বিশ্বের ক্রান্তীয় ও উষ্ণমণ্ডলীয় স্থানগুলোতে বৃষ্টিপাত একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ দেশেও গ্রীষ্ম এবং বর্ষায় হয়ে থাকে ভারী বৃষ্টিপাত। বৃষ্টির প্রচণ্ডতা পরিবর্তন এনে দেয় মানুষের চলাফেরা ও জীবনযাত্রায়। চলুন আজ জেনে নিই বিশ্বের পাঁচটি সর্বোচ্চ বৃষ্টিবহুল জায়গার কথা-
ললর (কলাম্বিয়া)
সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হওয়া অঞ্চলগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে কলম্বিয়ার ললর। দেশটির তুতুনেন্দু এলাকায় অবস্থিত পর্বত ঘেরা উপকূলীয় সমভূমির শহর এই ললর। এখানে সারাবছর বৃষ্টি হয়। তবে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ সময় টানা ১১-১২ দিন ধরেও চলে বৃষ্টিপাত।
চেরাপুঞ্জি (ভারত)
বৃষ্টিবহুল স্থানের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চেরাপুঞ্জি। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার একটি শহর এটি। কিছুদিন আগেও চেরাপুঞ্জিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল স্থান হিসেবে ধরা হতো। এখানে সারাবছর তাপমাত্রা গড়ে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। বৃষ্টিপাত বেশি হয় এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১১ হাজার ৮৭২ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ মোট বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ১৮৬০-১৮৬১ সালের মধ্যে বার্ষিক ২৬ হাজার ৪৬১ মিলিমিটার।
মাউন্ট ওয়ালিয়ালো (হাওয়াই)
বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় হাওয়াই দ্বীপের মাউন্ট ওয়ালিয়ালোয়। এখানকার উপকূলীয় নিম্নভূমিতে সবসময় তীব্রভাবে বয়ে যায় ঊর্ধ্বগতির বাতাস, যার সর্বোচ্চ বেগ ১ হাজার ৫৬০ মিটার। বৃষ্টিপাতের কারণে সারা বছরই আর্দ্র থাকে এই এলাকা। তবে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় এপ্রিল মাসে। হাওয়াইয়ের অন্যতম একটি আকর্ষণীয় স্থান এই সবুজে ঘেরা মাউন্ট ওয়ালিয়ালো। শুধু বৃষ্টিভেজা সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছর এখানে আসে কয়েক লাখ পর্যটক। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১১ হাজার ৫০০ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১৯৮২ সালে।
দিবংসা (ক্যামেরুন)
ক্যামেরুনের দিবংসা গ্রামটিতে হয় বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। দেশটির দক্ষিণ আটলান্টিক উপকূলের এ গ্রামে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০ হাজার ৩০০ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১৯৭২ সালে, ১৪ হাজার ২৭০ মিলিমিটার। নিরক্ষরেখার কাছের এ গ্রামটির অবস্থান একেবারেই ক্যামেরুন পর্বতের ধার ঘেঁষে।
মাউন্ট বেল্লেন্দেন কের (অস্ট্রেলিয়া)
উষ্ণমণ্ডলীয় আবহাওয়ার জন্য খ্যাত অস্ট্রেলিয়ার মাউন্ট বেল্লেন্দেন কের পর্বতটি বিশ্বের পঞ্চম বৃষ্টিবহুল স্থান। এটি দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। বর্ষা মৌসুম চলে এপ্রিল থেকে মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত। এসময় খুব ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এই পর্বতের নামকরণ করা হয়েছে উদ্ভিদ বিজ্ঞানী বেল্লেন্দেন কোরের নামানুসারে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিকদিকে প্রবাল প্রাচীর ঘেরা সমুদ্র উপকূল, অন্য তিন দিকে পর্বত ঘেরা এ এলাকায় যেন সব সময় কালো মেঘের ছায়া লেগে থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৬০০ মিটার উঁচু এলাকাটিতে বৃষ্টি একটি নিয়মিত ব্যাপার। মাউন্ট বেল্লেন্দেন কেরে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮ হাজার ৬৩৬ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় ২০০০ সালে, ১২ হাজার ৪৬১ মিলিমিটার।
আপনার মতামত লিখুন :