প্রায় এক যুগ ধরে বিশ্বকাপের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। বিশ্বকাপের মতো বড় আসর আয়োজন করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষাধিক শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছিল দেশটি।
সেসব শ্রমিকের কঠোর পরিশ্রমে স্টেডিয়াম সংস্কার, নতুন হাইওয়ে রাস্তাসহ পুরো দেশের চেহারায় পাল্টে ফেলেছে তারা। তবে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে এই শ্রমিক ইস্যুতেই সবচেয়ে বড় বিতর্কে পড়েছে কাতার।
দেশটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, শ্রমিকদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে দেওয়া, কম বেতন দেওয়াসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন! তবে সব অভিযোগ, বিতর্ক পেছনে ফেলে মাঠে গড়িয়েছে বিশ্বকাপ।
বিশ্বকাপ উপলক্ষে বেশ কয়েকটি ফ্যান জোন তৈরি করেছে কাতার। উদ্বোধনী দিনে যেখানে একাধিক অভিবাসী শ্রমিক উপভোগ করেছেন কাতার ও ইকুয়েডরের ম্যাচ। তবে ম্যাচ উপভোগ করার পাশাপাশি তাদের কণ্ঠে ঝরেছে আক্ষেপও!
কাতারে বসবাস করা অভিবাসী শ্রমিকদের গড় বেতন মাসে ১ হাজার কাতারি রিয়াল, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৯ হাজার টাকা। ফলে এই বেতনে বিশ্বকাপের মতো আসরের ৮০০ রিয়াল বা প্রায় ৩০ হাজার উচ্চমূল্যের টিকিট কেনা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব!
পিটার নামের ৪৮ বছয় বয়সী একজন ভারতীয় নাগরিক কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে টিকিটের মূল্য নিয়ে আক্ষেপ করেন। তিনি বলেন, যেসব শ্রমিক বিশ্বকাপের অবকাঠামো নির্মাণে জড়িত ছিলেন, তাদের জন্য ফিফা ও কাতার সরকারের উচিত ১০ শতাংশ টিকিট বরাদ্দ রাখা।
যাদের জন্য বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারছে তাদের জন্য টিকিটের আলাদা কোটা রাখারও দাবি জানান তিনি।
যদিও উচ্চমূল্য হলেও কেউ কেউ টিকেট কিনেছে। অরভিন কুমার নামের এক ভারতীয় শ্রমিক যার বেতন কিনা মাসে মাত্র ৩০২ ডলার বা প্রায় ৩২ হাজার টাকা। তিনি নেদারল্যান্ডস ও ইকুয়েডর ম্যাচের টিকিট কিনেছেন ১৬৫ ডলার বা ১৭ হাজার টাকা দিয়ে।
যদিও অরবিন্দ জানেন এটা আসলেই অনেক। তাকে তার জন্য এবং ভারতে থাকা তার পরিবারের জন্যও টাকা জমাতে হয়। এ কারণেই তিনি কাতারে পড়ে আছেন। কিন্তু হাতছোঁয়া দূরত্বে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বকাপের মতো বড় আসর কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাননি তিনি।
একাধিক শ্রমিক জানিয়েছেন, তারা টিকিট কেনার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেও পরে সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। তবে তারা প্রত্যেকেই কেউ হয়তো অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বা শেষ করে ফ্যান জোনে খেলা উপভোগ করছেন। প্রতিটি খেলার ২০-৩০ মিনিট আগে ফ্যান জোনের গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে।
ফ্যান জোনে সুস্বাদু বিরিয়ানির ব্যবস্থা থাকছে তাদের জন্য। যদিও খেলা শুরুর পর অন্য দিকে আর নজর থাকে না সমর্থকদের।
আপনার মতামত লিখুন :