• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

পয়েন্ট নিমো: যেখানে হয় স্যাটেলাইটের সলিল সমাধি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২২, ০৪:৩২ পিএম
পয়েন্ট নিমো: যেখানে হয় স্যাটেলাইটের সলিল সমাধি

পৃথিবী থেকে মহাকাশে সর্বপ্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো হয় ১৯৫৭ সালে। বর্তমানে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে প্রায় ৮ হাজার ২৬১ টি স্যাটেলাইট। তার মধ্যে কার্যকর আছে প্রায় ৫০ শতাংশ। বাকি অকার্যকর স্যাটেলাইটগুলোর কী হয়? কোথায় যায় সেগুলো?

স্যাটেলাইটের মেয়াদ সাধারণত ২-১৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। আমাদের মহাকাশে সবচেয়ে বিশালাকার যে স্যাটেলাইটটি আছে, সেটি হলো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। একটি ফুটবল মাঠের সমান সেই স্টেশনটিকে ১৫ বছরের আয়ু ধরে ১৯৯৮ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়। যদিও এরপর ২০৩১ সাল পর্যন্ত এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর কাছাকাছি কক্ষপথের অকার্যকর স্যাটেলাইটগুলো ফিরে আসে পৃথিবীতে। এবং তাদের সমাধি হয় সমুদ্রে, পানির ৪ কিলোমিটার নিচে।

প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত সেই স্থানটি ভূখণ্ড থেকে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরে। পয়েন্ট নিমো খ্যাত সেই জায়গাটি পরিচিত স্যাটেলাইট সমাধি নামেও। এখানেই মেয়াদ পূর্ণ করে স্যাটেলাইট, রকেটের ভগ্নাংশ এবং স্পেস স্টেশন নিমজ্জিত হয়। চিরদিনের জন্য সেগুলো চলে যায় অন্ধকার সমুদ্রতলে। সমুদ্রের এই জায়গাটি ‘দুর্গম সমুদ্র বিন্দু’ হিসেবেও পরিচিত।

হাজার হাজার অকার্যকর মহাকাশ সরঞ্জামের মতো আমাদের ফুটবল মাঠ আকৃতির আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনও সেখানে নিমজ্জিত হবে। তবে এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল ও অনিরাপদ।

মহাকাশে কোনো স্যাটেলাইট বা মহাকাশযান অকার্যকর হয়ে যাওয়ার পর সেটি চরম বিপজ্জনক হয়ে ওঠে মহাকাশের অন্যান্য সবকিছুর জন্য। এক অর্থে সেই জঞ্জাল ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে অন্যান্য কার্যকর যন্ত্রপাতিগুলোকে। আর মহাকাশে জঞ্জালের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। মহাকাশের কোনো কোনো জিনিস পৃথিবীর কক্ষপথে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে ছুটতে পারে। ফলে খসে পড়া ছোট একটি রংয়ের টুকরাও বিপজ্জনক হতে পারে অন্যান্য মহাকাশযানের জন্য। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার মতে হাজার হাজার টুকরো জঞ্জাল ছড়িয়ে আছে মহাকাশে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বিপত্তি। আর বিপত্তি শুরু হলে তা চলতেই থাকবে। এই চেইন রিয়েকশনকে তারা কেসলার ইফেক্ট হিসেবে অভিহিত করেছেন।

এমন বিপত্তি এড়াতে স্যাটেলাইট পাঠানোর সময়েই পরিকল্পনা করতে হয় স্যাটেলাইটটির সমাধি কোথায় হবে। তিনভাবে এই কাজটি করা যায়। প্রথমত, দূরের স্যাটেলাইটগুলোকে পাঠিয়ে দেওয়া যায় ‘সমাধি কক্ষপথে’। সেগুলোকে আর পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন হয় না। সমাধি কক্ষপথে থাকলে সেগুলো অন্যান্য মহাকাশযানের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। দ্বিতীয়ত, অপেক্ষাকৃত ছোট স্যাটেলাইটগুলোকে পৃথিবীর দিকে ফিরিয়ে আনা যায়। ফিরে আসার পথে সেগুলো পুড়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। তবে অনেকসময় সেগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস না হয়ে পৃথিবীতে ভেঙে পড়ে। পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার লোকালয়ে পড়েছিল চীনের একটি মহাকাশ ল্যাবরেটরি। তাই স্যাটেলাইট ধ্বংস নিরাপদ করতে, তৃতীয় পদ্ধতি হিসেবে, কাছের কক্ষপথের স্যাটেলাইটগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ফেলা হয় পয়েন্ট নিমোতে।

জুল ভার্নের লেখা ‘টুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’ সাইন্স ফিকশনের সাবমেরিন ক্যাপ্টেনের নামে স্যাটেলাইট সমাধির নাম নিমো রাখা হয়েছে। সেই ক্যাপ্টেনের সাবমেরিনটিরও সলিল সমাধি হয়েছিল। পয়েন্ট নেমোতে যাওয়ার পর ভাঙা স্যাটেলাইটগুলো ভাঙা জাহাজের মতোই কাজ করে। সেগুলো মাছ বা জলজ প্রাণীদের আবাসস্থলে রুপান্তরিত হয়। এভাবে নতুন জীবন পেয়ে কার্যকর হয় অকার্যকর স্যাটেলাইট ও মহাকাশযানগুলো।

Link copied!