আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার জন্য কয়েক মাস আগে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
রোববার (১১ মে) রাজধানীর মাতৃভাষা ইনিস্টিউটে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো সংস্কারে নাগরিক উদ্যোগ, নাগরিক কোয়ালিশন ও সংবিধান সংস্কারে নাগরিক জোটের ৭ প্রস্তাবের ওপর আলোচনার আয়োজন করা হয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের দলের পক্ষ থেকে কয়েক মাস আগে এই দাবিটা লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগকে মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার দায়ে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তখন প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি যদি আমলে নিতেন তাহলে গত ২ দিনের (আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলন) বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।”
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিএনপি শাহবাগে না যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা কেন শাহবাগে যাব। আমাদের দাবি তো বহু আগেই লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে দিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও গণমানুষের কথাগুলো বলেছিলাম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নজির আছে, যে সমস্ত ফ্যাসিবাদী দল গণহত্যার জন্য দায়ী থাকে, দল হিসেবে তাদের বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে এসে নিষিদ্ধ করা হয়। এটার উদাহরণ সারা পৃথিবীতে আছে। সুতরাং দেরিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকার আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করবে ঘোষণা দেওয়ায় তাদের স্বাগত জানাই।”
সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, বিএনপি এরকম যেসব পরামর্শ দিয়েছে— দেশ ও জনগণের পক্ষে, ভবিষ্যতে তা যেন যথাসময়ে আমলে নেওয়া হয়। সরকার ও দেশ পরিচালনায় আমরা সরকারকে সহযোগিতা করব।”
সারা দেশের মানুষ আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “তার জন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছি যেন আগামী নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করেন শিগগিরই। না হলে এ রকম বিব্রতকর পরিস্থিতি আরও সৃষ্টি হতে পারে।”
আওয়ামী লীগ ও তাদের অন্যান্য সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকার আরও একটি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন বলেন, “সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার মনে হয় এজন্য সরকারকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কিছুটা সংশোধনী আনতে হবে। কারণ এই আইনে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের কথা বলা আছে। এখানে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়টি উল্লেখ নেই।”
বিএনপি এতদিন গণতান্ত্রিক রাজনীতির কথা বলে আসছে, সেখানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ কতটা গণতান্ত্রিক তা জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, এখানে আপনাদের বুঝতে হবে যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে কি এখন পৃথিবী স্বীকৃতি দেয়? তারা একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি, মাফিয়া শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। তারা দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদী ও মাফিয়াতন্ত্রের চর্চা করেছিল দেশের মানুষের ওপর। তারা আর রাজনৈতিক দল নেই। সুতরাং তাদের রাজনৈতিক দলের কোনো তকমা দিতে চাই না।
আওয়ামী লীগের ডিএনএতে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক চর্চা নেই বলেও দাবি করেন সালাহউদ্দিন।