• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

ফরীদিকে ফিরে ফিরে দেখা


আরাফাত শান্ত
প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৩, ১১:৫২ এএম
ফরীদিকে ফিরে ফিরে দেখা

হুমায়ুন ফরীদিকে নিয়ে লিখতে চাই, লিখেছিও। আমার বন্ধুভাগ্য ভালো। তাই আমাকে বন্ধু একটা বই দিয়েছিল, ‘যত কথা’। তাতে শিবু কুমার শীল ওনার দারুণ সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। বলেছিলেন, “শিশিরের শব্দের মতো টুপ করে চলে যেতে চান।’ আমার ধারণা এত সুন্দর ইন্টারভিউ ঢাকায় কারও কম পড়েছি। এক কথায় অসাধারণ। যাদের সামর্থ্য আছে তারা বইটা কিনে পড়তে পারেন। আগামী প্রকাশনীর।

তো সেখানে ফরীদি অনেকগুলো গল্প বলেন। যেমন, বিটিভিতে মেইন নায়ক হিসেবে কয়েকটা নাটক করার গল্প। থিয়েটার থেকে একবার চট্টগ্রাম যাওয়া হবে। আফজাল-সুবর্ণা টিভি নাটকের বড় স্টার বলে আলাদা গাড়ি, ভিআইপি মর্যাদা। আর তাদের জন্য গাদাগাদি মাইক্রোবাস। তখনই আফজাল হোসেনকে বললেন, “নাটক লেখ আমাকে ভেবে।” নায়ক হিসেবে নাটকগুলো ভালোই চলেছিল। কিন্তু তার আর ভালো লাগছিল না। আর নায়কোচিত নাটকের রোল করেননি। হয়েছেন কালজয়ী চরিত্র অভিনেতা।

শহীদুল ইসলাম খোকনকে নিয়ে কেউ আজকাল লেখে না। হুমায়ুন ফরীদিকে সিনেমায় আনার পেছনে তার বিপুল অবদান। ফরীদি তখন হঠাৎ করে ব্যবসা করার চেষ্টা করছেন। অভিনয়ের টাকায় চলছিল না। দেখা হলো এক অফিসে খোকন সাহেবের সঙ্গে। তখন খোকন সাহেব বললেন, “আপনারা তো কমার্শিয়াল বাংলা সিনেমা সহ্য করতে পারেন না। বিলো আর্ট ভাবেন।” ফরীদি বিরক্ত হয়ে বললেন, “তা কেন? আপনি আমাকে ভেবে ভালো কারেক্টর লিখেন, আমি করবো।” তারপর আর মনে নেই। মাসখানেক পর খোকন সাহেব ফোন দিয়ে বলেন, “করবেন তো, কথা দিয়েছিলেন, আমার অফিসে আসেন বসি।” কাজটা করলেন। অনেকগুলো টাকা পেলেন হুমায়ুন ফরীদি। কিন্তু ফরীদি স্যাটিসফাইড না। পরে ওনাকে একদিন গাজীপুরে নিয়ে গেলেন খোকন সাহেব। একটা ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে উনি সিগারেট খাচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল অসংখ্য মানুষের ভিড়। খোকন বললেন, “এরা আপনার ছবি দেখে বেরিয়েছে। এক শোতে শত শত মানুষ। আপনার থিয়েটার দেখতে এত লোক আসে কখনো? মানুষকে বঞ্চিত কইরেন না। অভিনয়টা করেন সিনেমায়, ভালো না লাগলে করবেন না। টাকা তো কামাবেন।” তিনি বঞ্চিত করেননি। বাংলা সিনেমার আইকন হয়ে উঠেছেন ক্রমশ।

সৈয়দ আব্দুল হাদী তার বইতে লিখেছেন, নব্বই দশকে তিনি নতুন জীবন পেয়েছেন, হুমায়ুন ফরীদির লিপে গাওয়া ‘কে বলে আমি ভালো না’ আর ‘তোমরা কাউকে বলো না’ গান দিয়ে। সবখানে এ দুটো গান গাইতে হতো। উনি বলেছেন ঠিকঠাক মতো রয়্যালিটির টাকা ও দেশে কপিরাইট আইন মোটামুটি থাকলেই উনি অনেক টাকার মালিক হয়ে যেতেন। ‘কে বলে আমি ভালো না’ গানটা আবার গেয়েছেন রুনা লায়লার সঙ্গে।

এক ভুল বোঝাবুঝির কারণে ১৭ বছর হাদী সাহেব রুনা লায়লার সঙ্গে ডুয়েট গাইতেন না। শিল্পী সংস্থার ফান্ড তোলার প্রোগ্রাম হতো, সবাই একটা করে গান গাইবে। রুনা গান গাইতে এসে দুটো গান গাইতে চান দর্শকের কারণে। শিল্পীদের স্বার্থে গান একটা গেয়েই মুলতবি টানা হয়। পত্রিকায় খবর বের হয়, আব্দুল হাদী গান গাইতে দেননি রুনাকে। সেই থেকে ভুল বোঝাবুঝি বাড়া ছাড়া কমেনি। পরে তারা ইগো থেকে ফেরত আসেন এক সংগীত পরিচালকের মধ্যস্থতায়। ফরীদি সহ্য করতে পারতেন না শখের বসে অভিনয় করতে আসা।

ফরিদুর রেজা সাগরের বই পড়লে বোঝা যায়, ইমপ্রেস টেলিফিল্মের জায়ান্ট হওয়ার পেছনে তার অবদান। ‘খাবার দাবার’ নামের যে রেস্টুরেন্টে তারা আড্ডা দিতেন, মানুষ আসতো খালি ফরীদিকে দেখতে। তিনি মানুষের সঙ্গেও যে অভিনয় করতেন। বন্ধুরা হাসতে হাসতে শেষ। কৈশোর থেকেই তিনি বাউন্ডুলে, ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা সিনেমা দেখতেন, যাত্রা দেখতেন। দিলীপ কুমারকে দেখে তার মনে হতো, আসল ঈশ্বর তো ইনি। শেষ বয়সে যখন অনন্ত হীরার নাটক করছেন, তখনও প্রশ্ন করছেন, “তুই যে এ সিনটা রাখলি? তোর ক্যারেক্টার কি এর সঙ্গে যাচ্ছে?” নাটকও বানাতেন। হুমায়ূন আহমেদের গল্প নিয়ে নাটক বানাতে গেলে অনুমতি লাগে। হুমায়ূন আহমেদকে ফোন দিলে ফরীদিকে বলেন, “আপনার এ সবের জন্য ফোন দেওয়া লাগবে না। বানানোর পর জানাবেন খালি।” এখন হুমায়ূন আহমেদের কোনো গল্প উপন্যাস নিতে গেলে অনুমতি পাওয়া যায় না। জন্মদিনে স্মরণ করা ছাড়া আমাদের আর আছেই বা কী করার? শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এই মহান শিল্পীর জন্য।

Link copied!