• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

আম্বানি পরিবারের বিয়েতে যেতে বাংলাদেশ থেকে যা করতে হবে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৪, ০৩:৪২ পিএম
আম্বানি পরিবারের বিয়েতে যেতে বাংলাদেশ থেকে যা করতে হবে
অনন্ত আম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্টের প্রি–ওয়েডিং উদ্‌যাপন অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির ছেলে অনন্ত আম্বানির বিয়ে দিচ্ছেন অনেক ধুমধাম করে।  গত মার্চ মাসে একবার বিয়ের আগের বিয়ের অনুষ্ঠান, মানে প্রি–ওয়েডিং হয়েছে ভারতের জামনগরে। সেখানে শাহরুখ খান, সালমান খান, আমির খানের মতো বলিউড তারকারা গিয়ে নাচানাচি করেছেন। বিল গেটস বা মার্ক জাকারবার্গও বাদ যাননি। কথিত আছে, সেই পার্টিতে জাকারবার্গ বেশি মজে যাওয়ায় বিশ্বজুড়েই নাকি ফেসবুক ডাউন হয়ে গিয়েছিল! যাই হোক, শোনা কথায় বেশি বিশ্বাস করার দরকার নেই। তবে সবারই তো জীবন আছে। ফ্রি’তে নাচা–গানা কার না ভালো লাগে!

এবার নাকি আবার প্রি–ওয়েডিং অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চলেছে আম্বানি পরিবার। ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আগেরবার স্থলে হয়েছে, এবার নাকি জলে হবে। অর্থাৎ, একটি বিলাসবহুল ক্রুজ শিপে ৮০০ আমন্ত্রিত অতিথি নিয়ে ইতালি থেকে দক্ষিণ ফ্রান্সে যাবে আম্বানি পরিবার। 

এবারের অতিথির তালিকায় আগেরবারের মতোই শাহরুখ, সালমান, আমির, রণবীর, আলিয়াসহ অনেক তারকা থাকতে পারেন। চলতি মে মাসের শেষের দিকেই শুরু হতে পারে এই প্রি–ওয়েডিং অনুষ্ঠান। ডিএনএ ইন্ডিয়া, ডেকান ক্রনিকলসহ বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম এ-সংক্রান্ত খবরও প্রকাশ করেছে। কেউ একটু সন্দেহ উসকে দিয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্ন সাথে রেখেছে, কেউ রাখেনি।

নিন্দুকেরা বলতেই পারেন যে, অনন্ত আম্বানির প্রি–ওয়েডিং প্রোগ্রাম আর কত হবে? কতবার হবে? কেউ কেউ আরেকটু এগিয়ে প্রশ্ন রাখতেই পারেন যে, বিয়ের আগেই এত প্রি–ওয়েডিং অনুষ্ঠান করলে, শেষ পর্যন্ত আসল বিয়ের দিন পাত্র–পাত্রীর হৃদয়ে আর কোনো উত্তেজনা বা আগ্রহ অবশিষ্ট থাকবে কিনা! তা তো ধরুন, আম্বানিদের ব্যাপার। তারা এনার্জি ধরে রাখতে পারলে, আমাদের আর কী! বাংলাদেশিদের একমাত্র বিবেচনার বিষয় একটাই। সেটা নিয়েই এবার আলোচনা করা যাক।

দেখুন, মাস দুই আগে জামনগরের অনুষ্ঠানে সারা পৃথিবী থেকে অনেকে গিয়ে আম্বানিদের বিয়েতে নানা ঢং করেছে। কত রিলস, শর্টস, ছবি আর স্ট্যাটাস যে এই যোগদান উপলক্ষে উৎপন্ন হয়েছে, তার সঠিক হিসাব বের করাও কঠিন।

 আর বাংলাদেশে আমরা শুধু সেগুলো কেটে কেটে দুই নম্বরি করেই ফেসবুক–ইনস্টায় পোস্ট দিয়ে গেলাম। এভাবে কি চলে? গতবার এ নিয়ে আওয়াজও উঠেছিল বেশ। অনেকেই বলেছিল, এ দেশের প্রতিভাদের চিনতে পারেনি আম্বানিরা। তাই আমন্ত্রণও জানায়নি। আম্বানিদের সেই ভুল এবার ভেঙে দেওয়ার সময় এসেছে। কে জানে, হয়তো আমাদের সুযোগ দেওয়ার জন্যই আবার প্রি–ওয়েডিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে আম্বানিরা! হতেই তো পারে।

তাই এবারের সুযোগ আমাদের লুফে নেওয়া উচিত। চেষ্টা করাই যায়। কথায় আছে, ‘একবার না পারিলে দেখ শতবার’। আর অনন্ত আম্বানির আসল বিয়ে তো জুলাই মাসে। তার জন্যও প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। সব মিলিয়ে চেষ্টা করাই যায়।

এর জন্য প্রথমত আমাদের ‘সোশ্যাল মিডিয়া পাওয়ার’ প্রদর্শন করতে হবে। আমাদের এমন শক্তি ব্যাপক। আমরা অডি–বিএমডব্লিউ গাড়ির ছবি তুলেই তুলকালাম লাগিয়ে দিতে পারি। তাছাড়া এসব নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যাঁচাল করার এবং কমেন্ট–শেয়ারের মাধ্যমে অভাবনীয় ভিউ তোলার মানুষ এ দেশে অনেক। কাজ থাকুক বা না থাকুক, তারা এসব কনটেন্টের পাশে থাকে সব সময়। আর সেটিই আমাদের মূল শক্তি।

সুতরাং, সোশ্যাল মিডিয়াই আমাদের জীবন, আমাদের মূল চালিকাশক্তি। আর সেটিই হবে আম্বানির বিয়েতে আমাদের টিকিট কাটার উপায়। এর জন্য যত ফেসবুকার, টিকটকার—যা আছে, সবাইকে কাজে লাগাতে। এসব সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সাররা জানাবেন, কীভাবে আম্বানিদের বিয়ের আয়োজন তাদের জীবন, জীবনবোধ এবং জীবনের দর্শনকে পাল্টে দিয়েছে! এমনকি অবিবাহিত ইনফ্লুয়েন্সাররা আম্বানিদের মতো নকল করে ক্রুজ শিপের বদলে নৌকা ভাড়া করে বুড়িগঙ্গা থেকে বিয়ের যাত্রাও শুরু করতে পারেন। খারাপ হবে না কিন্তু।

এভাবেই আম্বানিদের নজর কাড়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যারা খাবার নিয়ে কাজ করেন, তারা হয়তো ছবি বা ভিডিওতে দেখা আম্বানিদের দেওয়া লাড্ডু কী দিয়ে বানানো, স্বাদ কেমন হতে পারে, খাওয়ার পর মুখ আর ধোয়া যাবে কি যাবে না—সেসব নিয়ে কনটেন্ট বানাতে পারেন। এতে আম্বানিদের ক্রুজ শিপে জায়গা পাওয়া যেতেই পারে। অন্তত আমন্ত্রিত হওয়ার দাবি যে জোরালো হবে, সেটি নিশ্চিত।

আমাদের দেশে অনেক টিকটক শিল্পী আছেন, যারা কভার গেয়ে বা গানের কথায় ঠোঁট মিলিয়েই চলে গেছেন মান্না দে, কিশোর কুমার বা লতা মুঙ্গেশকরের লেভেলে। তাঁদের ঠাঁটবাট দেখলে সেটাই মনে হয়। ওদিকে মনে রাখতে হবে, আম্বানিরাও কিন্তু জামনগরে এসবই করেছে। অন্যের গানে ঠোঁট মিলিয়েছে আর ধুমধাম নেচেছে। সুতরাং এই প্রতিভার কদর তাঁরা করতে জানে।

 এই বিষয়টিকেই তুরুপের তাস বানাতে হবে। তাহলেই দৃষ্টি আকর্ষণ করা সহজ হবে। এর বাইরে এমন গায়কও আমাদের আছে, যাঁর কাছে ভাষা, সুর বা লয় কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। এসবের যেকোনোটির ১২টা তিনি বাজিয়ে দিতে পারেন যেকোনো মুহূর্তে। প্রয়োজনে অস্কারজয়ী এ আর রহমানের গানের তালে তিনি কণ্ঠ দেবেন ও নাচবেন। ওহ্, নাচার জন্য অবশ্য আরও একজন আছেন। সেখানে আবার নাচের সাথে ডিগবাজি ফ্রি!

দেখুন, ডিগবাজি যেহেতু আমাদের লোকজন যখন–তখন দিতেই পারে, সেহেতু আমরা সাগর–নদীতে নিজেদের চুবাতেও পারব। এভাবে নিত্য–নতুন ভাইরাল বস্তুও আবিষ্কার হয়ে যেতে পারে। এগুলো কিন্তু আম্বানিদের আমরা বিনামূল্যেও দিয়ে দিতে পারি। এখন প্রয়োজন শুধু আমন্ত্রণ।

আশা করি, এভাবে আবেদন–নিবেদনের পর আম্বানিরা আমাদের প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে না কোনোভাবেই। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন আম্বানিদের ক্রুজ শিপ মাতিয়ে তুলবে এ দেশেরই কোনো ‘তারকা’। ওইদিন নিশ্চিত সূর্যও ঢেকে যাবে সেই তারার ছায়ায়। তখন ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হবে আম্বানিদের ক্রুজ শিপকে। তখনই বিশ্ববাসী বুঝবে আমাদের ‘প্রতিভা’!

 

Link copied!