দেহে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন বর্জ্য কিডনির মাধ্যমে বেরিয়ে যায় রোজ। কিডনি যদি এই কাজ সঠিকভাবে করতে না পারে, তাহলে বর্জ্য জমা হতে থাকে দেহে। জমা হয় বাড়তি পানিও।
এই পানি এবং বর্জ্য দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিডনির সমস্যা জটিল আকার ধারণ করলে এই পানি এবং বর্জ্য বের করার জন্য ডায়ালাইসিস পর্যন্ত লাগতে পারে। বুঝতেই পারছেন, রোজ কতটুকু পানি খাওয়া প্রয়োজন, তা জেনে রাখা কতটা জরুরি।
পানি জীবনের জন্য অপরিহার্য। পানি খাবার হজম, শরীরের ভেতরে বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান না করলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন রোগ। তবে অনেকেই আমরা জানি না, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি পান করলেও শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
একজন ব্যক্তির প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা উচিত এবং অতিরিক্ত পানি পানে শরীরের কী ক্ষতি হতে পারে।
প্রতিদিন কতটকু পানি পান করা উচিত
আপনার জন্য রোজ ঠিক কতটা পানি প্রয়োজন, তা আপনি নিজেই ঠিক করতে পারবেন। কত গ্লাস বা কত লিটার পানি খেতে হবে, তা আপনি বুঝতে পারবেন নিজের শরীরের ভাষাতেই।
প্রস্রাব করার সময় রং খেয়াল করুন। হালকা খড়ের মতো হলদে রং হলে বুঝতে হবে পানি খাওয়ার পরিমাণ ঠিক আছে। তবে মনে রাখবেন, কিছু খাবার এবং ওষুধের জন্য প্রস্রাবের রং বদলে যেতে পারে।
পর্যাপ্ত পানি খেলে আপনার রোজ ৪-৮ বার স্বাভাবিক পরিমাণে প্রস্রাব হবে, আপনি তৃষ্ণার্ত অনুভব করবেন না কিংবা অন্য সবকিছু ঠিক থাকা সত্ত্বেও আপনি ক্লান্তি অনুভব করছেন, এমনটা হবে না। এসবের অন্যথা হলে বুঝতে হবে পানি খাওয়ার পরিমাণ ঠিক নেই।
গাঢ় প্রস্রাব হলে, পরিমাণে কম হলে, ২৪ ঘণ্টায় চারবারের কম প্রস্রাব হলে, মুখ শুকিয়ে গেলে বা কারণ ছাড়াই ক্লান্তি অনুভব করলে আপনি পানিশূন্যতায় ভুগছেন বলে ধরে নিতে পারেন।
অন্যদিকে প্রস্রাব একেবারে রংহীন হলে, পরিমাণে বেশি হলে, রোজ ৮ বারের বেশি প্রস্রাব হলে বুঝতে হবে অধিক পরিমাণ পানি খাচ্ছেন আপনি।
খেয়াল রাখবেন, আবহাওয়া খুব গরম হলে, অতিরিক্ত ঘাম হলে, প্রচণ্ড শারীরিক পরিশ্রম করলে কিংবা জ্বর হলে পানির পরিমাণ খানিকটা বাড়িয়ে দিতে হয়। আবার আবহাওয়া ঠান্ডা হলে আপনি এমনিতেই পানি কম খেতে পারবেন।
কিডনিতে পাথর হওয়ার ইতিহাস থাকলে বা ঝুঁকি থাকলে অবশ্যই একটু বেশি পানি খাওয়া উচিত। অন্য কোনো কারণে পানি খাওয়া বিধিনিষেধ না থাকলে দিনে অন্তত তিন লিটার পানি খাওয়া উচিত।
ওজন অনুযায়ী পানি পানের নিয়ম হলো
প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা প্রয়োজন তা জানতে হলে আগে নিজের ওজন জানা দরকার। আপনার ওজনের ওপরই মূলত নির্ভর করবে কতটা পানি খেতে হবে। অর্থাৎ যদি আপনার ওজন ৪৫ কেজি হয়, তাহলে যতটুকু পানি খাওয়া প্রয়োজন, ওজন ৯০ কেজি হলে পাল্টে যাবে সেই পরিমাণ। নিজের ওজনকে ২ দিয়ে ভাগ করে পানি খাওয়ার পরিমাণ বের করুন।
যেমন আপনার ওজন যদি ১৭০ পাউন্ড (৭৭ কিলোগ্রাম) হয়, তাহলে আপনাকে ১৭০/২=৮৫ আউন্স (২.৫ লিটার) পানি খেতে হবে প্রতিদিন।
অতিরিক্ত পানি পানে কী ক্ষতি
পানি যতটুকু খাওয়া প্রয়োজন ততটুকু অবশ্যই খাবেন। তবে বাড়তি পানি পানের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। অতিরিক্ত পানি পান করলে ক্লান্তি এবং মাথাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
ইলেক্ট্রোলাইটগুলো পাতলা হয়ে যায় বলে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ হ্রাস বা বৃদ্ধি অনেক ক্ষতিকর। এতে দুর্বলতা, খিঁচুনি এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হয়।
অনেক সময় শরীর অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে, যা ওজন বাড়ায়।
একটি সাধারণ কিডনি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ এক কোয়ার্ট (প্রায় ১ লিটারের সমান) তরল পদার্থ ত্যাগ করতে পারে। এর বেশি পান করলে, অতিরিক্ত পানি আপনার দেহে থেকে যাবে। ফলে হাইপোন্যাট্রিমিয়া হতে পারে, যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।