• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সাম্মাম চাষ করে দুই মাসে আয় ৩ লাখ টাকা


গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৩, ০৭:০৩ পিএম
সাম্মাম চাষ করে দুই মাসে আয় ৩ লাখ টাকা

মধ্যপ্রাচ্যের বাঙ্গী জাতের ফল সাম্মাম বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে সফল হয়েছেন গোপালগঞ্জ সদরের চরগোবরা গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী শেখ। মাত্র ৪২ শতক জমিতে ৩ প্রজাতির সাম্মাম চাষ করেছেন তিনি। ফলনও হয়েছে ব্যাপক। মাত্র ৫৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে দুই মাসে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করবেন বলে আশা করছেন আইয়ুব আলী শেখ।

জানা গেছে, ইউটিউব দেখে  গতবছর একই জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সাম্মাম চাষ করেছিলেন আইয়ুব আলী। সেবছর তিনি মাত্র দুই মাসেই আড়াই লাখ টাকা আয় করেছিলেন। অল্পদিনে লাভজনক ফসল হওয়ায়  চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম দিকে একই জমিতে তিনি আবার সাম্মাম ফলের চাষ করেছেন। এ বছর এখন পর্যন্ত  তিনি এক লাখ টাকার সাম্মাম বিক্রি করেছেন। আরও দুই লাখ টাকার সাম্মাম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা আইয়ুব আলীর।

এদিকে আইয়ুব আলীর সাম্মাম চাষ দেখে স্থানীয় অনেকেই এখন এ ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সাম্মাম বিদেশি ফল, রসালো খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি। এছাড়া পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ হওয়ায় স্থানীয় বাজারেও চাহিদা রয়েছে এ ফলের। প্রতি কেজি সাম্মাম স্থানীয় বাজারে আইয়ুব আলী বিক্রি করছেন ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায়। ভালো দাম পেলে জেলার বাইরের বাজারগুলোতেও বিক্রি করার আশা ব্যক্ত করেছেন আইয়ুব।

সরেজমিনে চরগোবরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ৪২ শতাংশ জমির পুরোটাজুড়ে সাম্মাম ঝুলে আছে। রক  স্টার ও এ্যারোমা সুইট প্রজাতির সাম্মাম, ফ্রুট ব্যাগিং করে রাখা হয়েছে। আর গোল্ডেন হানি ডিউ জাতের সাম্মাম খোলামেলাভাবে বেড়ে উঠছে। এ জাতের হলুদ সাম্মাম পুরো জমি জুড়ে  নয়নাভিরাম শোভা ছড়াচ্ছে। প্রতিদিন অনেকেই এই সাম্মাম চাষ দেখতে ভীড় করছেন জমিতে। কেউবা আবার পরামর্শ নিচ্ছেন আইয়ুব আলীর কাছ থেকে।

সাম্মাম চাষি মো. আইয়ুব আলী শেখ বলেন, “আমি সিঙ্গপুরে চাকরি করতাম। চাকরি ভালো লাগত না। পরে দেশে ফিরে এসে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এরপর গত বছর  ইউটিউবে সাম্মাম চাষ দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই। তারপর  কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে মালচিং ফিলিং পদ্ধতিতে সাম্মাম চাষ করি। এখানে হলুদ ফ্রেমন ট্রাফ (পোকামাকড় নিধক) স্থাপন করা হয়েছে।  তাই কীটনাশক তেমন প্রয়োগ করতে  হয়নি। জুনে মাত্র ৪০ শতাংশ জমিতে সাম্মাম চাষাবাদ করি। ৬০ দিনের মাথায় সাম্মাম সংগ্রহ করে বাজারজাত শুরু করেছি। প্রতিটি সাম্মামের ওজন দুই কেজি থেকে সোয়া চার কেজি পর্যন্ত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “সাম্মাম চাষে আমার ব্যয় হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। এখন প্রতি কেজি সাম্মাম ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। চলতি মাসের মধ্যেই আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার সাম্মাম বাজারে বিক্রি করতে পারব। এখান থেকে আমি মাত্র ৭৫ দিনেই আড়াই লাখ টাকা থেকে তিন লাখ টাকা লাভ করতে পারব।” প্রতিদিন অনেকেই তার কাছে সাম্মাম চাষের জন্য পরামর্শ নিতে আসেন বলেও জানান তিনি।

সাম্মাম চাষ দেখতে আসা সবুজ মিয়া বলেন, “আইয়ুব আলী চাচার সাম্মাম চাষ দেখতে এসেছি। খুব ভালো ফলন হয়েছে। জানতে পারলাম এটা খুব লাভজনক একটি ফসল। আমাদেরও সাম্মাম চাষ করার ইচ্ছা আছে। তাই আইয়ুব চাচার কাছে পরামর্শ নিয়েছি। এছাড়াও কৃষি বিভাগ আমাদের সর্বোচ্চ সহোযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে।“

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আ. কাদের সরদার বলেন, “আইয়ুব আলী শেখ গত বছরও একই জমিতে সাম্মাম চাষ করেছিলেন। এবারও তিনি একই জমিতে সাম্মাম চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে ভালো। তিনি এ বছর ওই জমি থেকে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করবেন বলে আশা করছি। সাম্মাম একটি লাভজনক ফসল। অল্পদিনে অধিক লাভজনক ফসল হওয়ায় জেলায় দিন দিন এই সাম্মাম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। আমরাও তাদের উদ্বুদ্ধ করছি।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!