চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে জামিন নিতে আসা আওয়ামী লীগের দুই নেতার ওপর ডিম ছুড়েছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে ও পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
আদালত সূত্র থেকে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলোচিত অপারেশন ঈগল হান্ট মামলায় শিবগঞ্জ আমলি আদালতে জামিন নিতে আসেন শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম, যুবলীগ নেতা ও সাবেক এমপি গোলাম রাব্বানীর সহচর হিসেবে পরিচিত আবু কালাম আজাদ এবং ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ। পরে উভয় পক্ষের শুনানী শেষে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাজনৈতিক সূত্রে আরও জানা যায়, জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সেতাউর রহমানের নেতৃত্বে বিকেল ৫টার দিক থেকে আদালত চত্বরে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে আসামিদের বের করে নিয়ে আসার সময় আসামিদের ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন তারা। এই সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছাত্রদল নেতাদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে চারজনকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সেতাউর রহমান বলেন, “আমার দুই ভাইকে বাড়ি থেকে মারধর করে উঠিয়ে নিয়ে আসে আব্দুস সালাম, আবুল কালাম আজাদ ও ইশতিয়াক আহমেদ। পরে তাদের শিবগঞ্জ থানার এক এসআইয়ের কাছে হস্তান্তর করে। পরে শুধু মাত্র বিএনপি করার অপরাধে আমার দুই ভাইকে হত্যা ও গুম করে জঙ্গি নাটক সাজিয়েছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। আর শেখ হাসিনাকে উৎসাহিত করার জন্য এ কাজের মূল মদদ দাতা ছিল সাবেক এমপি গোলাম রাব্বানী। আজকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আদালতে জামিন নিতে আসে। এই সময় আমার নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিল। এ সময় পুলিশ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে অমানবিকভাবে মারধর করে। আসামিদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই রাজু আহমেদের নেতৃত্বে আমার ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সাদ্দাম হোসেন বলেন, “বিগত দিনে ছাত্রদল নেতা সেতাউর রহমানের আপন দুই ভাইকে গুম ও খুন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। সেই মামলায় আজকে আসামিরা কোর্টে হাজিরা দিতে আসে। এই সময় অনাকাঙ্খিতভাবে তাদের ওপর কেউ ডিম ছুঁড়ে মারে। এতে পুলিশ ক্ষুব্ধ হয়ে লাঠিচার্জ করে এবং কয়েকজনকে আটক করে। পরে আমি এই বিষয়ে ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। তবে সেতাউর রহমান ছাত্রদল করলেও আজকের ঘটনার সঙ্গে জেলা ছাত্রদলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটি তার পারিবারিক বিষয়।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) এ এন এম ওয়াসিম ফিরোজ বলেন, “আসামিদের ওপর ডিম ছুড়ে মারলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে কারও ওপর লাঠিচার্জ করা হয়নি এবং কাউকে আটক করা হয়নি।”
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর অপারেশন ঈগল হান্টের ঘটনায় পুলিশের সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক, কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল আলম, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, রাজশাহী রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি এম খুরশিদ হোসেন, কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটের সাবেক প্রধান মুনিরুল ইসলাম ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানীসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়।