• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

এস আলমের গুদামে পুড়ল ‘লাখ টন’ চিনি, আগুন এখনো নেভেনি


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৪, ০৮:২১ এএম
এস আলমের গুদামে পুড়ল ‘লাখ টন’ চিনি, আগুন এখনো নেভেনি

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে এস আলম গ্রুপের চিনি পরিশোধন কারখানার গুদামে গুদামে লাগা ভয়াবহ আগুনে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি পুড়ে গেছে। এই চিনি আসন্ন রমজান উপলক্ষে আমদানি করা হয়েছিল। এমনটা দাবি করেছেন কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরা।

তবে  চিনিকলের আগুন এখনো পুরোপুরি নেভেনি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কারখানার গুদামে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। তবে আগুন গুদাম থেকে ছড়ায়নি।

এর আগে, সোমবার (৪ মার্চ) বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেক এলাকায় অবস্থিত কারখানার চারটি গুদামের মধ্যে একটি আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও।

এদিকে এ ঘটনায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি।

কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেক সংলগ্ন ইছাপুর এলাকায় ১১ মেগাওয়াটের এস আলম পাওয়ার প্লান্টের পাশেই এস আলম চিনি পরিশোধন কারখানা। পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ দিয়েই চিনি কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চলে।

কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, রোজার মাস সামনে রেখে মিলের চারটি গুদামে মোট চার লাখ টন অপরিশোধিত চিনি মজুদ করা হয়েছিল। পরিশোধনের পর ওই চিনি বাজারে যাওয়ার কথা। এর মধ্যে ১ নম্বর গুদামের সব চিনি পুড়ে গেছে।

গুদামের আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে চট্টগ্রাম শহর থেকেও নদীর অপর পাড়ে কালো ধোঁয়া কুণ্ডলি পাকিয়ে আকাশে উঠতে দেখা যাচ্ছিল।

শুরুতে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্ণফুলী ইউনিটের গাড়ি ছুটে যায় আগুন নেভাতে। এরপর নগরীর নানা প্রান্ত থেকে সাইরেন বাজিয়ে ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিটের গাড়ি ছুটতে থাকে ঘটনাস্থলের দিকে।

বিকেল ৫টার দিকে প্রায় নয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে লেগে যায়। কিন্তু আগুন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছিল। ফলে ফায়ার সার্ভিসও লোকবল বাড়াতে থাকে। সন্ধ্যায় ইউনিটের সংখ্যা বেড়ে হয় ১৫টি।

এক পর্যায়ে পাশের কর্ণফুলী নদী থেকে পানি নিয়ে তারা গুদামে ছিটাতে থাকেন। আগুন যাতে বাকি তিনটি গুদাম এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ছড়িয়ে না পড়ে, সে চেষ্টাই করতে থাকেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

আগুন লাগার সময় চিনি কারখানা চালু থাকলেও পরে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। মিলের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বলেন, “পাশের স্থাপনা এবং পাওয়ার প্ল্যান্টে আগুন ছড়ায়নি। সুগার মিল ও পাওয়ার প্ল্যান্ট মিলিয়ে এক হাজারের মতো শ্রমিক-কর্মচারী আগুন লাগার সময় কাজে ছিলেন। তবে তারা সবাই নিরাপদে সরে যেতে পেরেছেন।”

সন্ধ্যার পর নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর অগ্নি নির্বাপক দল এবং সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলও যোগ দেয় আগুন নেভানোর কাজে। সবশেষ রাত সাড়ে ১০টার ১ নম্বর গুদামটির পুরো পুড়িয়ে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।

এস আলম গ্রুপের ম্যানেজার (এইচআর) মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “১ নম্বর গুদাম পুরোপুরি ভষ্মীভূত হয়ে গেছে। চারটি গুদামের প্রতিটিতে এক লাখ টন করে চার লাখ টন অপরিশোধিত চিনি ছিল। বাকি তিনটি গুদামে আগুন ছড়ায়নি। মিলেও আগুন ছড়ায়নি। পাশের বিদ্যুৎকেন্দ্রেও আগুন ছড়ায়নি। গত দুই মাসে এসব চিনি ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হয়। রমজানে পরিশোধিত হয়ে বাজারে যাওয়ার কথা ছিল।”

এস আলম গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিকভাবে তাদের ধারণা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। রাত ১২টার পরও ১ নম্বর গুদামের চিনি ধিকি ধিকি জ্বলছিল।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ হারুণ পাশা বলেন, “পাঁচতলা ভবনের সমান উঁচু ছিল গুদামটি। সেটি ভর্তি ছিল র-সুগারে (অপরিশোধিত চিনি) । আগুনে কেউ হতাহত হয়নি। আশেপাশের স্থাপনাগুলোতে আগুন ছড়ানো ঠেকানো গেছে।”

আগুন লাগার পর ওই কারখানায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা এবং চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়।

আগুনের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুনুর রহমানকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল মালেক মুত্তাকিম গণমাধ্যমকে বলেন, “কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, নগর পুলিশ, স্থানীয় ইউএনওসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে কমিটিতে।”

দুইদিন আগে নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডের কাছে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন একটি নির্মাণাধীন কোল্ড স্টোরেজে আগুন লেগেছিল।

Link copied!