• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২, ০৬ মুহররম ১৪৪৬

৬ কোটি টাকার বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনলেন সালমান খান


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম
৬ কোটি টাকার বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনলেন সালমান খান
বলিউড সুপারস্টার সালমান খান। ছবি: সংগৃহীত

বলিউড সালমান খান নিজের নিরাপত্তা নিয়েও বরাবরই সচেতন। সম্প্রতি তার গাড়ির সংগ্রহে যুক্ত হয়েছে এক নতুন বিলাসবহুল গাড়ি- যা শুধু দামের দিক থেকেই নয়, প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তার দিক থেকেও অনন্য। 

তিনি কিনেছেন মার্সিডিজ-বেঞ্জ মেবাখ জিএলএস৬০০-এর একটি বুলেটপ্রুফ সংস্করণ, যার দাম গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ৬ কোটি টাকায়।

গাড়ির প্রতি সালমানের দুর্বলতা নতুন নয়। তবে এবার গাড়ি কেনার পেছনে রয়েছে নিরাপত্তার বিষয়টি। গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের পক্ষ থেকে পাওয়া লাগাতার প্রাণনাশের হুমকি তার জীবনকে করেছে ঝুঁকিপূর্ণ। সেই কারণেই আগেও একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনেছিলেন তিনি। এবার আরও উন্নত প্রযুক্তির নতুন বুলেটপ্রুফ গাড়িটি যুক্ত করলেন নিজের সংগ্রহে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩ কোটি ৪০ লাখ রুপি দিয়ে নতুন একটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন সালমান। যা কেবল দামের দিক থেকেই নয়, প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তার দিক থেকেও অনন্য।

মেবাখ জিএলএস৬০০-এর সাধারণ সংস্করণের দাম ভারতীয় বাজারে প্রায় ৩ কোটি রুপি বা বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। তবে বুলেটপ্রুফ সংস্করণে অতিরিক্ত প্রযুক্তি সংযোজন করায় এর দাম বেড়ে ৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। শুধু নিরাপত্তাই নয়, বিলাসিতার প্রতিটি উপাদান এতে রয়েছে।

এই গাড়িটি ৪.৯ সেকেন্ডে ০ থেকে ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে পৌঁছাতে পারে। আছে রিয়ার এক্সিকিউটিভ সিটিং, উন্নতমানের চামড়া দিয়ে তৈরি হয়েছে এর অভ্যন্তরীণ সজ্জা। এছাড়া প্যানোরামিক সানরুফ, কমপ্যাক্ট রেফ্রিজারেটর, বার্মেস্টার প্রিমিয়াম সাউন্ড সিস্টেমসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধা। দারুণ শক্ত বডি আর বুলেটপ্রুফ নিরাপত্তা প্রযুক্তি গাড়িটিকে করে তুলেছে আধুনিক।

দুই বছর আগে সালমানের বাবা চিত্রনাট্যকার সেলিম খানের হাতে ছেলের মৃত্যু নিয়ে উড়ো চিঠি আসার পর থেকেই সালমান নিজের নিরাপত্তা বাড়িয়েছিলেন। এরপর গেল বছর মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় এই তারকার গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বাড়ির সামনে গুলি এবং মুম্বাইয়ের বিধায়ক বাবা সিদ্দিকীকে গুলি করে হত্যা করার পর সালমানের সেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয় চোখে পড়ার মত।

সালমান যাতায়াতে বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করেন, এছাড়া ওই গাড়ির পেছনে পুলিশের একটা গাড়িও থাকে, যেখানে অস্ত্রহাতে কনস্টেবল থাকেন। বাড়ানো হয়েছে সালমানের বান্দ্রার গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তাও। এমনকি রিয়েলিটি শো ‘বিস বস’সহ সিনেমার শুটিংয়েও বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তাকর্মীর ঘোরাটোপে কাজ করেন সালমান।

এসব নিয়ে সালমানের ভাষ্য, ‘কখনও কখনও অসুবিধা হয় এই এত লোকজনকে নিয়ে চলাফেরা করতে।’

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে সালমানকে দেখা গেছে এই গাড়ির সামনের আসনে বসে ভ্রমণ করতে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বলছেন, কালো রঙের গাড়িটি সালমানের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে গেছে।

বলিউডে বিলাসবহুল গাড়ির মালিক বহু তারকা থাকলেও, দেশের মধ্যে এই নির্দিষ্ট মডেলের বুলেটপ্রুফ সংস্করণের প্রথম মালিক সালমান খানই। শুধু স্টাইল নয়, নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই দামী গাড়ি কিনেছেন তিনি। বললে বাড়াবাড়ি হবে না, সালমান খানের এই গাড়ি নতুন যুগের নিরাপত্তা ও বিলাসিতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে কৃষ্ণসার হরিণ শিকারে সালমানের নাম জড়িয়েছিল। এর ‘বদলা নিতে’ ২০১১ সালে ‘রেডি’ সিনেমার শুটিংয়ের মাঝে সালমান খানকে হত্যার হুমকি দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন লরেন্স বিষ্ণোই। কারণ বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষ কৃষ্ণসার বা চিংকার হরিণকে পবিত্র বলে মনে করে, বলতে গেলে তারা পূজা করে।

এরপর ২০১৮ সালে সালমানকে হত্যার জন্য বিষ্ণোই তার সহযোগী সম্পত নেহরাকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু সে সময় অস্ত্রের জটিলতায় পরিকল্পনা মাফিক কাজ সারতে পারেনি খুনিরা। ওই ঘটনার পর ২০২২ সালে সকালে হাঁটতে বেরিয়ে হুমকি চিঠি আসে সালমান খানের হাতে। ওই চিঠিতে সালমানের বাবা সেলিম খানকে মেরে ফেলার হুমকি ছিল।

এরপর ২০২৩ সালের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে পুরনো ‘শত্রু’ কানাডাভিত্তিক এক গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রারের কাছ থেকে ই-মেইলে খুনের ‘হুমকি’ আসে সালমানের কাছে।

গত বছরে শেষ নাগাদ সালমানকে হত্যায় বিষ্ণোইয়ের ছক বেরিয়ে আসে দিল্লি ও পাঞ্জাব পুলিশের তদন্তে। সে সময় ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জানিয়েছিল, জেলবন্দি বিষ্ণোই যে ১০ জনকে ‘খতমের তালিকা’য় রেখেছে, তাদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে সালমানের নাম।

২০২৪ সালের ১৪ এপ্রিল রাতে সালমানের বান্দ্রার ওই বাসভবনের বাইরে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়েছিল বাইকে আসা দুই ব্যক্তি। এই ঘটনায় লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র ও অন্যান্য গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২৫ লাখ রুপির বিনিময়ে বলিউডের ভাইজানকে হত্যার দায়িত্ব দিয়েছিল বিষ্ণোই গ্যাং। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কয়েক মাস ধরে এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

এর মধ্যে গেল বছর মুম্বাইয়ের শহরতলি বান্দ্রায় দশেরার বাজি ফোটানোর সময় তিনবারের বিধায়ক বাবা সিদ্দিকীকে গুলি করে হত্যা করা হলে সালমানের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। সালমানের সঙ্গে বাবা সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। বাবা সিদ্দিকীকে হত্যার দায় স্বীকার করে বিষ্ণোই গ্যাং হুমকি দেয়, বাবা সিদ্দিকীর বন্ধুরাও যেন তৈরি থাকে।

কয়েক ডজন মামলা মাথায় নিয়ে লরেন্স বিষ্ণোই বর্তমানে গুজরাটের একটি কারাগারে বন্দি আছেন, তবে তার দল মুক্তিপণের জন্য ব্যবসায়ীদের ফোন কল দিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। বিষ্ণোইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী রোহিত গোদারা এর আগে দাবি করেছিলেন, সালমান খানের যে কোনো বন্ধুই তাদের চোখে ‘শত্রু’ হিসেবে বিবেচিত। তবে কেবল হত্যার হুমকি নয় ‘শত্রুতার অবসান ঘটাতে’ সালমানের কাছে পাঁচ কোটি রুপি দাবি করেছিল বিষ্ণোইয়ের গ্যাং।

Link copied!