• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মানসিক চাপ শরীরে যেসব প্রভাব ফেলে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৩, ০৪:০৩ পিএম
মানসিক চাপ শরীরে যেসব প্রভাব ফেলে

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকলে তা শরীরেও প্রভাব ফেলবে এটাই স্বাভাবিক। তবে দীর্ঘসময় ধরে মানসিক চাপে ভুগলে শরীরে নানান দিক থেকে খুব খারাপভাবে প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, “সপ্তাহব্যাপী বা এর বেশি সময় ধরে মানসিক চাপে ভুগলে একে দীর্ঘমেয়াদি চাপ হিসেবে ধরে নিতে হবে। যেমন- অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য বেশিদিন মানসিক চাপে ভুগলে শরীর সবসময় সতর্ক থাকবে, যা থেকে দেখা দিতে পারে মানসিক ও শারীরিক সমস্যা।”

শ্বাসকষ্ট
হেল্থডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, যাদের হাঁপানি রয়েছে মানসিক চাপ থেকে তাদের এই সমস্যা আরও বাড়ে। আর যাদের নেই, তাদের মধ্যেও অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হতে দেখা যায়। কারণ মানসিক চাপে মাংস পেশিতে টান পড়ে। ফলে শ্বাস নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়।

এ ক্ষেত্রে মনোযোগের সঙ্গে নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করলে আরাম পাওয়া যায়। নাক দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ধীরে ছাড়তে হবে। ৭ সেকেন্ড ধরে নিঃশ্বাস টেনে, ৭ সেকেন্ড আটকে রেখে, ৭ সেকেন্ড ধরে ছাড়তে হবে। মনোযোগ থাকতে হবে শ্বাস প্রশ্বাসে অন্য কিছুতে নয়। আর এই পদ্ধতি পরপর ৩বার করতে হবে।

হজমে সমস্যা

মানসিক চাপে থাকলে যে ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়, সেটা হজমে সমস্যা তৈরি করে। এর মধ্যে রয়েছে কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বদহজম, ক্ষুধা হারানো, পেটফাঁপা, পেপটিক আলসার, পেট ব্যথা। এছাড়া ‘ইরিটেবল বাওল সিস্টেম’ বা আইবিএস হতে পারে। যার লক্ষণ হলো পেটব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য।

চুল পড়ার সমস্যা
মানসিক চাপ বাড়লে চুল পড়ার পরিমাণ বাড়তে পারে। চুল পাতলা হওয়ার এই বিষয়টি মানসিক চাপ থেকে বের হয়ে আসলে অনেক সময় ঠিক হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সময় লাগতে পারে ৬-৯ মাস। অনেকে দুশ্চিন্তা বা মানসিক অস্থিরতা থেকে চুল টানেন, যাকে বলা হয় ‘ট্রিকোটিলোমেনিয়া’। এই সমস্যা কাটানোর জন্য কোনো মানসিক ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিজেই সচেতন হওয়া।

হার্টের সমস্যা 
সারাক্ষণ মানসিক চাপে থাকলে রক্তচাপ বাড়ে, ফলে ধমনীতে চাপ পড়ে। যেখান থেকে হার্টের নানান সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- হাইপারটেনশন, উচ্চ কোলেস্টেরল, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি। আর এই সময় শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম না করা, ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ না খাওয়া, অতিভোজন, ধূমপান, বাজে খাদ্যাভ্যাস সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপে ভুগলে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। সেখান থেকে বাড়ে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি।

মাথাব্যথা
মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেইন দেখা দেয়। যাকে বলা হয় ‘টেনশন’য়ের মাথাব্যথা। মনে হয় মাথায় কোনো কিছু পেঁচিয়ে ধরছে। আর মাথা, কপাল ও নাকের আশেপাশে এই ব্যথা অনুভূত হয়। ওষুধ খেয়ে ব্যথা সারানোর পাশাপাশি গরম বা ঠাণ্ডা ভাপ নেওয়া, মালিশ করা বা মেডিটেশনের মাধ্যমেও উপকার পাওয়া যায়। তবে ওষুধ অবশ্যই খেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে।

খাওয়ার ইচ্ছা বেড়ে যাওয়া
অল্প সময়ের জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি হলে ক্ষুধা লোপ পায়। তবে দীর্ঘমেয়াদী চাপে ভুগলে দেহে যে কর্টিসল হরমোন নিঃসরণ হয় সেটির কারণে ক্ষুধা বা খাবার ইচ্ছে বাড়ে। আর সেকারণে মজাদার মিষ্টি ও চর্বিজাতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ জাগে। যাকে বলে ‘স্ট্রেস ইটিং’। আর খেলে ভালো লাগে বলে খাওয়ার পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকে। তাই মানসিক চাপের সময় স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতে হবে।

ঘুম কমে যাওয়া
মানসিক চাপের সময় অনেক মানুষ ঘুম অনুভব করে না, একে বলে ‘হাইপারঅ্যারাওজল’। এছাড়া ‘ইনসমনিয়া’ বা ঘুম না পাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়। স্বল্প সময়ের জন্য মানসিক চাপে ভুগলে অনিদ্রার সমস্যা হতে পারে। তবে দীর্ঘদিনের মানসিক চাপের কারণে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।

মানসিক বা শারীরিক যেটাই হোক না কোনো, এ ধরণের সমস্যার সম্মূখিন হলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হোন।

Link copied!