• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ঈর্ষা নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৩, ০১:৫৮ পিএম
ঈর্ষা নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়
ছবি: সংগৃহীত

মানুষ মাত্রই নানান আবেগ অনুভূতিতে পরিপূর্ণ। আবেগ-অনুভূতি ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। তবে এরমধ্যে ভালো অনুভূতি যেমন থাকে তেমনি খারাপ অনুভূতিও থাকে। খারাপ অনুভূতি সবসময়ের জন্যই খারাপ বৈ ভালো কোনো ফল বয়ে আনবে না। তেমনই একটি আবেগের নাম হলো ঈর্ষা। ঈর্ষা একটা নেতিবাচক অনুভূতি যেখানে একজন ব্যক্তি তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতির কারণে কাছের মানুষের অমনোযোগিতা, ভালোবাসার ঘাটতি বা প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলার শঙ্কায় ভুগে থাকেন। এমন অনুভূতি মাঝেমধ্যে হওয়া স্বাভাবিক। তবে নিয়মিত অনুভব করা স্বাস্থ্যকর নয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঈর্ষা আসলে কী এবং এটিকে কীভাবে আয়ত্তে রাখবেন।

ঈর্ষা ও হিংসার মধ্যে পার্থক্য
যদিও ঈর্ষা ও হিংসা- দুই অনুভূতিই নেতিবাচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে এ দুটি শব্দের অর্থ সম্পূর্ণ আলাদা। হেলথ ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঈর্ষা প্রধানত প্রিয় ব্যক্তিকে হারানোর বা ভালোবাসা কমে যাওয়ার ভয়ের কারণে হয়ে থাকে। এর কারণ হলো প্রিয় ব্যক্তির মনোযোগ বা গুরুত্ব লাভ করা। সাধারণত, প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমন অনুভূতি দেখা যায়। তবে কেবল প্রেম নয় বরং কাছের মানুষজন বা সুসম্পর্ক আছে এমন সম্পর্ক, যেমন- বাবা-মা ও সন্তান, বন্ধুত্ব, সহকারী এদের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা হয়ে থাকে।
মনে রাখতে হবে ঈর্ষা কমপক্ষে তিনজন ব্যক্তি মধ্যেই হয়ে থাকে। অন্যদিকে, হিংসা বলতে ব্যক্তির এমন অনুভূতিকে বোঝায় যেখানে সে অন্য সকলের প্রতি হিংসা অনুভব করেন। অন্যের অর্জন, পেশাদারিত্ব, ভালো গুণ বা ক্ষমতা ইত্যাদির প্রতিহিংসা পোষণ করেন। এক্ষেত্রে হিংসুক ব্যক্তি নিজের ছাড়া অন্য সকলের প্রতি একই হিংসার মনোভাব পোষণ করেন।

ঈর্ষাবোধ করার কারণ
ঈর্ষাবোধ সম্পূর্ণ ব্যক্তি নির্ভর। তবে সাধারণ ক্ষেত্রে দেখা যায় পরিবেশগত কারণে অনেকেই ঈর্ষান্বিত হতে পারে। যেমন- কোনো ব্যক্তি যদি অনিরাপদবোধ করেন এবং একা থাকতে ভয় পান, আত্ম সংযম কম থাকে তাদের মধ্যে অন্যান্যদের তুলনায় ঈর্ষা প্রবণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। এছাড়াও যেসব ব্যক্তির সঙ্গী অসৎ বা আগে তাদের খারাপ সম্পর্কের অভিজ্ঞতা রয়েছে বা কেউ তাদেরকে ঠকিয়েছে এমন ক্ষেত্রে সম্পর্কের তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশের ফলে ঈর্ষান্বিত হতে পারেন। 
গবেষকরা মনে করেন, ঈর্ষা এমন একটি অনুভূতি যেখানে কেউ তার সঙ্গীকে বোঝাতে চায় যে, তাদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কে অন্য কেউ ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। ঈর্ষা অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করার মূল চাবিকাঠি হিসেবেও কাজ করে। বিশেষ করে আপত্তিজনক সর্ম্পকের ক্ষেত্রে। শুরুর দিকে ঈর্ষাকে ভালোবাসার মূল বলে মনে হলেও, পরে সেটা নিয়ন্ত্রণ প্রবণতায় গিয়ে ঠেকে।

লক্ষণ
ঈর্ষার সাধারণ লক্ষণগুলো হলো, অস্বস্তি, কষ্ট পাওয়া এবং বিশ্বাস হারিয়ে ফেলা। ঈর্ষান্বিত ব্যক্তির মুখ দেখতে রাগী বা দুঃখী ব্যক্তির মতো হয়। কারণ ঈর্ষা-কে এমন আবেগ হিসেবে ধরা হয় যেখানে রাগ, দুঃখ, ভয় বা অবাক হওয়ার মতো নানান বিষয়ের যোগ রয়েছে। ঈর্ষাকে ‘প্যাথলজিক্যাল’ বিষয় হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে। সেটা যদি সমাজ স্বীকৃত হয়। 
এই পরিস্থিতিতে ঈর্ষা অনেক ক্ষেত্রে আবেগপ্রবণ ও বিভ্রান্তিকর হতে পারে। প্রেমের ঈর্ষার ক্ষেত্রে অনেক সময় নারী-পুরুষের মধ্যে মারামারি নিজের ক্ষতি করা, এমনকি হত্যা পর্যন্ত গড়াতে পারে। প্রেমের ক্ষেত্রে ঈর্ষান্বিত হয় এমন ব্যক্তিরা মনে কষ্ট ও অস্বস্তিতে ভোগেন। 
তারা সবসময় মনে করেন যে, তাদের সঙ্গী তাদের প্রতি সৎ নন। অসততার কোনো প্রমাণ না থাকার পরেও তারা সঙ্গীকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেন না। আপত্তিকর সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঈর্ষান্বিত ব্যক্তিরা সাধারণত রাগ পোষণ করেন এবং সঙ্গীকে বরাবরই তাদের সততা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। তারা নিয়মিত সঙ্গীকে নজরদারির ওপর রাখেন এবং নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালায়।

ঈর্ষা নিয়ন্ত্রণের উপায়
সুস্থ সম্পর্কের প্রধান শর্ত হলো সততা এবং খোলামেলা যোগাযোগ। ঈর্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েকটি কৌশল জানা থাকা প্রয়োজন। প্রথমেই বড় শ্বাস গ্রহণ করতে হবে এবং মনে করতে হবে যে, এটা একটা অনুভূতি। আর বাস্তবিক ক্ষেত্রে আপনি কেমন আচরণ করবেন তা ঠিক করার ক্ষমতা আপনার আছে। 

এমন অনুভূতি হলে তার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। তবে সেটা নিয়ে বসবাস করা যাবে না। যদি মনে হয় সঙ্গী আপনাকে ঠকাচ্ছে তাহলে সেই ধারণা মাথায় জাল বিস্তার করতে থাকে। সেক্ষেত্রে সঙ্গী আপনাকে ঠকাচ্ছে না এমন প্রমাণ খুঁজে বেড়াতে হবে। 

মনে রাখতে হবে ঈর্ষা করে কোনো ভালো ফলাফল আসে না। বরং এতে সম্পর্ক আরও নষ্ট হয়। তাই যদি এমন অনুভূতি হয়েই থাকে সেক্ষেত্রে নিজের বা সম্পর্কের ক্ষতি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Link copied!