দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো কিছুক্ষণ আগে। এ দিন শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় কাটানো সেই স্কুলে যায় ফলাফল জানতে, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। ঢোল ও ড্রামসহ বিভিন্ন বাজনা নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে সবাই। শেষ বেলার এই স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে বন্ধুরা মিলে করে অনেক পরিকল্পনাও।
এবার আর স্কুলে গিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে যোগ দেয়া হচ্ছে না ঢাকার পরীক্ষার্থী মৌসুমির (ছদ্মনাম)। কারণ, বিএনপি ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমাবেশ ঘিরে অনেকের মতো তার মনেও রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
মৌসুমি এবার কাকরাইলের উইল্স লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পরিবারের সঙ্গে থাকে বিজয়নগর এলাকায়। আক্ষেপ নিয়ে সে বলে, “দুই দলের সমাবেশের মাঝের অংশে পড়েছে বিজয়নগর। কোনো ঝামেলা হলে এই এলাকাতেই হবে। তাই বাসা থেকে আজ বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে মৌসুমি আরও বলে, “আমাদের ফল প্রকাশের সময় আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করে কাল দিতে পারতো। কালকেও তো সরকারি ছুটি আছে।”
প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সমাবেশের নিয়ে কয়েক দিন ধরে রাজনৈতিক মাঠে উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। এই সমাবেশে নিয়ে কয়েকদিন ধরে নাটকও কম হয়নি। অবশেষে শুক্রবার (২৮ জুলাই) নিজেদের চাওয়া স্থানেই সমাবেশ করবে দুই দল।
দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ আর নয়াপল্টনে বিএনপি। দুটি সমাবেশস্থল মাত্র দুই কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে হবে। এ জন্য সারা দেশের মানুষের চোখ এখন ওই দুই কিলোমিটারে কী হতে যাচ্ছে সেদিকে। এতে সহিংসতার আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ। উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। বিশেষ করে ঢাকার এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায়। স্কুলে ফলাফল দেখতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেকে।
শান্তিনগরের বাসিন্দা আরশাদুল ইসলাম। তার ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। কিন্তু ফলাফল দেখতে স্কুলে যাবেন না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। বলেন, সবারই ইচ্ছা থাকে এমন দিনে একসঙ্গে আনন্দ করার। কিন্তু এবার পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এতে একটু মন খারাপ থাকলেও সবাইকে মেনে নিতে হবে। ঘরে বসেই নিজেদের মতো ফলাফল দেখে আনন্দ করবেন।
আরশাদুলের মতো নয়াপল্টনের ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসানও উদ্বিগ্ন সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে। তিনি বলেন, “বেশ কয়েকদিন ধরেই টেনশনে আছি। শুক্রবার সমাবেশের জন্য দোকান বন্ধ রাখব ঠিকই, তাও যদি সংঘাত হয়! কাছাকাছি জায়গায় সমাবেশ দেওয়াতে এই ভয়টা বেশি কাজ করছে। কী যে হবে বুঝতেসি না।”
দৈনিক বাংলা এলাকার বাসিন্দা উম্মে কুলসুম অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আজ যে সংঘাত হবে না সে শঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না। তিনি বলেন, “বেশ কয়েকদিন থেকে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত। কয়েকদিন আগেও ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ঝামেলা হয়েছে। তাই এদিনও ঝামেলা হতে পারে। তার ওপর দুইটা সমাবেশস্থল বাসার কাছে হওয়ায় বেশি ভয়ে আছি।”
যদিও কার্মদিবসে সমাবেশ না হওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে আছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। বৃহস্পতিবারের সমাবেশ একদিন পিছিয়ে নেওয়ার ঘোষণাকে ‘খুবই প্রশংসনীয়’ বলে মন্তব্য করেন কেউ কেউ। এদেরই একজন শাহিদা আক্তার। তিনি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। জানান, যে উদ্বেগ ছিল, তা কমে গেছে। অফিস না থাকায় বের হতে হবে না। তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি আনবে।
আপনার মতামত লিখুন :