মাথায় অসহ্য চুলকানি আর কোনোকিছু বিচরণ করছে এরকম অনুভব হলেই বুঝবেন মাথায় উকুন হয়েছে। নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই সমস্যা। তবে নারীদের চুলে উকুনের সংক্রমণ বেশি হয়। স্কুল-পড়ুয়া ছাত্রীদের মধ্যেই এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এর পেছনে কারণও রয়েছে। মাথায় উকুন আসার পর ৭-১০ দিনের মধ্যে ডিম পাড়ে। এরপর ১০ দিন সময় লাগে উকুন বড় হতে। একসঙ্গে ডিম থেকে উকুন হওয়ার কারণে অনেক দ্রুত চুলে ছড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে যতই উকুন-নাশক প্রসাধনী ব্যবহার করেন, উকুন বারবার ফিরে আসে। আর এই প্রসাধনীতে নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য থাকার কারণে চুলেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়। চলুন উকুন কেন হয় ও দূর করা যায় কীভাবে সেটি জেনে নিই-
উকুন হওয়ার কারণ
- মাথা অপরিষ্কার থাকলে।
- ভেজা চুল উকুন-নাশক অভ্যাস থাকলে।
- ভেজা চুল অনেকক্ষণ বাঁধা অবস্থায় থাকলে।
- অন্যের চিরুনি, তোয়ালে, গামছা ব্যবহার করলে।
- অন্যের মাথা থেকে উকুন চলে এলে।
ভিনেগার
ভিনেগার দিয়ে খুব সহজে উকুন দূর করা সম্ভব। সমান পরিমাণ পানি ও ভিনেগার একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগান। এবার এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে উকুন মরে যাবে। আপনি চাইলে ভিনেগারের সঙ্গে অলিভ অয়েলও মিশিয়ে নিতে পারেন।
অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েলের গন্ধ উকুন সহ্য করতে পারে না। ফলে তারা মারা যায় এবং তারপর চিরুনি দিয়ে খুব সহজে উকুন মাথা থেকে দূর করা যায়। আপনাকে সারারাত চুলে অলিভ অয়েল লাগিয়ে রাখতে হবে। একটি কাপড় দিয়ে চুল মুড়িয়ে রাখুন। এভাবে সারা রাত রাখুন। তারপর উকুন আসার চিরুনি দিয়ে ভালো করে চুল আঁচড়িয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এইভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন।
এসেনশিয়াল অয়েল
এসেনশিয়াল অয়েল, টি ট্রি অয়েল, ল্যাভেন্ডার অয়েল ও মৌরির তেল উকুন দূর করতে বেশ কার্যকর। ভেজিটেবল অয়েলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে মাথার ত্বকে ও চুলে লাগান। এবার একটি তোয়ালে দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন। এক ঘণ্টা পর ভালো করে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। উকুন দূর হয়ে যাবে।
ভেজা চুল আঁচড়ানো
প্রথমে চুল পানি দিয়ে ভিজিয়ে কন্ডিশনার লাগান। এবার চিকন চিরুনি দিয়ে মাথার ত্বক থেকে চুলের আগা পর্যন্ত আঁচড়ান। কয়েকবার এভাবে ভেজা চুল আঁচড়ান। দেখবেন, মাথার উকুন অনেকটা দূর হবে।
নারকেল তেল
নারকেল তেল উকুন দূর করার ক্ষেত্রে নারকেল তেল অনেক ভালো কাজ করে থাকে। নারকেল তেল উকুনের শ্বাসরোধ করে দেয় ফলে উকুন বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। ৩ টেবিল চামচ নারকেল তেল এবং খুব সামান্য কর্পূর মিশিয়ে নিন। তেলটি মাথায় ভালো করে ম্যাসাজ করুন। এরপর শাওয়ার কাপ দিয়ে মাথা ঢেকে দিন। পরের দিন সকালে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
পেঁয়াজের রস
পেঁয়াজের রসে সালফার আছে যা উকুন দূর করে থাকে। ৪/৫ টা পেঁয়াজের রস করে নিন। এরপর তা মাথায় ভালো করে লাগিয়ে নিন। ২ ঘন্টা পর কুসুম গরম পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। চুল শুকানোর পর চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান, দেখবেন উকুন চিরুনিতে চলে এসেছে।
রসুন
রসুনের গন্ধ উকুন সহ্য করতে পারে না। ১০ কোয়া রসুন নিন। ভালো করে খসা ছাড়িয়ে গ্রাইন্ড করে বা বেটে নিন। এতে যোগ করুন ২ চা চামচ লেবুর রস। ভালো করে মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে মাথার ত্বকে ভালো করে ঘষে লাগিয়ে নিন। এভাবে ৩০ মিনিট পেস্টটি চুলে লাগিয়ে রাখুন। এরপর কুসুম গরম পানিতে চুল ধুয়ে নিন। মুক্তি পেয়ে যাবেন।
নিম
নিম হলো প্রাকৃতিক প্রতিষেধক, যেটি উকুন দূর করতে অনেক বেশী কার্যকর। নিমের পেষ্ট করে সেটি চুল আর মাথার তালুতে লাগান। নিমের তেল ব্যবহারেও চুল থেকে উকুন দূর করা সম্ভব। ২ টেবিল চামচ পাতি লেবুর রস, ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ২ টেবিল চামচ নিমপাতার রস একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেনড করে তারপর মাথার চুলের গোড়ায় গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন ১ ঘণ্টা । ১ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগান ।
বেবি অয়েল
প্রথমে বেবি অয়েল দিয়ে মাথা ভালো করে ধুয়ে নিন। তারপর সামান্য পরিমানে কাপড় ধোয়ার পাউডার দিয়ে আবার মাথা ধুয়ে ফেলুন। এরপর মাথায় সাদা ভিনেগার দিয়ে শাওয়ার ক্যাপ পরে ঘুমিয়ে পরুন। সকালে উঠে দেখবেন আপনার সব উকুন শেষ।