সারা বিশ্বে প্রায় ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষের কোনো না কোনো সময় কোমরব্যথা হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের ২৩ শতাংশ দীর্ঘস্থায়ী কোমরের ব্যথায় ভোগেন। ডা. ঈপ্সিতা চৌধুরী জানান, এই জনসংখ্যার ২৪ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষের এক বছরে কোমরব্যথার পুনরাবৃত্তি হারও দেখা গেছে। আজ জানিয়ে দেব কী কী কারণে কোমরের ব্যথা হতে পারে এবং করণীয় কী চলুন জেনে নেওয়া যাক।
মেকানিক্যাল কোমরব্যথা শরীরের মাংসপেশির ফিটনেস কমে যাওয়া, শারীরিকভাবে কর্মক্ষম না হওয়া, বয়স বেড়ে যাওয়া ও ওজনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
তবে সাধারণত দেখা যায় মেরুদণ্ডের মাংসপেশি বা লিগামেন্ট স্ট্রেচ, মচকানো বা আংশিক ছিঁড়ে যাওয়া, দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্কে সমস্যা, ডিস্ক ফেটে জেলি বের হয়ে স্নায়ু না নার্ভকে চাপ দেওয়া, এবং মেরুদন্ডের কশেরুকার অবস্থা পরিবর্তনের কারণে কোমরব্যথা হয়ে থাকে।
কারণ
অনেকে আঘাত, পোশ্চারাল সমস্যা, এক অবস্থানে বেশি সময় থাকা এবং কোমরে বিভিন্ন রোগে ভুগে কোমর ব্যথা হয়। নিচে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো।
পেশিতে টান
কোমরব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো মেরুদণ্ডের পেশিতে টান। খুব ভারী কিছু ওঠাতে গিয়ে পেশিতে টান লেগে কোমরব্যথা হতে পারে। ফিটনেসের অবনতি হলেও কোমরব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া অনেকের হাঁচি, কাশি, মোচড়ানো বা নিচু হলেই পিঠে চাপ পড়ে ও কোমরব্যথা হতে পারে। আমরা অফিসে যারা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করি, কম্পিউটার ব্যবহার করি, যাদের শরীরের ওজন কিছুটা বেশি এবং যারা অবসর সময় বেশি কাটায় তাদের এ সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
ডিস্ক সমস্যা
কোমরব্যথার একটি অন্যতম কারণ হলো ডিস্ক সমস্যা। ডিস্ক হলো আমাদের মেরুদণ্ডের কুশন। এটি মেরুদণ্ডকে যেকোনো অবস্থায় চাপ নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। ডিস্কগুলো মেরুদণ্ডে তাদের অবস্থান থেকে স্ফীত হয়ে জেলি বের হয়ে যায়। ফলে মেরুদণ্ডের স্নায়ুতে চাপ পড়তে পারে। ফলে কোমরব্যথা হতে পারে এবং সে ব্যথা এক পা বা দুই পায়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ঝিঁঝি ধরা, ভারী লাগা বা অবশ বোধ হতে পারে। কখনো কখনো এসব অবস্থায় রোগী বিছানায় পড়ে যান। এ সময় পা জ্বালাপোড়া করতে পারে, প্রস্রাব-পায়খানায় নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে। এ ছাড়া কোমর শরীরের এক দিকে বেঁকে যেতে পারে।
কাঠামোগত সমস্যা
বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিস্কগুলো শুকিয়ে যেতে থাকে, ডিস্কের স্পেস কমে যায় এবং তারা মেরুদণ্ডকে কম সুরক্ষা দিতে পারে, যাকে ডিজেনারেটিভ ডিস্ক রোগ বলে। মেরুদণ্ডের স্টেনোসিস নামক একটি অবস্থা তখন ঘটে যখন মেরুদণ্ডের কলামটি মেরুদণ্ডের জন্য খুব সংকীর্ণ হয়। মেরুদণ্ডে চাপ পড়ার ফলে সায়্যাটিক স্নায়ুর তীব্র ব্যথা এবং পিঠের নিচের দিকে ব্যথা হতে পারে। ফলে স্কোলিওসিস, মেরুদণ্ডের ক্ষয়, মেরুদণ্ডের বক্রতায় সমস্যা, ব্যথা এবং চলাফেরায় অসুবিধা হতে পারে।
বাত
মেরুদণ্ডে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলো পিঠের নিচের দিকে ব্যথা হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ ধরনের বাত। এটি বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর অল্প বয়সে বা মধ্য বয়সে অ্যানকাইলোসিং স্পন্ডিলাইটিসের ফলে পিঠের নিচের অংশে ব্যথা, সেক্রো ইলিকাক জয়েন্টে ব্যথা, চলাফেরায় অসুবিধা হতে পারে।
এ ছাড়া মেরুদণ্ডে টিউমার, ক্যানসার, কিডনিতে পাথর, পেটের এওর্টিক অ্যানিউরিজম ইত্যাদি কারণেও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
কোমরব্যথার চিকিৎসা
কোমরব্যথার কারণ নির্ণয় করা খুব বেশি জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথার সঠিক কারণ বের করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত সারানো যায়। কোমরব্যথা সারানোর কিছু উপায় রয়েছে। যেমন-
ঘরোয়া চিকিৎসা
প্রথম দিকে সর্বোচ্চ ৭ দিন ব্যথা উপশমকারী এবং বরফ বা তাপের ব্যবহার আপনার প্রয়োজন হতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে ফাংশনাল রেস্টের উপদেশ দিতে পারেন। আপনি যতটা সহ্য করতে পারেন, ততই আপনার প্রয়োজনীয় কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে হালকা কাজ করার চেষ্টা করুন।
ফিজিওথেরাপি
কোমরব্যথায় ফিজিওথেরাপি একটি বৈজ্ঞানিক এবং পার্শ্বতিক্রিয়া বিহীন চিকিৎসা। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক আপনার ব্যথায় সঠিক রোগ নির্ণয় করে, চিকিৎসা পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ম্যানুয়াল থেরাপি, ম্যানিপুলেশন থেরাপি, এক্সারসাইজ, বিভিন্ন ফিজিক্যাল এজেন্ট, টেপিং, নিডলিং, মেডিকেশনসহ আপনার ব্যথা নিরাময়, অবস্থানের উন্নতি, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও ব্যথা আবার ফিরে আসা প্রতিরোধ করতে পারেন।
কোমরব্যথা হলে যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এবং পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।