• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২, ০৭ মুহররম ১৪৪৬

হাজার হাজার কুমিরের বসবাস পাহাড়ে


কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৫, ১০:৪০ এএম
হাজার হাজার কুমিরের বসবাস পাহাড়ে
ছবি : সংগৃহীত

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড়ে গড়ে উঠেছে দেশের একমাত্র কুমির প্রজনন খামার। প্রায় তিন হাজার কুমির রয়েছে এই খামারে, যার মধ্যে এক হাজারের বেশি রপ্তানিযোগ্য হলেও আইনি জটিলতায় তা আটকে আছে এক যুগ ধরে। দর্শনার্থীরা কুমির দেখতে এলেও খামারের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার পাহাড়চূড়ায় সত্যিই দেখা মিলবে কুমিরের। এক-দুটি নয়, কয়েক হাজার কুমিরের বসবাস এখানে।

তুমব্রুর পাহাড়চূড়ায় রয়েছে দেশের একমাত্র বাণিজ্যিক কুমিরের খামার। ২৫ একরের ওই একটি খামারে আছে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩ হাজার কুমির। রাস্তার পাশে একাধিক বেষ্টনীতে দেখা মেলে বাচ্চা কুমিরের লাফালাফি। কিছু বেষ্টনীতে গাছের গুঁড়ির মতো নিশ্চল পড়ে আছে কুমিরের দল। কিছু কুমির মুরগি খেতে ব্যস্ত। পাহাড়ের নিচে একাধিক জলাধারেও রয়েছে কুমির। খামারে নিয়মিত ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। ঘুরে ঘুরে কুমির দেখেন। কুমিরের জীবনচক্র জানার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ পাহাড়চূড়ায় খামার গড়ার ইতিহাস, কুমিরের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।

খামার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এপ্রিল মাস থেকে কুমিরের প্রজনন মৌসুম শুরু হয়। এখনো মৌসুম চলছে। এর মধ্যে ডিম ফুটে বেশ কিছু ছানারও জন্ম হয়েছে। এ মৌসুমে প্রায় ২০০টি ছানার জন্ম হয়েছে। আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত আরও ১৫০টি ছানা হবে। সব মিলিয়ে খামারে কুমিরের সংখ্যা দাঁড়াবে তিন হাজারের কাছাকাছি।

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকাটি লেক আর পাহাড়ঘেরা। এমন মনভোলানো নিসর্গের মধ্যে ২০০৮ সালে ২৫ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠা পায় দেশের একমাত্র কুমির প্রজনন খামার। নাম ‘আকিজ ওয়াইল্ডলাইফ ফার্ম লিমিটেড’।

২০১০ সালে ৫০টি কুমির দিয়ে শুরু খামারের প্রজনন কার্যক্রম। এর ছয়-সাত বছরের মাথায় জন্ম নেয় দুই হাজারের বেশি কুমির। খামারে এখনো রপ্তানি উপযোগী এক হাজারের বেশি কুমির পড়ে আছে, কিন্তু আইনি জটিলতায় এক যুগের বেশি সময়ে একটি কুমিরও বিদেশে রপ্তানি করা যায়নি। তাতে খামারটি লাভের মুখ দেখছে না।

পাহাড়চূড়ায় পাকা দেয়ালের সারিবদ্ধ ৮-৯টি কক্ষে (বেষ্টনীতে) রাখা আছে ১ হাজারের বেশি কুমির। বেশির ভাগ ছানা। ওজন ৫ থেকে ১০ কেজি। একটি কক্ষে ১০০ থেকে ২০০টি কুমিরছানা থাকছে গাদাগাদি করে। কয়েকটি কক্ষে বাচ্চার সঙ্গে দেখা মেলে বড় কুমিরও। কক্ষগুলোর ওপরে ছাউনি নেই। দর্শনার্থীরা বেষ্টনীর বাইরে দাঁড়িয়ে কুমিরের দৌড়ঝাঁপ দেখেন। প্রজনন মৌসুম বলে গত এপ্রিল থেকে দর্শনার্থীর সমাগম সীমিত রাখা হয়েছে।

খামার দেখতে হলে ৫০ টাকার টিকিট কাটতে হয়। টিকিটের গায়ে লেখা থাকে, ‘কুমির হিংস্র প্রাণী, তাই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। ইট, পাথর, পানির বোতল ইত্যাদি নিক্ষেপ করবেন না। এই টিকিট ৩০ মিনিট অবস্থানের জন্য প্রযোজ্য।’


খামার কর্তৃপক্ষ জানায়, সরকারের অনুমতি পেলে কুমিরগুলো রপ্তানি করা হবে। রপ্তানির জন্য কুমিরের ওজন ২০ থেকে ২৫ কেজি এবং লম্বায় ৫ ফুট হতে হয়। খামারে এমন কুমিরের সংখ্যা এখন ১ হাজারের বেশি। এগুলো বিদেশে রপ্তানির উপযোগী হয়েছে। বিদেশে কুমিরের প্রতি কেজি মাংস বিক্রি হয় ৩০ ডলারে। সে হিসাবে প্রতিবছরই প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সুযোগ রয়েছে।

Link copied!