• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মানসিক সমস্যার পেছনে যেসব কারণ লুকিয়ে থাকে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৩, ০৫:৪০ পিএম
মানসিক সমস্যার পেছনে যেসব কারণ লুকিয়ে থাকে
শারীরিক সমস্যার মতো মনেরও অসুখ হতে পারে। ছবি : সংগৃহীত

শারীরিক অসুস্থতা যেমন স্বাভাবিক একটি বিষয়। তেমনি মনের অসুখ হতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের দেশে এখনো এই বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারেন না। আসলে মানসিক সমস্যা এমন একটি বিষয়, যেটিকে উপেক্ষা করার কোনো উপায় নেই। 

কোনো ব্যক্তি যদি শিশুকালে, কৈশোরে বা তারুণ্যে সামান্যতম মানসিক সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে থাকেন, তাহলে সেসময় থেকেই আমাদের সচেতন থাকা ও পরামর্শ নেওয়া দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকে মানসিক সমস্যাকে তার দোষ হিসাবে ধরে থাকেন। 

ভেবে নেন যে, নিজের দোষেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানিরা প্রমাণ করেছেন যে, মানসিক সমস্যা কারো ব্যক্তিগত দোষ নয়। চলুন তার কিছু উদাহরণ জেনে নিই-

জৈবিক প্রক্রিয়া
অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস মানে শরীরে ফ্রি রেডিক্যালের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। আর ফ্রি রেডিক্যাল হলো শরীরে রক্ত ​​এবং অন্যান্য তরল পদার্থের সঙ্গে প্রবাহিত হয়। এগুলো আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার প্রভাব ত্বকের বাইরের অংশেও দেখা যায় এবং ত্বক ক্লান্ত, স্ফীত দেখায়। 

এক কথায় যখন শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মধ্যে ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, তখন শরীরের ত্বক, কোষ এবং টিস্যুতে যে স্ট্রেস তৈরি হয় তাকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বলে। এর ফলে দেহের বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে যেতে পারে না। এই কারণেও বিষণ্নতার সৃষ্টি হতে পারে।

প্রদাহ থেকে বিষণ্নতা
প্রদানের কারণে বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কে প্রদাহ এবং বিষণ্নতা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। এটি সাইটোকাইনস নামের এক ধরনের প্রোটিন উৎপাদনের কারণে ঘটে থাকে। এই প্রোটিন খুব বেশি উৎপন্ন হলে তা স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর হতে পারে। এর একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বিষণ্নতা কাজ করতে পারে।

বংশগতভাবে
কিছু মানসিক অবস্থা সিজোফ্রেনিয়া এবং অ্যাংজাইটির মতো অসুখ বংশগতভাবে আসতে পারে। সিজোফ্রেনিয়া হলো, এক ধরনের জটিল মানসিক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বাস্তব চিন্তা একদম কমে যায়, বিভ্রম বা হ্যালুসিনেশন হয়, গায়েবি আওয়াজ শুনতে পায়, যা ঘটেনি বা যা নেই এমন জিনিসে বিশ্বাস করে। 

এটি মূলত সাইকোটিক ডিজঅর্ডার। এ রোগীরা মানতে চায় না যে তারা কোনো রোগে ভুগছে। এ জন্য কোনো চিকিৎসকের কাছেও তারা যেতে চায় না। বংশে যদি কারও এ ধরণের সমস্যা থেকে থাকে, সেখান থেকেও হতে পারে।

জেনেটিক মিউটেশনের কারণে
জন্মের সময় শিশুর মধ্যে মানসিক অসুস্থতা চলে আসতে পারে। গবেষণায় বলা হয়, গর্ভে বৃদ্ধির সময় যাদের জেনেটিক মিউটেশন ঘঠেছে, তাদের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া দেখা গেছে। আর এটি গর্ভে মস্তিষ্ক গঠনের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।

অনিয়ন্ত্রিত মস্তিষ্কের কার্যক্রমের জন্যে
মস্তিষ্কের কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে প্যারালাইজিং ফোবিয়া দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ উড়া বা ওপরে উঠার ভয় হতে পারে এ কারণে। মূলত মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা অংশের অতিমাত্রার প্রতিক্রিয়ার কারণে এমনটি হতে পারে। এই অংশটি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে।

উচ্চমাত্রার সেরোটনিনের ক্ষরণ
দেহে অতিমাত্রায় সেরোটনিন হরমোন ক্ষরণের ফলে সোশাল অ্যাংজাইটি দেখা দিতে পারে। সেরোটোনিন হলো, একটি মস্তিষ্কের রাসায়নিক বার্তা সরবরাহকারী হিসাবে কাজ করে এবং স্নায়ু কোষগুলোর মাঝে যোগাযোগ রক্ষা করে। গবেষকদের মতে, যাদের মস্তিষ্কে এই হরমোন বেশি নিঃসরণ ঘটায় তারা সমাজের নানা বিষয় নিয়ে অযথাই চিন্তিত হয়ে ওঠেন। এবং পরোক্ষভাবে বিষণ্নতা তৈরি করে।

মানসিক অসুস্থতা কেউ ইচ্ছা করে তৈরি করেন না বা ডেকে এনে অসুস্থ হয়ে পড়েন না। কোনো না কোনো কারণে রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। এটি তার দোষ নয়। মানসিক অসুস্থতা যাই হোক না কেন, চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিরাময় সম্ভব। এই ধরণের কোনোরকম অস্বস্থি অনুভব হলেই অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

Link copied!