শরীরে পানি আসা বা ফোলাভাব গুরুতর সমস্যা। এটি বিভিন্ন রোগের কারণে হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশে অতিরিক্ত তরল জমে গেলেই শরীরে ফোলাভাব হয়। এই পানি সাধারণত কোষের বাইরের ফাঁকা স্থানে জমা হয়, যা ফোলা বা ভারী অনুভূতির সৃষ্টি করে। যেসব রোগের লক্ষণ হিসেবে শরীরে পানি জমতে পারে চলুন জেনে আসি।
হৃদরোগ
হৃদপিণ্ড যদি ঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে শরীরের নিচের অংশে, বিশেষ করে পা, গোড়ালি ও পায়ের পাতায় পানি জমতে শুরু করে। ডান পাশের হৃৎপিণ্ড যদি দুর্বল হয়, তাহলে রক্ত ঠিকভাবে ফুসফুসে পাম্প করতে পারে না, ফলে শরীরের নিচের দিকে রক্ত ও তরল জমে যেতে থাকে। বাম পাশের হৃৎপিণ্ড যদি দুর্বল হয়, তাহলে ফুসফুসে পানি জমে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
কিডনি রোগ
কিডনি শরীরের অতিরিক্ত পানি ও লবণ বের করে দেয়। কিন্তু কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে এই তরল শরীরে জমতে থাকে। এর ফলে চোখের নিচে ফোলা, মুখ ফোলা ও পায়ে পানি আসতে পারে। নেফ্রোটিক সিনড্রোম নামক একটি কিডনি সমস্যা শরীরে ব্যাপকভাবে পানি জমাতে পারে।
লিভার রোগ
যকৃৎ যদি ঠিকভাবে কাজ না করে, যেমন সিরোসিস হলে, তখন শরীরে প্রোটিন উৎপাদন কমে যায়। প্রোটিনের অভাবে রক্তনালীগুলো থেকে তরল বাইরে চলে যায় এবং পেটে (অ্যাসাইটিস) ও পায়ে পানি জমে যায়। এটি একটি মারাত্মক অবস্থা।
হরমোনজনিত অসাম্য
থাইরয়েড গ্রন্থি সঠিকভাবে কাজ না করলে, বিশেষ করে হাইপোথাইরয়ডিজম হলে, শরীর ফুলে যায় এবং পানি জমে। এই অবস্থায় মুখ, চোখ, পা এমনকি জিহ্বাও ফুলে যেতে পারে।
গর্ভাবস্থা
গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এবং রক্ত প্রবাহের চাপের কারণে অনেক সময় পায়ে পানি আসে। এটি সাধারণত স্বাভাবিক, তবে প্রি-এক্ল্যামসিয়া নামক উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় অতিরিক্ত পানি জমে এবং তা বিপদজনক হতে পারে।
অ্যালবুমিনের ঘাটতি
রক্তে অ্যালবুমিন নামক প্রোটিনের মাত্রা কমে গেলে পানি রক্তনালীর বাইরের কোষে চলে যায়, ফলে শরীর ফুলে যায়। এই অবস্থাটি কিডনি, লিভার বা পুষ্টির ঘাটতির কারণে হতে পারে।
পুষ্টিহীনতা ও ভিটামিন ঘাটতি
দীর্ঘমেয়াদী অপুষ্টি, বিশেষ করে প্রোটিনের অভাব, শরীরে পানি জমার কারণ হতে পারে। কওয়াশিওরকর নামক শিশুদের অপুষ্টিজনিত রোগে পেট ফুলে যায়।
মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ওষুধ যেমন স্টেরয়েড, কিছু হরমোন ওষুধ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের কিছু ওষুধ (যেমন ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার) শরীরে পানি জমাতে পারে।
দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা
কোনো কাজের কারণে অনেকক্ষণ বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ে পানি জমতে পারে। এটি সাধারণত অস্থায়ী এবং বিশ্রাম নিলে সেরে যায়।
লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের সমস্যা
লিম্ফ নালী ঠিকভাবে তরল নিষ্কাশন করতে না পারলে পানি জমে যায়। এটি সাধারণত এক বা দুই পায়ে স্থায়ী ফোলাভাব সৃষ্টি করে এবং অনেক সময় ক্যানসার চিকিৎসার পরেও দেখা যায়।