• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সরকার গঠন করতে পারবেন ইমরান খান?


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪, ০৫:০৫ পিএম
সরকার গঠন করতে পারবেন ইমরান খান?
পাকিস্তানের নির্বাচনে চমক দেখিয়েছেন ইমারন খান। ছবি : সংগৃহীত

পাকিস্তানের ঘটনাবহুল নির্বাচনের ভোট গণনা শেষ। বিলম্বে হলেও সব আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়ে গেছে। তাতে দেখা গেছে কোনো দলই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৪ আসন পায়নি। ফলে জোট সরকারই গঠিত হতে যাচ্ছে দেশটিতে।

এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছেন ইমরান খান। পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২৬৪ আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০১ আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যারা ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থিত প্রার্থী। এরপরই পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৫ আসনে, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪ ও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম) ১৭ আসনে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য দল পেয়েছে ১৭টি আসন।  

সরকার গঠনে স্বভাবতই সবচেয়ে এগিয়ে ইমরান খান। শনিবারই পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনে ইমরানের দল-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবার চেয়ে এগিয়ে থাকায় তারা কেন্দ্র, পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে সরকার গঠন করবে তারা।

পিটিআইয়ের আইনজীবী উমায়ের খান নিয়াজি জানিয়েছেন, পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান কেন্দ্র, পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এদিকে দ্য ডনের তথ্য মতে, ইমরান তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নওয়াজ শরিফকে জোট সরকার গঠন করতে না দেওয়ার জন্য দেশটির ক্ষমতাশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

নওয়াজ শরিফও ইমরান খানতে পাকিস্তানের কুরসিতে বসতে দিতে নারাজ। ৭৫ আসন পাওয়া পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল-এন) সরকার গঠনের জন্য এরই মধ্যে তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। দেশটির গণমাধ্যমগুলোর দেওয়া তথ্য মতে, পিএমএল-এন বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তানের (এমকিউএম) সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে।

এক প্রতিবেদনে দ্য ডন বলেছে, পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ তার ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে সরকার গঠনের ব্যাপারে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। শনিবার পিএমএল-এন নেতারা কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে পিপিপিকে সমর্থন দেওয়া সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন।

এদিকে পিএমএল-এন মুখপাত্র মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেন, শাহবাজ শরিফ ও আসিফ আলী জারদারির মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। তবে তারা দুজনই জোট সরকার গঠনের ব্যাপারে নিজ নিজ দলের নেতাদের পরামর্শ নেবেন।

পিএমএল-এন পিটিআই কিংবা পিটিআই–সমর্থিত প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আওরঙ্গজেব বলেন, ‘পিটিআই–সমর্থিত স্বতন্ত্রদের সঙ্গে আলোচনার কোনো ইচ্ছা পিএমএল-এনের নেই।

এদিকে অন্য দুই দলের এমন প্রকাশ্য তোড়জোড়ের মধ্যে পিপিপি নিজেদের অবস্থানে অনেকটাই গোপনীয়তা বজায় রাখছে। দলটির নেতারা জানান, পিএমএল-এনের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে পিপিপি এখনো যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি। এমন কি এ নিয়ে দলের ভেতরেও আলোচনা হয়নি।

পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ডনকে বলেন, ‘ক্ষমতা ভাগাভাগি কিংবা কেন্দ্রীয় জোট সরকার গঠনের ব্যাপারে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা করিনি।’

সব মিলিয়ে নির্বাচন পরবর্তী পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। কেন্দ্রে জোট করকার গঠনে ছাড় দিতে প্রস্তুত হলেও নওয়াজ শরিফের দলের সঙ্গে কোনো সমঝোতা করবেন না ইমরান খান। অন্যদিকে নওয়াজ শরিফও তার জোট সরকারে ইমরানের দলকে ডাকবেন না। সেক্ষেত্রে দরকষাকষিতে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে পিপিপি। কিন্তু তাদের তৎপরতায় গোপনীয়তা রক্ষার প্রবণতায় নতুন রহস্যের জন্ম দিচ্ছে। এদিকে পাকিস্তানের রাজনীতির যেকোনো সিদ্ধান্তে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রবল ভূমিকা থাকে।

সবমিলিয়ে সমস্ত হিসেবনিকেশ মিলিয়ে পাকিস্তানের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই স্পষ্ট হবে। সেই সঙ্গে কে হতে যাচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী, তা-ও জানা যাবে।

Link copied!