেরামত করে নিয়েছেন। সাগরে যাওয়ার শেষ প্রস্তুতি নিয়ে তৈরি তারা।

বনবিভাগের পাস নিয়েই তারা রওনা হয়েছেন সাগর পাড়ের দুবলার চরে। সাগরে এখন আর দস্যুদের উৎপাত না থাকলেও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি মাথায় নিয়েই দুবলায় যাত্রা শুরু করবেন হাজার হাজার জেলে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্রে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে এ বছরও প্রায় ১০ হাজার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী জড়ো হবেন বঙ্গোপসাগর উপকূল বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলাসহ ৪টি চরে।

বনবিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে এ মৌসুম চলবে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। টানা ৫ মাস সেখানে থাকতে হবে জেলেদের। তাই সাগর পাড়ে গড়তে হবে তাদের অস্থায়ী থাকার ঘর, মাছ শুকানো চাতাল ও মাচা।

সেসব তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে না সুন্দরবনের কোনো গাছপালা-লতাপাতা। তাই বনবিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী চরের উদ্দেশ্যে যাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া সকল জেলে তাদের ট্রলারে করে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী। আর এ সকল প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগেরহাটসহ উপকূলের কয়েক জেলার জেলে-মহাজনেরা।

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের নেতা কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনে এখন আর দস্যুতার ভয় নেই। তাই অনেকটা স্বস্তি নিয়েই সাগরে যান জেলেরা। তবে বনবিভাগ থেকে এখনো সব পাস পারমিট পাওয়া যায়নি।

কামাল উদ্দিন আহমেদ আরও জানান, শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে এবারও উপকূলের বিভিন্ন এলাকার সাড়ে ছয় হাজার বহরদারের অধীনে প্রায় ৯-১০ হাজার জেলে সমবেত হবেন দুবলার চরে। ট্রলার নিয়ে গভীর সাগর থেকে আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাছাই করে শুঁটকি করবেন তারা।

সমুদ্রগামী জেলে সমিতির সভাপতি মল্লিক শহিদুল ইসলাম বলেন, “বিকল্প কোনো কাজের সুযোগ না থাকায় ধার দেনা করে হলেও শুঁটকি আহরণের এই অনিশ্চিত যাত্রায় ছুটতে হয় জেলেদের। শুঁটকি থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব পায় সরকার। তবে সব থেকে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বিভিন্ন চরে মহাজনদের কাছে মাছ বিক্রিতে আমরা সঠিক মূল্য পাই না।”

সুন্দরবন অভ্যন্তরে কমপক্ষে ১৫টি মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়ে এই দুবলা জেলেপল্লী। দুবলা জেলেপল্লীর জেলেরা নিজেদের থাকা, মাছ ধরার সরঞ্জাম রাখা ও শুটকি তৈরির জন্য প্রতি বছর অস্থায়ী ঘর ও মাচা তৈরি করে থাকেন। জেলেপল্লীতে জেলেদের ঘর তৈরি ও জ্বালানি ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত রাজস্ব আদায় করে থাকে সুন্দরবন বন বিভাগের দুবলা টহল ফাঁড়ি।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম হাওলাদার জানান, বনবিভাগের কাছ থেকে পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে নিজ নিজ এলাকা থেকে রওনা হয়ে জেলেদের সরাসরি যেতে হবে দুবলার চরে। যাওয়ার পথে সুন্দরবনের কোনো নদী-খালে প্রবেশ ও অবস্থান করতে পারবেন না সমুদ্রগামী এ জেলেরা। এছাড়া দুবলার চরে অবস্থানকালে সাগর ছাড়া সুন্দরবনের খালে প্রবেশ ও সেখানে মাছ ধরতে পারবেন না তারা।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, এ বছরও চরে জেলেদের থাকা ও শুঁটকি সংরক্ষণের জন্য এক হাজার ৩০টি ঘর, ৬৩টি ডিপো এবং ৯৬টি দোকান স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছ। গত শুটকির মৌসুমে দুবলার চর থেকে বনবিভাগের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ টাকা। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তার চেয়েও বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে।

Link copied!