অতিথি আপ্যায়ন বাঙালি সংস্কৃতির একটি অংশ। অতিথিকে সাদর সম্ভাষণ জানানো, সুস্বাদু খাবার পরিবেশন এবং আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সামাজিকতা রক্ষা হয়। তবে অনেক সময় অজান্তেই এমন কিছু ভুল হয় যা অতিথির অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তাই একজন ভালো আতিথেয়তা প্রদর্শনকারী হতে হলে কিছু ভুল এড়িয়ে চলুন।
অতিথির আগমনের প্রস্তুতি না থাকা
অনেক সময় অতিথির আগমনের আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয় না। যেমন—ঘর গোছানো, প্রয়োজনীয় বসার ব্যবস্থা করা এসব ছোট ছোট বিষয় অতিথিকে বিব্রত করতে পারে। প্রস্তুতির অভাবে অতিথি এসে অস্বস্তি অনুভব করেন।
অতিরিক্ত আনুষ্ঠানিকতা
অনেক সময় অতিথিকে স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার বদলে আমরা অতিরিক্ত আনুষ্ঠানিকতায় জড়িয়ে ফেলি। জোর করে খাবার খাওয়ানো, কড়া আচরণ বা অতি ব্যস্তভাবে সব কিছু সামলানোর চেষ্টা অতিথিকে চাপে ফেলতে পারে। আপ্যায়ন স্বতঃস্ফূর্ত এবং আন্তরিক হওয়া উচিত।
অতিথির পছন্দ-অপছন্দ না জানা
সব মানুষই আলাদা। কারো খাদ্যাভ্যাস, ধর্মীয় বিধিনিষেধ বা কোনো নির্দিষ্ট খাদ্যে অ্যালার্জি থাকতে পারে। অথচ আমরা প্রায়ই না জেনেই যেকোনো খাবার পরিবেশন করি। এতে অতিথি হয়তো অখুশি হলেও সরাসরি কিছু বলেন না।
সময়জ্ঞান না রাখা
অতিথি আসার পরেই রান্না শুরু করলে সেটি কেবল সময়ক্ষেপণই নয়, আতিথেয়তায় অব্যবস্থার ছাপ ফেলে। আবার অনেক দেরি করে অতিথিকে খাবার পরিবেশন করাও রুচিবিরুদ্ধ ও অস্বস্তিকর। সময়জ্ঞান একটি বড় গুণ, বিশেষ করে অতিথি আপ্যায়নে।
একান্ত সময় না দেওয়া
অতিথি এলেও যদি আমরা মোবাইলে ব্যস্ত থাকি, বারবার ঘর থেকে বেরিয়ে যাই বা অন্য কাজে মনোযোগ দিই, তাহলে অতিথি অপমানিত বোধ করেন। অতিথিকে সময় দেওয়া, কথা বলা এবং মনোযোগ দেওয়া তাকে স্বস্তি দেয়।
প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা
ঘর অপরিচ্ছন্ন, বাথরুম ব্যবহারের অনুপযোগী বা খাবার পরিবেশে অগোছালো হলে অতিথির মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পরিপাটি পরিবেশ, পরিষ্কার বাসনপত্র এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারই একজন আদর্শ আতিথেয়তার নিদর্শন।
অতিথির ব্যক্তিগত বিষয়ে অনুচিত প্রশ্ন
অনেকেই অতিথি এলেই ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে থাকেন—বিয়ে কবে, সন্তান কই, বেতন কত, চাকরির খবর কী ইত্যাদি। এসব প্রশ্ন অনেক সময় অপমানজনক হতে পারে। এমন প্রশ্ন করা উচিত নয় যেগুলো অতিথিকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে।
শিশুদের আচরণে নজর না রাখা
অতিথির সামনে শিশুদের অপ্রত্যাশিত আচরণ অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি করে। যদি সন্তান চিৎকার করে, বারবার অতিথির কথা কেটে যায় বা দুষ্টুমি করে, তবে অভিভাবক হিসেবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
খাবার নির্বাচন ও পরিমাণে ভুল
কিছু লোক খুব কম খাবার পরিবেশন করেন, আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত আইটেম দিয়ে ফেলেন যা অপচয়ের কারণ হয়। অতিথির সংখ্যা অনুযায়ী পরিমাণ নির্ধারণ এবং ভারসাম্যপূর্ণ মেনু নির্বাচন করা বুদ্ধিমানের কাজ।
বিদায় জানানোর অবহেলা
অনেক সময় অতিথি চলে যাওয়ার সময় আমরা হয়তো ব্যস্ত থাকি কিংবা তেমন করে বিদায় জানাই না। অথচ একটি আন্তরিক বিদায় অতিথির মনে ভালো অনুভূতি তৈরি করে। দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়া, ভালোবাসার কিছু কথা বলা আন্তরিকতা বাড়িয়ে দিতে পারে।