বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো সোনার দাম নিম্নমুখী অবস্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনার কিছুটা প্রশমন, মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত নতুন তথ্য প্রকাশের অপেক্ষা এবং ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। এতে করে সোনার বাজারে স্পষ্টভাবেই মন্দাভাব দেখা যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতের আর্থিক নীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স
শুক্রবার (২৭ জুন) জিএমটি সকাল ২টা ৩৪ মিনিটে স্পট গোল্ডের দাম ০.৪ শতাংশ কমে দাঁড়ায় প্রতি আউন্স ৩,৩১৩.২৩ ডলারে। পুরো সপ্তাহজুড়ে কমেছে প্রায় ১.৭ শতাংশ। একই সময় মার্কিন ফিউচার মার্কেটে সোনার দাম দাঁড়ায় ৩,৩২৫.৭০ ডলারে, যা আগের তুলনায় ০.৭ শতাংশ কম। এর আগে টানা এক সপ্তাহ সোনার দাম পড়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় সপ্তাহেও এই ধারা অব্যাহত রইল।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল-ইরান সংঘাত সাময়িকভাবে থেমে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে চাপ কিছুটা কমেছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডসিলভার সেন্ট্রালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রায়ান ল্যান বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে স্বস্তির ইঙ্গিত পেয়ে বিনিয়োগকারীরা আপাতত ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন এবং সোনার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন।'
এ ছাড়া মার্কিন ডলারের দাম ০.২ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায়, ডলার-নির্ভর বাজারগুলোতে সোনা কেনার খরচ বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য। এর ফলে সোনার আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদাও হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্ববাজারের দৃষ্টি এখন নিবদ্ধ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয় সূচকের (Core PCE) দিকে, যা বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। রয়টার্সের জরিপ অনুসারে, এই সূচক মাসিক ভিত্তিতে ০.১ শতাংশ ও বার্ষিক ভিত্তিতে ২.৬ শতাংশ বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস।
ফেডারেল রিজার্ভের ভবিষ্যৎ সুদহার নীতিতে এই তথ্য বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। বাজারে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে ফেড ৬৩ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদের হার কমাতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত কেবল দুজন নীতিনির্ধারক জুলাইয়ের বৈঠকে সুদহার কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে কিছু বিনিয়োগকারী সোনা থেকে সরে এসে অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর দিকে ঝুঁকছেন। বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মেইয়ার জানিয়েছেন, 'বাজারে এখন এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যেখানে প্ল্যাটিনাম ও প্যালেডিয়ামের দিকে বিনিয়োগ সরছে।'
শুক্রবার স্পট সিলভার অপরিবর্তিত থেকে প্রতি আউন্সে ৩৬.৬৩ ডলারে অবস্থান করে। তবে প্ল্যাটিনামের দাম ১.৮ শতাংশ কমে ১,৩৯১.২৮ ডলারে নামে, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামের কাছাকাছি। অন্যদিকে প্যালেডিয়ামের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১,১৪৭.৭৮ ডলারে, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ।