• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বড়দিনে কেন সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২২, ০৭:২৬ পিএম
বড়দিনে কেন সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি

২৫ ডিসেম্বর, যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন। দিনটি তাই বড়দিন হিসেবে পালন করে খ্রিস্টীয় ধর্মাম্বলীরা। এই দিনে ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়ে উদযাপন করা হয়। বাড়িতে, শপিংমলে, পার্কে কিংবা রেস্টুরেন্টে ক্রিসমাস ট্রি বসানো হয়। আর তা সাজানো হয় নানা রঙের বাতিতে, ঘণ্টায় আর রঙিন পপসে, মোমবাতি, পাখি, ফুল, ফল, স্বর্গদূত আর রঙবেরঙের কাগজে।

বড়দিনে নানা আয়োজন থাকে। তবে প্রধান আকর্ষণ থাকে এই ক্রিসমাস ট্রি। এই ট্রির সামনে দাড়িয়ে সান্তা ক্লজ সবাইকে উপহার দেন। নাচে গানে মেতে উঠেন। যেই ক্রিসমাস ট্রিকে নিয়ে এতো আকর্ষণ, জানেন কি এটি কীভাবে বড়দিনের উত্সবের সঙ্গে মিশে গেল। এর পেছনেও রয়েছে ইতিহাস। 

ক্রিসমাস ট্রি ঝাউগাছের মতো দেখতে। অনেকটা পিরামিডের মতোই। এই গাছকে সাজিয়েই বানানো হয় ক্রিসমাস ট্রি। তবে এই গাছটি সাজানোর পেছনে ইতিহাস রয়েছে। 

ইতিহাস বলছে, যিশুখ্রিস্ট কোথাও কিছুই বলে যাননি। বড়দিন পালনে এই গাছটির বিশেষত্বের কথাও কোথাও নেই। তাহলে কীভাবে এলো এই ক্রিসমাস ট্রি।  

বিশেষজ্ঞদের মতে, যিশু খ্রিস্ট ছিলেন ঈশ্বরের দূত। মানুষের মঙ্গল করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। সারা জীবন তিনি তাই করেছেন। মানুষের মঙ্গলের জন্য অকালে প্রাণও দিয়েছেন। তার পক্ষে নিজের জন্মদিন পালন সম্পর্কে এতো সব আড়ম্বরের কথা বলা সম্ভব ছিল না। এমনকি যিশুর মৃত্যুর বেশ কয়েক শতক পরে তার  জন্মদিন এত ধুমধাম করে পালন করা শুরু হয়। মানুষ তার মৃত্যুদিনই স্মরণীয় রাখতে দিবসটি উদযাপন করতেন। পরে জন্মদিনটিও উদযাপন শুরু হয়। নাম হয় ক্রিসমাস ডে।

ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর রীতিও মানুষ পালন করে আসছে বহু শতক ধরে। খ্রিস্টান ধর্মের মানুষদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ক্রিসমাসের গাছ যে বাড়িতে সাজানো হয়, সেখানকার শিশুদের আয়ু দীর্ঘ হয়। কিন্তু এটা কীভাবে এলো?

ইতিহাস বলে, জার্মানিতে এক সময় শীতকালে এই বিশেষ গাছটি দিয়ে ঘর সাজানোর রীতি প্রচলিত ছিল। ১৭৫০ সালে এই গাছ দিয়ে ঘর সাজানোর নিয়ম প্রথম দেখা গিয়েছিল ট্রাসবুর্গ শহরে। কয়েক বছর পর ১৭৭১ সালে জোহান উলফগাং বহন গেটে নামের এক বিখ্যাত লেখক বড়দিনের ছুটি কাটাতে জার্মানি ঘুরতে আসেন। সেখানে তিনি স্ট্রাসবুর্গ শহর ঘুরে দেখেন। তখনই শীতের মৌসুমে তিনি প্রতিটি বাড়িতে বড়দিনের সময় ক্রিসমাস ট্রি সাজানো দেখেন। এই সজ্জায় তিনি খুবই মুগ্ধ হন। এরপর তিনিই শীতকালের এই গাছের সাজ এবং বড়দিনকে একাকার করে ফেলেন। তিনি ভুল করে বড়দিন উপলক্ষ্যে এই সাজ ভাবতে থাকেন। 

উলফগাং বহন গেটে  তার ‘দ্য সাফারিং অব ইয়ং ওয়েরথার’ বইতে এই গাছের কথা লিখেছেন। পরে ১৮২০ সালে তার সেই বইয়ের লেখা নিয়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী দেশগুলোতে শুরু হয় হইচই। ওই বছরই জার্মান রাজকুমার অ্যালবার্টের সঙ্গে বিয়ে হয় রানি ভিক্টোরিয়ার। রাজকুমার অ্যালবার্ট বিয়ের পর ইংল্যান্ডকে ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে সাজিয়ে বড়দিন পালন করেন। সেই থেকে শুরু হয় ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর প্রথার।

এর পর ১৮৪৮ সালে এক মার্কিন সংবাদপত্রে বড়দিনের মৌসুমে ক্রিসমাস ট্রি-র ছবি ছাপা হয়। ক্রমশ জনপ্রিয়তা বাড়ে ক্রিসমাস ট্রির। শীতে সাজানো ক্রিসমাস ট্রি আরএবং বড়দিনের উত্সব একাকার হয়ে যায়। আর ক্রিসমাস ট্রিও হয়ে উঠে প্রধান আকর্ষণ।

এছাড়াও আরও প্রচলিত রয়েছে, যিশু খ্রিস্টের জন্মের সঙ্গেও ক্রিসমাস ট্রি যুক্ত রয়েছে। যিশুর জন্মের পরে যারা তার বাবা-মা জোসেফ ও মেরিকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তারা নিজেদের বাড়ির এই চিরসবুজ ফার গাছ আলো দিয়ে সাজিয়ে দেন। সেই থেকেই এই প্রথা চলছে।

ক্রিসমাস ট্রি গাছের ওপর তারা লাগানো থাকে। এছাড়াও এতে আলোর ব্যবহার হয়। লাগানো হয় বিভিন্ন অর্নামেন্ট। গাছের ওপরে একটি তারা বা স্বর্গদূত বসানো হয়। এই স্বর্গদূতটি বেথেলহেমে জন্ম নেয়া যিশুখ্রিস্টের প্রতীক। সারা বিশ্বেই এখন বড়দিন উপলক্ষে গাছ সাজানোর রেওয়াজ রয়েছে। ক্রিসমাস ট্রি প্রথম জার্মানিতে দেখা যায়। অষ্টাদশ শত থেকে পুরো বিশ্বেই ক্রিসমাস ট্রি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

Link copied!