যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো বিতর্কিত ক্লাস্টার বোমা রাশিয়ায় ব্যবহার করা হবে না বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ। টানা প্রায় দেড় বছর ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। এই পরিস্থিতিতে রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সবকিছু ঠিক থাকলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এ বোমা ইউক্রেনের হাতে পৌঁছাবে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
টুইটারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রেজনিকভ বলেন, “আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। অস্থায়ীভাবে দখল হওয়া অঞ্চলগুলো শত্রুমুক্ত করতে হবে। আমাদের জনগণের জীবন বাঁচাতে হবে। ইউক্রেন এই অস্ত্র শুধু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অঞ্চল দখলমুক্ত করতে ব্যবহার করবে। রাশিয়ার ভূখণ্ডে ব্যবহার করা হবে না।”
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আনাতলি অ্যান্টোনভ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, ওয়াশিংটন কিয়েভে যে প্রাণঘাতী অস্ত্র পাঠাচ্ছে, সেটা তাদের ‘নিষ্ঠুরতা ও হতাশাকে’ তুলে ধরেছে।
ইউক্রেনে ক্লাস্টার বোমা পাঠানোর পরিকল্পনায় বিরোধিতা করেছে একাধিক মানবাধিকার সংস্থা। এই সিদ্ধান্তকে বিপজ্জনক বলছেন অনেকে।
এদিকে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ১০০টির বেশি দেশে ক্লাস্টার বোমা নিষিদ্ধ। ক্লাস্টার বোমা রকেটসদৃশ একটি কাঠামোর ভেতর থাকে। এ বোমা বিমান, কামান ও রকেট লঞ্চার থেকে ছোড়া যায়। ক্লাস্টার বোমা যখন ছোড়া হয় তখন এর ভেতর থাকা ছোট ছোট বোমা ছড়িয়ে যায় এবং এগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। আর এটি আঘাত হানার পর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে মানুষকে নির্বিচার হত্যা করতে পারে।
এ ছাড়া বিস্ফোরণে ব্যর্থ হওয়া বোমাগুলোও কয়েক দশক ধরে বিপদ জারি রাখে। মূলত বেসামরিক মানুষ হতাহত হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেনকে এ বোমা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই পরিস্থিতিতে শনিবার মস্কো আবারও যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। একই সঙ্গে মার্কিন এই পদক্ষেপকে ওয়াশিংটনের ‘রুশবিরোধী’ কর্মকাণ্ডের আরেকটি ‘গুরুতর’ উদাহরণ হিসেবেও বর্ণনা করেছে দেশটি।
তবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ দাবি করছেন, ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী শহরাঞ্চলে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করবে না এবং এসব বোমা শুধু ‘শত্রু বাহিনীর প্রতিরক্ষা লাইন ভেদ করতে’ ব্যবহার করা হবে।
ক্লাস্টার বোমাসংক্রান্ত কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি রাশিয়া, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র। মূলত ওই কনভেনশনে এই ধরনের অস্ত্র উৎপাদন, মজুত, ব্যবহার এবং স্থানান্তর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আগের যুদ্ধগুলোতে ক্লাস্টার বোমায় বোমার সংখ্যা ছিল বেশি। হাজার হাজার ছোট অবিস্ফোরিত বোমাগুলো তাজা অবস্থায় রয়ে যেত। ইরাক ও আফগান যুদ্ধে এই বোমা প্রচুর ব্যবহার হয়েছে। বিস্ফোরণে অনেক বেসামরিক মানুষের প্রাণ গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :