বই, অবসরের বন্ধু। জ্ঞানের মস্ত বড় ভান্ডার। যত বই পড়বেন তত বেশি জানতে পারবেন। আর তত বেশি জ্ঞানী হয়ে উঠবেন। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে পড়ন্ত বিকেলে চেয়ারে গা হেলিয়ে বই পড়ার আনন্দটাই যেন অন্যরকম অনুভূতি দেয়। আবার রাতের ঘুমানোর আগে বই না পড়লে যেন অস্থিরতা কাজ করে মনের ভেতরে। এমন অনেকেরই বই পড়া নিয়ে অনেক ধরণের অভ্যাস রয়েছে। তবে বই পড়ায় কোনও কম্প্রোমাইজ নেই। প্রতিদিন বইয়ের সঙ্গে নিরিবিলি কিছু সময় কাটাতেই হবে। প্রিয় এই বইগুলো পড়লেই হবে না। রাখতে হবে যত্নেও।
বইয়ে ধুলো জমে, ছিঁড়ে যায় কিংবা পোকা কেটে ফেলে। শখের বইগুলো পড়তে না পারলে মন খারাপও হয়ে যায়। তাই পছন্দের বইগুলো যত্নে রাখার উপায় জানুন।
- বইপড়ুয়াদের অনেকেই রয়েছেন যারা পড়া শেষে বই এদিক ওদিক ছড়িয়ে রাখেন। তা না করে বইগুলো গুছিয়ে রাখুন। এরজন্য় ঘরের একটি জায়গায় বুকশেলফ রাখুন। একাডেমিক বা অফিসিয়াল বই হোক কিংবা উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, রান্নার বই বা ছবির বই সবগুলোই সাজিয়ে রাখতে পারবেন।
- বই গুছিয়ে রাখার সময় লেখকের নামানুসারেও রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে শব্দের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী রাখুন। বইয়ে লেবেল ও ট্যাগ লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে যে বই পড়তে চাচ্ছেন না খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।
- শেলফ থেকে প্রিয় বইটি তাড়াহুড়ো করে নামাবেন না। পুরো বই ধরে নামান। শুধু ওপরের অংশ ধরে টেনে নামাতে গেলেই বই নষ্ট হয়ে যাবে।
- বই সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশও দরকার। সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে কিংবা স্যাঁতেস্যাঁতে জায়গায় বই রাখবেন না। কারণ কাগজ খুব দ্রুত পানি শুষে নেয়। যা থেকে বই দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
- বুকশেলফে কাঁচের দরজা থাকে। বই ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেলেও পর্যাপ্ত বাতাসের অভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই মাঝে মধ্যেই বইগুলো কিছু সময়ের জন্য রোদে শুকিয়ে নিন।
- বই কেনার পরই এর কভারে মলাট লাগিয়ে নিন। এতে বই টেকসই হবে। বইয়ের প্রচ্ছদ যেন দেখা যায় সেজন্য ট্রান্সপারেন্ট পেপার ব্যবহার করতে পারেন।
- বই পড়ার মাঝে বিরতি দিয়ে পড়া হয়। কোন পৃষ্ঠা পড়ছেন তা সহজে বের করে নিতে ভাঁজ করে রাখেন। অনেকে পেপার ক্লিপও ব্যবহার করেন। এসব কারণেও বই নষ্ট হয়। পেপার ক্লিপে জং ধরে পৃষ্ঠা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার ভাঁজ করলে পৃষ্ঠা ছিড়ে যেতে পারে। তাই কাগজের বুকমার্ক ব্যবহার করুন।
- বইকে পোকামাকড় থেকে সুরক্ষা দিতে হবে। বইয়ে জমে থাকা ধুলো নিয়মিত পরিষ্কার করুন। বইয়ের ভিতর নিমপাতা, তেজপাতা বা ল্যাভেন্ডার ফুল রাখা যেতে পারে। আবার বইয়ের তাকে কর্পূর বা ন্যাপথলিন দিয়ে রাখুন। এগুলোর গন্ধে বই পোকা থেকে বাঁচবে।
- বইয়ের ভেতর ফুল বা পাতা রাখলেও পৃষ্ঠার রঙ নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফুল বা পাতা সংরক্ষণ করতে আলাদা ডায়েরি ব্যবহার করুন।

- বই পড়ার সময় কিছু খাবেন না। এতে খাবার বইয়ের পাতায় লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা থেকে বইয়ে পোকার আক্রমণ হতে পারে। চা বা কফির সঙ্গে বই পড়ার অভ্যাস থাকলে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
- বই ভাঁজ করে পরবেন না। অবশ্যই দুই হাত দিয়ে ধরেই পড়ুন। হাত ব্যথা হলে কুশন বা বালিশের উপর রেখেও পড়তে পারেন।
- যে বইগুলো অনেকদিন পড়া হচ্ছে না সেগুলো কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করবেন। বইগুলোকে বের করে মুছে রাখুন। রোদে দিন। একইভাবে বই দীর্ঘদিন রাখলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- কাউকে বই দেওয়ার সময় তার নাম ও সময় লিখে রাখুন। বই ফেরত না দিলে অনেক সময় আপনি ভুলে যেতে পারেন। এভাবে প্রিয় বইটি হারিয়ে যেতে পারে। তাই বই কার কাছে আছে তা সহজেই মনে করতে পারবেন।
- কোনও কারণে বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে যেতেই পারে। ভুলেও এতে আঠা ব্যবহার করবেন না। স্কচটেপ দিয়ে বইয়ের পৃষ্ঠা বা মলাট ঠিক করার চেষ্টা করেন। সেটাও উচিত নয়। বরং দক্ষ কাউকে দিয়ে বইয়ের বাইন্ডিং করিয়ে নিন।