শৈশব, কৈশোর আর বার্ধক্যের মাঝে বয়ে যাওয়া সোনালি সময়কে যৌবন বলে। যৌবন মানব জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। একজন মানুষের উত্থান-পতন নির্ভর করে যৌবনের শ্রম-সাধনা, সংযম-অসংযমের ওপর। যৌবনে পরিশ্রম করলে, সংযম-সঞ্চয় করলে বার্ধক্যে দুশ্চিন্তামুক্ত সুন্দর জীবন কাটানো সম্ভব। অযত্ন-অবহেলা আর অসংযমে যৌবন পার করলে বুড়ো বয়সে কষ্টের বোঝা কাঁধে তুলতেই হবে। অসুন্দরভাবে পার করতে হবে জীবনের শেষ দিনগুলো।
বার্ধক্যের অসহায়ত্ব সম্পর্কে বিশ্বকবি আল্লামা শেখ সাদির অমর রচনা ‘গুলিস্তাঁ’ থেকে একটি ঘটনা বলছি। দামেস্ক সফরের সময় এক যুবক শেখ সাদির মজলিসে এসে বলল, আপনাদের মাঝে ফার্সি ভাষা জানেন কে? অন্যরা সাদিকে দেখিয়ে দিলেন। যুবক বলল, একশ’ পঞ্চাশোর্ধ এক বৃদ্ধের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। ফার্সি ভাষায় সে কি যেন বলছে। হে জ্ঞানী! আপনি আমার সঙ্গে চলুন। কিছু হাদিয়াও পেতে পারেন।
সাদি বললেন, আমি তার শিয়রে বসামাত্রই সে বলে উঠল, ‘একদা আমি কত যে বলেছি, আমার ইচ্ছাই পূরণ হবে। হায়! এখন আমার নিশ্বাস বন্ধ হতে চলছে। বড়ই আফসোস! আমার দীর্ঘ জীবনের জন্য। এ জীবনে কত বর্ণালি সময় পার করেছি। বর্ণাঢ্য জীবন কাটিয়েছি। একসময় প্রাণভরে তৃপ্তিসহ আহার করেছি আর বলেছি, ব্যস! আর প্রয়োজন নেই।
কিন্তু আজ সে যৌবন নেই। বর্ণালি সময় ধূসর হয়ে গেছে।’ হে সময়ের সাধক যুবক বন্ধু! সময়ের মাঝে আল্লাহকে পাওয়ার সাধনা কর। নয়তো জীবনসূর্যের ডুবন্ত বেলায় আফসোস করে প্রাণবায়ু ত্যাগ করতে হবে। বিজ্ঞ কবি শেখ সাদি বলেন, ‘সত্তোর্ধ্ব বৃদ্ধ কখনো যুবকের মতো আল্লাহর সাধক হতে পারে না। যেমনিভাবে জন্মান্ধ ব্যক্তি স্বপ্নেও চোখে দেখে না।’
বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পাই যুবকদের চেয়ে বৃদ্ধরাই বেশি ইবাদত গোজার। আমাদের সমাজের দায়িরা যুবকদের নিয়ে ভাবেন না। তরুণদের ধর্মের নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনতে আলেম এবং তাবলিগের ভাইদের প্রচেষ্টা কম। তারচেয়ে বড় কথা হলো, তরুণদের ধর্মমুখী করে রাখার জন্য উপায় নেই বললেই চলে।
তরুণদের মধ্যে অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যদি ১৫০টি স্যাটেলাইট চ্যানেল থাকে তবে তরুণদের ধর্মমুখী করার জন্য ১০টি চ্যানেলও নেই কেন? কেন ফেসবুক, টুইটার আলেমদের চিন্তা থেকে তৈরি হয়নি? পবিত্র কুরআন নাজিলের সময় তরুণরা কবিতা, সাহিত্য ও গানে মত্ত ছিল। আল্লাহতায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য নাজিল করে সমকালীন কবিতা, সাহিত্যকে অকার্যকর করে দিলেন। তরুণরা কুরআনের প্রতি হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
কাফেররা কুরআন থেকে তরুণদের দূরে রাখার জন্য গান-বাদ্যের ব্যবস্থা করল। কুরআনের ভাষায়, ‘কাফেররা বলে, তোমরা এ কুরআন শোনবে না এবং এটা আবৃত্তি করার সময় হট্টগোল-শোরগোল সৃষ্টি করবে। তাহলে তোমরা বিজয়ী হবে। (সূরা হামিম সাজদাহ, ৪১:২৬।) আজকের তরুণ আগামীর নেতৃত্ব। তাই তরুণদের টার্গেট করে তাবলিগ করতে হবে। দেশের সব তরুণ কুরআনমুখী হলে অপরাধ শূন্যের কোটায় চলে আসবে।
আমাদের দেশে অনেক দায়ী নিজের সন্তানদের দাওয়াতের আওতায় আনতে পারেন না। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আপনি আপনার পরিবারকে দ্বীনের আওতায় আনুন। আল্লাহ বলেছেন, ‘ওহে! তোমরা যারা ইমান এনছো, নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।’ (সূরা তাহরিম, ৬৬:৬।) আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করেন, আমরা যেন তরুণদের নিয়ে ভাবতে পারি।
লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ত্ব