• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২, ০৭ মুহররম ১৪৪৬

জুলাইয়ের বিপ্লবে জেন জি‍‍`রা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম
জুলাইয়ের বিপ্লবে জেন জি‍‍`রা
ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান বিশ্বে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধারায় ‘জেনারেশন জেড’ বা জেন জি প্রজন্ম একটি বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রযুক্তিনির্ভর এই প্রজন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন। তারা এখন শুধু দর্শক নয়, বরং নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সক্রিয় চালিকাশক্তি। এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো জুলাইয়ের বিপ্লব। এটি একটি প্রতীকী নাম হলেও এর পেছনে বাস্তব ও তাৎপর্যপূর্ণ আন্দোলনের চিত্র অবাক করেছে বিশ্বকে।

জুলাইয়ের বিপ্লব কী
‘জুলাইয়ের বিপ্লব’ বলতে সেই আন্দোলন বা গণজাগরণকে বোঝায় যা মূলত জুলাই মাসে তরুণ প্রজন্মের (বিশেষত জেন জি) সক্রিয় অংশগ্রহণে সংঘটিত হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে সামাজিক অন্যায়, রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচার, দুর্নীতি, পরিবেশ ধ্বংস বা গণতন্ত্র সংকটের বিরুদ্ধে জেন জি প্রজন্মের জোরালো প্রতিবাদ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ।

মধ্যপ্রাচ্যে, ল্যাটিন আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের কিছু দেশে ২০২০-২০২3 সময়কালে ঘটে যাওয়া জুলাই মাসের গণআন্দোলনে জেন জি’র শক্তিশালী ভূমিকা ছিল। আর বাংলাদেশে সেই আন্দোলন হয় ২০২৪ সালের জুলাইতে। জুলাইয়ের চেতনায় নতুন করে দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করে জেন জি প্রজন্ম।

জেন জি প্রজন্ম কে?
জেন জি হলো সেই প্রজন্ম যারা জন্মসূত্রে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ব্যবহার করে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বদা সক্রিয়, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ, সামাজিক সচেতনতায় উচ্চমার্গে আগ্রহী, রাজনৈতিকভাবে আরও বেশি উদার বা সহিষ্ণু, জলবায়ু পরিবর্তন, লিঙ্গ সমতা, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানে বিশ্বাসী। 

জুলাইয়ের বিপ্লবে জেন জি প্রজন্মের ভূমিকা

সোশ্যাল মিডিয়া চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহার

জেন জি প্রজন্ম তাদের প্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে ফেসবুক, টিকটক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ নানা প্ল্যাটফর্মে আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়। তারা মুহূর্তেই কোনো অন্যায়ের খবর ভাইরাল করতে পারে। জুলাইয়ের বিভিন্ন বিক্ষোভে সোশ্যাল মিডিয়ার লাইভ, হ্যাশট্যাগ আন্দোলন, গ্রাফিক ডিজাইন ও তথ্যচিত্র ব্যবহার ছিল লক্ষ্যণীয়।

আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ

জেন জি শুধু আন্দোলনে অংশ নেয়নি, তারা অনেক ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব দিয়েছে। তারা প্ল্যাকার্ড তৈরি, প্রতিবাদ সংগঠিত, বক্তব্য প্রদান—সবকিছুতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। অনেক তরুণ-তরুণী নিজের জীবন বাজি রেখে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে।

সৃষ্টিশীল ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ

এই প্রজন্ম পুরোনো সহিংস পন্থা নয়, বরং শিল্প, সংগীত, গ্রাফিতি, কনসার্ট বা সৃজনশীল প্রতিবাদের মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য পৌঁছে দিতে পছন্দ করে। এতে সাধারণ জনগণ সহজে আকৃষ্ট হয় ও আন্দোলনে অংশ নেয়।

বিষয়ভিত্তিক সচেতনতা বৃদ্ধি

জুলাইয়ের বিপ্লবের সময়ে দেখা গেছে—পরিবেশ বিপর্যয়, লিঙ্গ বৈষম্য, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, শিক্ষা সংকটের মতো ইস্যুতে জেন জি’র জোরালো অবস্থান। তারা তথ্যপ্রমাণসহ ইস্যু তুলে ধরে এবং সমাধানের দাবি জানায়।

সাংবাদিকতার বিকল্প প্ল্যাটফর্ম তৈরি

জেন জি প্রজন্ম ‘সিটিজেন জার্নালিস্ট’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা মোবাইল দিয়ে ভিডিও ধারণ করে, ব্লগ লিখে, ফ্যাক্ট-চেক করে একটি নিরপেক্ষ গণমাধ্যমের কাজ করছে। প্রচলিত গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত হলেও তাদের কণ্ঠ রোধ করা কঠিন।

জুলাইয়ের বিপ্লবে জেন জি প্রজন্ম প্রযুক্তি, সৃজনশীলতা এবং ন্যায়ের প্রতি দায়বদ্ধতার মাধ্যমে এক নতুন ধরনের প্রতিবাদের ধারা তৈরি করেছে। তারা প্রমাণ করেছে, আন্দোলন শুধু রাস্তায় দাঁড়ানো নয়, বরং চিন্তা, যুক্তি ও কৌশলে সমাজ বদলে দেওয়ার সংগ্রাম।

Link copied!