• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

নিমগাছ থেকে পড়ছে মিষ্টি রস, রোগমুক্তির আশায় পান করার হিরিক


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, ০৭:৪৬ পিএম
নিমগাছ থেকে পড়ছে মিষ্টি রস, রোগমুক্তির আশায় পান করার হিরিক
নিমগাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন স্থানীয়রা। ছবি : প্রতিনিধি

নিমগাছ থেকে সাদা ফেনার সঙ্গে পড়ছে মিষ্টি রস। আর এই রস পান করতে ছুটে আসছেন পথচারী ও গ্রামবাসী। তেতো গাছে মিষ্টি রস দেখে অনেকে নিমগাছটিকে মহান সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন গাছ বলে আখ্যা দিয়েছেন। অনেক নারী-পুরুষ রোগমুক্তির আশায় গাছ থেকে পড়া রস পান করছেন। অনেকে আবার বোতলে করে আত্মীয়ের বাড়ি পাঠাচ্ছেন। এমনই ঘটনা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গড়াইপাড়া গ্রামের মৃত কালুর ছেলে নাসির আলীর বাড়িতে।

স্থানীয়রা জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে গাছ থেকে অল্প অল্প রস বের হলেও তিন দিন ধরে এর পরিমাণ বেড়েছে। গ্রামের এক ব্যক্তি রস মুখে নিয়ে মিষ্টি বলার পর খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পরে। এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে নারী-পুরুষ ও ছোট ছোট বাচ্চারা ওই বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন। অনেকে মনে করছেন এই রস পান করলে রোগ-বালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। 

এ বিষয়ে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, “গত দুই সপ্তাহ ধরে হঠাৎ ওই গাছ দিয়ে ফেনাযুক্ত রস বের হতে দেখা যায়। কেউ একজন মুখে নিয়ে মিষ্টি বলার পর সবাই এসে মুখে নিয়ে বিশ্বাস করছে। এখন অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে গাছটি দেখতে আসছেন। কেউ ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন। অনেকে পান করছেন।”

আশরাফুল ইসলাম আরও বলেন, “অনেক মানুষ বিশ্বাস রয়েছে এটি মহান সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন গাছ। তাই নিম গাছটির রস খেলে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। আর এমন বিশ্বাস থেকে রস সংগ্রহ করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাওয়াচ্ছেন। তবে গ্রামে এখন পর্যন্ত এই রস খেয়ে কেউ সুস্থ্য হয়েছেন বলে কোনো খবর পাওয়া যায়নি।”

গ্রামের মুরুব্বী মোবারক আলী বলেন, “৬৫ বছরের জীবনে কখনো এমন অদ্ভূত ব্যাপার দেখিনি। নিম গাছের পাকা ফল ছাড়া বাকি সবকিছুই তেতো। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে গত কয়েকদিন থেকে আমাদের গড়াইপাড়া গ্রামের একটি নিমগাছ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে রস বের হচ্ছে, যার স্বাদ মিষ্টি। আমি নিজেও খেয়ে দেখেছি। খেতে হুবহু খেজুরের রসের মতো লাগল।”

রস সংগ্রহ করতে গাছে প্লাস্টিকের কৌটা ঝুলিয়েছেন উৎসুক মানুষ। ছবি : প্রতিনিধি

কলেজ শিক্ষার্থী ওসমান আলী বলেন, “শুধু স্বাদই নয়, নিমগাছটি থেকে বের হওয়া রসের গন্ধও খেজুরের রসের মতো। খেলে রোগবালাই ভালো হবে এই বিশ্বাস করে অনেকেই গাছের বিভিন্ন স্থানে বোতল লাগিয়ে রেখেছে রস সংগ্রহের জন্য। এমনকি রস বের হওয়ার ধরণটিও খেজুরের গাছের মতোই ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ছে। তবে দিনের থেকে রাতে বেশি পরিমাণে রস বের হচ্ছে।”

পাশের গ্রাম থেকে রস নিতে এসেছেন আকতারা বেগম (৫০)। তিনি বলেন, “আমার ডায়াবেটিসসহ দীর্ঘদিন ধরে মাজা ও পা ব্যথার সমস্যা আছে। এই গাছ দিয়ে নাকি মিষ্টি রস বের হচ্ছে এবং তা খেলে বিভিন্ন রোগবালাই ভালো হচ্ছে। তাই রস নিতে এসেছি। আল্লাহর নাম নিয়ে ভালো নিয়তে রস খাব। আশা করি সুস্থ্য হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ “

এ বিষয়ে গাছের মালিক নাসির আলী বলেন, “কয়েকদিন আগে মৃত বাবা-মায়ের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে প্রায় ২৪ বছরের নিম গাছটি গড়াইপাড়া জামে মসজিদের নামে দান করা হয়েছে। তবে এর আগে থেকেই গাছটি দিয়ে রস বের হচ্ছে। এমনকি মসজিদ কমিটিও গাছটি বিক্রি করেছে। কখন কাটা হবে তা জানা নেই। এর মধ্যেই গাছ থেকে রস বের হওয়ার পরিমাণ বেড়েছে এবং তা সংগ্রহ করার হিড়িক পড়েছে।”

গড়াইপাড়া জামে মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. মহসীন আলী জানান, গাছটি দান পাওয়ার পর মসজিদ কমিটি ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করলে ক্রেতা ইতোমধ্যে ২ হাজার টাকা দিয়েছেন। গাছ যেদিন কাটবে সেদিন বাকি টাকাও পরিশোধ করার কথা। এর মধ্যেই গাছ নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড শুরু হয়েছে। রস সংগ্রহ করতে গাছে বোতল লাগানোর প্রতিযোগিতা চলছে।

এ বিষয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক একেএম শফিকুর রহমান বলেন, “নিমগাছটির আশপাশে মেহগনি ছাড়া আর কোনো গাছ না থাকলেও গাছ থেকে বের হওয়া রসের স্বাদ খেজুরের রসের মতো। এমন ঘটনা খুব কম দেখা গেলেও একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। কারণ গাছের নিচে থাকা মাটির গুণাগুণ ও আশেপাশের বিভিন্ন পরিবেশের কারণে নিমগাছের রসের স্বাদে পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এটি হয়ত কয়েকদিনের মধ্যেই আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে।”

Link copied!