রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায় আটজন রোগীর অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। এ রোগের উপসর্গে ভুগছেন সেখানকার আরও দুই উপজেলার রোগী। অ্যানথ্রাক্স একজন ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ হতে পারে। কীভাবে ছড়ায় এ রোগ, কীভাবে বাঁচবেন তা থেকে?
যেভাবে ছড়ায়
অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মূলত ছড়ায় আক্রান্ত প্রাণীর মাধ্যমে। মাটিতেও থাকতে পারে এই জীবাণু। কেউ যদি অসুস্থ প্রাণীর মাংস খান কিংবা শ্বাসের মাধ্যমে যদি অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ঢুকে যায় তাঁর শরীরে, তাহলে তিনি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
অবশ্য অন্যান্য বায়ুবাহিত রোগের মতো মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স ছড়ায় না। ত্বকে কোনো ক্ষত থাকলে সেই ক্ষত দিয়ে ঢুকে যেতে পারে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু।
উপসর্গ জানা থাক
কারও দেহে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু কীভাবে প্রবেশ করছে, তার ওপর এর উপসর্গ নির্ভর করে। উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
মাংস খাওয়ার মাধ্যমে আক্রান্ত হয়ে থাকলে বমিভাব, বমি, রক্তবমি, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, জ্বর, গলাব্যথা বা ঘাড় ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। কিছুদিন পর রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা হতে পারে, যার তীব্রতা খুব বেশি হয়।
শ্বাসের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হলে গলাব্যথা, জ্বর, ক্লান্তি, পেশি ব্যথার মতো সাদামাটা উপসর্গ থাকে শুরুতে। তারপর হতে পারে বুকে অস্বস্তি এবং শ্বাসকষ্ট।
বমিভাব থাকতে পারে। কফের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে। ঢোঁক গিলতে গেলে ব্যথা হতে পারে। জ্বরের তীব্রতাও বাড়তে পারে। মস্তিষ্কের পর্দায় হতে পারে প্রদাহ। কমে যেতে পারে রক্তচাপ।
ত্বকের মাধ্যমে ছড়ালে ত্বকে পোকার কামড়ের মতো ফোলা ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হয়। চুলকানিও থাকে। তবে দ্রুতই তা ব্যথাহীন হয়ে পড়ে, ক্ষতস্থানের মাঝখানটা কালো হয়ে যায়। ক্ষতের আশপাশেও ফুলে যেতে পারে। জ্বরও থাকে।
প্রতিরোধের উপায়
মাংসের এমন পদ খাবেন না, যা খুব ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করা হয়নি।
ত্বকে কোনো কাটাছেঁড়া থাকলে কাঁচা মাংস নাড়াচাড়া করার সময় গ্লাভস ব্যবহার করুন।
গবাদিপশু পালনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে পশুকে নিয়মমাফিক অ্যানথ্রাক্সের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। যিনি অসুস্থ পশুর দেখাশোনা করেন, তাঁর সুরক্ষাসামগ্রী, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং যত্নের ব্যবস্থা হোক ঠিকঠাক।
আক্রান্ত পশুর মাংস খেলে কী অ্যানথ্রাক্স হতে পারে?
অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস খেয়ে পরিপাকতন্ত্রে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশে সাধারণত যেভাবে মাংস রান্না করে খাওয়া হয় তাতে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মাংসে টিকে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।
বিদেশে ‘হাফ ডান’ অবস্থায় মাংস রান্না করে খাওয়া হয়, সেই পদ্ধতিতে রান্না করলে মাংসে জীবাণু থাকার সম্ভাবনা থাকে।
কিন্তু আমাদের দেশে যেভাবে মাংস রান্না করা হয়, ওই পদ্ধতিতে রান্না করলে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু থাকার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।
তবে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস না খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে করণীয়
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে মূলত দুই ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান মিজ. ফ্লোরা।
"প্রথমত, যাদের গরু, মহিষ, ছাগলের মত গবাদি পশু রয়েছে, তারা যেন তাদের পশুকে নিয়মিত অ্যানথ্রাক্সের টীকা দেন তা নিশ্চিত করতে হবে।"
আর পশুর যদি অ্যানথ্রাক্স হয়েই যায়, সেক্ষেত্রে পশুকে দ্রুত মাটির নীচে পুঁতে ফেলা প্রয়োজন।
অসুস্থ গবাদিপশুর মাংস খাওয়া, কাটাকুটি করা বা নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকুন।
সূত্র: মায়ো ক্লিনিক, প্রথম আলো, বিবিসি বাংলা