• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সুখী হতে চাই মস্তিষ্কের সুস্থতা


ইশতিয়াক হোসেন
প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২, ০১:১৯ পিএম
সুখী হতে চাই মস্তিষ্কের সুস্থতা

মানব মস্তিষ্ক অত্যন্ত জটিল। মস্তিষ্কের বিভিন্ন ভাগের বিভিন্ন কার্য পদ্ধতি রয়েছে। সেই কার্য পদ্ধতি সম্পর্কে গবেষকদের মোটামুটি ধারনা হলেও এর অধিকাংশই এখনও রহস্য। এই রহস্য উদঘাটনে গবেষকদের উত্সাহ উদ্দীপনার শেষ নেই। হাত-পা নাড়াচাড়া, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ ক্ষমতা পরিচালনাসহ আরও কত কাজ ২৪ ঘণ্টাই করে যায় মস্তিষ্ক। এর মধ্যে আবারও রয়েছে মস্তিষ্কের গভীর রহস্যে আবৃত্য ধূসর এলাকা। দুশ্চিন্তা, হতাশা, ব্যর্থতা, বিফলতার কষাঘাত ইত্যাদি সুস্থ মস্তিষ্কের অন্তরায়। অত্যন্ত  প্রয়োজনীয় এই মস্তিষ্ক নাড়াচাড়া করতে গিয়ে গবেষকরা একটি সুস্থ ও প্রানবন্ত মস্তিষ্ক পাওয়ার কিছু কৌশল বের করেছেন। গবেষকদের মতানুসারে, সুখী হতে প্রয়োজন মস্তিষ্কের সঠিক ব্যবহার। আর এর জন্য যা করতে হবে-

  • শেষ কবে সময় করে পার্কে বা খোলামেলা স্থানে বেড়াতে গিয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ অথবা অবসরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুবে থেকে সময় পার হয়ে যায়। এবার ব্যস্ততা হতে একটু সময় বের করে ঘুরে আসুন প্রকৃতির মাঝ থেকে। একাকী অথবা পরিবার বন্ধুবান্ধবকে সঙ্গে নিতে পারেন। গবেষণায় দেখা যায়, গাছ পালা, পশুপাখি তথা প্রকৃতির প্রতি আগ্রহ সুস্থ মস্তিষ্ক তৈরিতে সহায়ক। কাজেই আর অপেক্ষা না করে সাপ্তাহিক ছুটিতে ঘুরে আসুন আশপাশের কোনও পার্ক থেকে।
  • জীবনের প্রতিটি ঘটনা হতে কিছু না কিছু শিক্ষা পাওয়া যায়। ক্ষেত্র বিশেষে কেউ ব্যর্থ হলে হাল ছেড়ে দেয়। আবার কেউ ব্যর্থতার কারণ বের করার চেষ্টা করে এবং পুনরায় উন্নতির পথে এগিয়ে যায়। জীবনের নানা অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা লাভ ও ইতিবাচক দিক আলাদা করতে পারা একটি সুস্থ মস্তিষ্কের বৈশিষ্ট্য।
  • ‍‍`সুখী মানুষ‍‍` এর সামাজিক গদবাধা ধারনা প্রকৃতপক্ষে সুখী হওয়ার পথে বড় বাধা। ভালো স্কুল কলেজে পড়ালেখা, ভালো চাকরি, উন্নত জীবন ইত্যাদির পেছনে দৌড়ে জীবনের আয়ু শেষ। আবার এগুলো অর্জন করলেই একজন সুখী হবে এমনটাও সব সময় সত্যি নয়। এখন চিন্তা করুন সবার পক্ষে কি এসব কাঙ্ক্ষিত  সুযোগ সুবিধা পাওয়া স্বাভাবিক? অনেক অপ্রাপ্তির গ্লানি জীবনকে বিষিয়ে তুলতে পারে। তবে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইতিবাচক ভবিষ্যত গড়ে তোলা এবং নিজের সুখ সাচ্ছন্দ্য ও প্রকৃত কল্যাণ অনুধাবনের সক্ষমতা সুস্থ মস্তিষ্ক তথা প্রানবন্ত জীবনের নিয়ামক।
  • জীবনে প্রাপ্তি বা অর্জন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা অনেকের পক্ষে দুরুহ হলেও এই মন মানসিকতা প্রাণোচ্ছলতার অন্যতম সহায়ক। ছোট ছোট অর্জনগুলোর দিকে নজর দিন, উপলব্ধি করুন। আবার পছন্দের সিনেমা, টিভি সিরিয়াল দেখে আনন্দ পাওয়া, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানো, উত্ফুল্ল হাস্যোজ্জ্বল আনন্দদায়ক কোনও কাজে থাকা এবং ইতিবাচক ও যত্নশীল সঙ্গে থাকার স্পৃহা মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে।
  • একতাবদ্ধ থাকার ইচ্ছা ও সংগবদ্ধ ক্রিয়াকলাপ প্রানোচ্ছ্বল থাকার সহায়ক। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়া অথবা প্রিয় মানুষ বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর ইচ্ছা মস্তিষ্ক সচল রাখে।
  • নিজের কল্যানের জন্য সচেষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে আসা মানব ধর্ম। দুঃখ, বেদনা, আনন্দ ফুর্তি ভাগ করে নেওয়া ও অপরের প্রতি সৌহার্দ্য প্রকাশ সমাজবদ্ধ জীবনের জন্য অপরিহার্য।  গবেষণায় দেখা যায়, উদারতা ও সহানুভুতিশীলতা চর্চা একটি সুস্থ মস্তিষ্কের বৈশিষ্ট্য।
  • গবেষনায় দেখা যায়, নিয়মিত শরীর চর্চা শুধু দেহ ভালো রাখে না সেই সঙ্গে মগজের সুস্বাস্থ্যও নিশ্চিত করে। চিকিতসকদের মতামত, শুয়ে বসে থাকা দেহ মনের জন্য নানা প্রকার জটিলতা তৈরি করে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অস্থি পেশি ক্ষয়রোগসহ শারীরিক-মানসিকব্যাধি মুক্ত জীবন সবার কাম্য।  নিয়মিত শরীর চর্চা রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে। শরীরের সর্বত্র পুষ্টি প্রবাহ নিশ্চিত করে। বাড়িতেই নানা রকম খোলা হাতের হালকা ব্যায়াম করুন। দিনে ১০ থেকে ১২ হাজার কদম হাটা সুস্থ স্বাভাবিক দেহ ও মনের জন্য অপরিহার্য।

সুখী সফল জীবনের জন্য চাই সুস্থ সবল মস্তিষ্ক। আর সুস্থ সবল মস্তিষ্কের জন্য চাই স্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থা। ‍‍কী পেলাম আর কী পেলাম না- এই জটিল সমীকরণে মগজে অনেক জঞ্জাল হয়ে গেলে সুচিন্তা সুবুদ্ধির অপমৃত্যু হবে। কাজেই সামাজিকতা, শরীর চর্চার সঙ্গে পুষ্টিকর খাবার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ধাঁধার খেলা, পড়াশোনা এসব নিয়ে সুস্থ সবল কর্মক্ষম প্রানোচ্ছ্বল মস্তিষ্ক গঠনে লেগে পরুন।

Link copied!