ভাই-বোনের সম্পর্ক জন্মসূত্রে তৈরি হয়। কিন্তু সেই সম্পর্ক চিরকাল মধুর থাকবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। ছোটবেলার খুনসুটি, একসঙ্গে বেড়ে ওঠা, আনন্দ ভাগাভাগি করার মধ্যেও অনেক সময় তিক্ততার ছায়া পড়ে যায়। বিশেষ করে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মতের অমিল, দায়িত্বের সংঘর্ষ, পারিবারিক পরিস্থিতি বা ব্যক্তিগত ইগো এই সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তবে ইচ্ছে থাকলেই চাইলেই আন্তরিকতার মাধ্যমে এই তিক্ততা কমিয়ে সম্পর্ককে আগের মতো ঘনিষ্ঠ করে তোলা যায়।
কেন বাড়ে দূরত্ব
ভাই-বোনের মধ্যে মতের অমিল ও ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে অন্যতম কারণ। প্রত্যেক মানুষের চিন্তা, মতামত, চাওয়া-পাওয়া আলাদা। ভাই-বোনের মাঝেও এই ভিন্নতা থেকে ঝগড়া বা মান-অভিমান তৈরি হয়। অনেক সময় কথার ভিন্ন ব্যাখ্যা নিয়েও ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে।
সম্পত্তি বা পারিবারিক দায়িত্ব নিয়েও দ্বন্দ্ব বাড়ে।
বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক ভাই-বোনদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন, মা-বাবার যত্ন, অর্থনৈতিক সহায়তা নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়। এই বিষয়গুলো সম্পর্ককে তিক্ত করে তুলতে পারে।
অনেক সময় তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপেও সম্পর্কে দূরত্ব আসে। পরিবার, জীবনসঙ্গী বা অন্য আত্মীয়দের মন্তব্য বা আচরণ ভাই-বোনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে দিতে পারে।
ইগো ও ক্ষমার অভাবেও দূরত্ব বাড়তে থাকে। অহংকার, ‘আমি কেন আগে বলব?’ এই মানসিকতা ভাই-বোনের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে। কেউই অন্যকে আগে ক্ষমা করতে চায় না, আর তাতেই ক্ষোভ বাড়ে।
ভাই-বোনের সম্পর্কের এই তিক্ততা কমাতে আন্তরিক হতে হবে। এর জন্য যা করতে হবে_
খোলামেলা কথা বলুন
অনেক ভুল বোঝাবুঝির মূল কারণই হলো—না বলা কথা। মুখোমুখি বসে স্পষ্টভাবে, বিনয়ের সঙ্গে নিজের অনুভূতি বললে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। চেষ্টা করুন অভিযোগ না করে অনুভূতি প্রকাশ করতে।
পুরোনো স্মৃতি মনে করান
একসঙ্গে কাটানো আনন্দময় সময়ের কথা মনে করিয়ে দিন। ছোটবেলার মজার মুহূর্ত, একসঙ্গে দেখা সিনেমা বা ছাদে ঘুড়ি ওড়ানোর গল্প নতুন করে আপনাদের কাছে আনতে পারে।
ক্ষমা চাইতে ও ক্ষমা করতে শিখুন
"সরি" বলতে শিখলে সম্পর্ক অনেক সহজ হয়। আর ভাই-বোনের মাঝে তো ‘ক্ষমা’ হওয়া উচিত আরও বেশি স্বাভাবিক। অভিমান করে দূরে থাকা নয়, বরং ক্ষমা করে কাছাকাছি আসা জরুরি।
সমতা বজায় রাখুন
ভাই হোক বা বোন, কেউ যেন বেশি দায়িত্ব নিয়ে ক্লান্ত না হয়ে পড়ে বা কেউ যেন পুরোপুরি দায়িত্বহীন হয়ে না পড়ে। দায়িত্ব ভাগাভাগি করুন এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখুন।
তৃতীয় পক্ষের মন্তব্যে কান দেবেন না
আপনার ভাই বা বোন সম্পর্কে যদি কেউ নেতিবাচক কিছু বলেন, সরাসরি ভাই-বোনের সঙ্গে কথা বলুন। কোনো মত গড়ে তুলবেন না শুধুমাত্র শোনা কথার উপর ভিত্তি করে।
একসঙ্গে সময় কাটান
যতই ব্যস্ততা থাকুক, মাঝে মাঝে একসঙ্গে খেতে বসা, বেড়াতে যাওয়া, কোনো পারিবারিক উৎসব উদ্যাপন করলে সম্পর্ক আরও গাঢ় করে।
প্রতিযোগিতার মনোভাব বাদ দিন
কে বেশি সফল, কে বেশি পছন্দের—এই তুলনার মনোভাব বাদ দিয়ে একে অপরের সাফল্যে গর্বিত হোন। ভাই-বোন প্রতিযোগী নয়, বরং সহযোগী হয়—এই ভাবনা রাখুন।
সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করুন
ভাই-বোনের সম্পর্ক শুধু রক্তের নয়, এটি আবেগ, স্মৃতি, ভরসা ও নির্ভরতার। জীবনে বাবা-মা না থাকলেও ভাই বা বোন পাশে থাকলে জীবন অনেক সহজ হয়। তাই সম্পর্কের খুঁত না ধরে, সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য একচুল নমনীয় হওয়াটাই শ্রেয়।