• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

৬০ হাজার কর্মী নেবে জার্মানি, চাকরি খুঁজতে এক বছর থাকার অনুমতি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৩, ১১:৩১ এএম
৬০ হাজার কর্মী নেবে জার্মানি, চাকরি খুঁজতে এক বছর থাকার অনুমতি

কয়েক বছর ধরে কর্মীর সংকটে ভুগছে জার্মানি। এ সংকট মোকাবিলায় অন্য দেশের দক্ষ কর্মীদের টানতে অভিবাসন আইন পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির সরকার। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা নতুন খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের মন্ত্রীসভা। জার্মান পার্লামেন্টের দুই কক্ষে পাস হলে আইনটি কার্যকর হবে।

এটি কার্যকর হলে এখন থেকে প্রতি বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে ৬০ হাজার কর্মী নেবে জার্মানি।

জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, মন্ত্রীসভায় আইনটি উপস্থাপন করেছেন শ্রমমন্ত্রী হুবার্টুস হাইল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজা।

হাইল ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, এ আইনের মূলত তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথমত; কোনো কাজে দক্ষ এবং জার্মানিতে চাকরির প্রস্তাব আছে, এমন ব্যক্তি আগের চেয়ে সহজে জার্মানিতে আসতে পারবেন। দক্ষতার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির বদলে চাকরির অভিজ্ঞতাকেও বিবেচনায় নেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত; সংশ্লিষ্ট খাতে কারও ন্যূনতম দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে এবং ডিগ্রি বা কারিগরি প্রশিক্ষণ থাকলে তিনিও চাকরি নিয়ে জার্মানিতে আসতে পারবেন। তৃতীয় ধাপে; চাকরির চুক্তিপত্র না থাকা ব্যক্তিদের জার্মানিতে এসে কাজ খোঁজার সুযোগ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়ে পয়েন্টের ভিত্তিতে আগ্রহী ব্যক্তিকে ‘অপরচুনিটি কার্ডের’ জন্য যোগ্য বিবেচিত হতে হবে। এর মধ্যে আছে শিক্ষাগত যোগ্যতা, ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতা, বয়স ইত্যাদি।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, এটি বাস্তবায়ন হলে প্রতিবছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে ৬০ হাজার কর্মীকে জার্মানিতে আনা সম্ভব হবে।

অভিবাসনের জন্য আকর্ষণীয় না হওয়ায় জার্মানির বর্তমান আইন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা চলছে। কর্মীর চাহিদা মেটাতে এ আইনের পরিবর্তন ওলাফ শলৎজের জোট সরকারের অন্যতম এজেন্ডা। এরই মধ্যে শ্রম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিলে নতুন আইনের খসড়া তৈরি করেছে। বুধবার তার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা।

অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডার এ পদক্ষেপকে জার্মানির ‘নতুন অভিবাসন নীতির পথ চলার ভিত্তিপ্রস্তর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। মন্ত্রীসভার অনুমোদনের পর টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘অর্থনৈতিক সাফল্যে অবদান রাখতে পারেন, এমন যেকোনো দক্ষ কর্মীকে (জার্মানিতে) স্বাগত।’

এদিকে জন্মহার কমে যাওয়ায় অবসরে যাওয়া বয়স্কদের শূন্যস্থান পূরণে যথেষ্ট সংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠী নেই দেশটিতে।

গত বছর জনবল ঘাটতির প্রভাবে রেল ও বিমানের সময়সূচীতেও বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। ব্যবসায়ীদের সংগঠন জার্মান চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির এক জরিপে প্রায় ৫৬ শতাংশ কোম্পানি কর্মী ঘাটতি থাকার কথা জানিয়েছে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২২ সালের শেষে শূন্যপদ ছিল প্রায় ২০ লাখ, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এই অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ শ্রম বাজারে ৭০ লাখ কর্মী ঘাটতি থাকবে বলে সতর্ক করেছেন বিশষজ্ঞরা।

দক্ষ কর্মীদের জন্য জার্মানি আগে থেকেই ‘ব্লু কার্ড’ দিয়ে আসছে। ফলে তারা দীর্ঘ মেয়াদে জার্মানি ও ইউরোপে বসবাস এবং চাকরির অনুমতি পেয়ে থাকেন। নতুন আইনে সেটি পাওয়া আরও সহজ হবে। কারও ডিপ্লোমা সনদ ও চাকরির চুক্তিপত্র থাকলে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে চার বছর পর্যন্ত থাকার এ অনুমতি পাবেন। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম বার্ষিক আয়ের যে শর্ত ছিল, তার পরিমাণ আগের চেয়ে কমানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি না থাকলেও প্রাসঙ্গিক চাকরির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ব্লু কার্ড পাবেন।

শুধু কর্মী নন, নতুন নিয়মে তাদের পরিবারও জার্মানিতে সহজে আসা ও স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাবেন। বিদেশে অর্জিত কারিগরি ডিগ্রি জার্মানিতে স্বীকৃত না হলেও অভিবাসীরা চাকরি করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের কাজের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা থাকতে হবে।

সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কারিগরি সনদ দেখানো সাপেক্ষে চাকরি খোঁজার জন্য এক বছর পর্যন্ত জার্মানিতে থাকার অনুমতি পাবেন।

Link copied!