একুশে পদকপ্রাপ্ত লালন-সম্রাজ্ঞী লোকসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন দীর্ঘদিন ধরেই লিভারের রোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অসুস্থতার সঙ্গে লড়ছেন। শনিবার (৫ জুলাই) তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সম্প্রতি ডায়ালাইসিস করতে গিয়ে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুরুতে সিসিইউতে নিলেই বর্তমানে কেবিনে চিকিৎসাধীন আছেন গায়িকা।
এদিকে বরেণ্য এ সংগীতশিল্পীর অসুস্থতার খবরে কপালে ভাঁজ ভক্তদের। তার স্বামী বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম গণমাধ্যমকে জানালেন সবশেষ শারীরিক অবস্থা।
তিনি বলেন, সোমবার (৬ জুলাই) ফরিদাকে সিসিইউ থেকে সাধারণ কেবিনে আনা হয়েছে। কিন্তু শারীরিক অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। এখনও থা বলতে পারছে না, হাঁটতে বা দাঁড়াতেও পারছে না বা দাঁড়াতেও পারছে না। এই মুহূর্তে আমরা চাইছি দেশের স্বনামধন্য কিডনি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা একটা মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে, যেন তার (ফরিদা) অসুস্থতার সঠিক কারণ নির্ণয় করা যায়।
অনুদানের বিষয়ে গাজী আব্দুল হাকিম বলেন, আমরা আর্থিকভাবে যথেষ্ট স্বচ্ছল। ওনার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন নেই। ওনার চিকিৎসা ব্যয় আমরা নিজেরাই বহন করাতে পারি। কিন্তু উনি তো একুশে পদক প্রাপ্ত সংগীতশিল্পী। ওনার প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব আছে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হলে স্বামী হিসেবে আমার শান্তি লাগত। আমরা আর্থিক সহায়তা চাচ্ছি না।
তিনি যোগ করেন, বর্তমানে ফরিদা গুরুতর অসুস্থ। বিদেশে নেওয়া যাবে কিনা সেটা তো আমরা বলতে পারি না। দেশে আরও অভিজ্ঞ ডাক্তার আছেন। বড় বড় হাসপাতাল আছে। কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আছেন। তারা সবাই কি বলছেন? গুরুতর অসুস্থতার কারণে যদি বিদেশে নেওয়া না যায়। দেশে তো ৫টা ভালো মেডিকেল আছে। সেখানে কোথাও চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে পারে। আমরা তো রাষ্ট্রের কাছে টাকা চাচ্ছি না। উন্নত চিকিৎসা চাই।
২০১৯ সাল থেকে কিডনি রোগে আক্রান্ত গুণী এ সংগীতশিল্পী। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে রাজধানীর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। কিডনির রোগ, ফুসফুসের রোগসহ আরও কয়েকটি জটিলতা রয়েছে।
ফরিদা পারভীন ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে নজরুলসংগীত পরিবেশন শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের দিকে দেশের গান গেয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক পান। ২০০৮ সালে তিনি জাপান সরকারের পক্ষ থেকে ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কারও পেয়েছেন। ১৯৯৩ সালে সিনেমার গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এ শিল্পী।